চার জনের মৃত্যু, ঘণ্টায় গড়ে ৫৭ জন আক্রান্ত হওয়ার নতুন রেকর্ড

17

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ডেঙ্গু আতঙ্কে সারাদেশ। আক্রান্তের রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি দেশের সব বিভাগেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬০ জেলায়। ডেঙ্গু আক্রান্তের নতুন রেকর্ড গড়েছে মঙ্গলবার। এদিন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে নতুন ১৩৩৫ ডেঙ্গু রোগী, যা ঘণ্টায় গড়ে ৫৭ জন। আর সরকারী হিসাবে ডেঙ্গুতে মৃত্যু সংখ্যা ৮ জন। তবে এই সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়ে গেছে বলে বেসরকারী সূত্রসমূহ দাবি করেছে। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই ও বরিশালে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন ও পুরনো রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিটি হাসপাতাল। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের স্বল্পদিনের মধ্যেই রোগীর জটিল অবস্থায় যাওয়া এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে চিকিৎসকদের। ডেঙ্গু ও বন্যাজনিত কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। পৃথক ডেঙ্গু রোগ সংক্রান্ত ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ডেঙ্গু প্রতিরোধে দলীয় নানা কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনসমূহ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি এ্যান্ড অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র মঙ্গলবার জানায়, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত লাফিয়ে লাফিয়ে মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৬৮ জনে। শুধু জলাই মাসেই এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ১৮২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ডেঙ্গু রোগী ঢাকা মেডিক্যালে ২২১, মিডফোর্ট হাসপাতালে ১০৫, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৪৮, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৬১, হলি ফ্যামিলি এ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৪২, বারডেম হাসপাতালে ১৭, বিএসএমএমইউ’তে ২৬, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ৩৩, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৬৩, পিলখানার বিজিবি হাসপাতালে ২ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৯০ নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।
এদিকে, ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগে ১০৪, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫, খুলনা বিভাগে ৬৫, রংপুরে ২০, রাজশাহীতে বিভাগে ৫৬, বরিশালে ৬, সিলেটে ৫৫ ও ময়মনসিংহে ৯ নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে মঙ্গলবার। এভাবে ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা, রাজশাহী বিভাগের ৭ জেলা, রংপুর বিভাগের ৮ জেলা, বরিশালের ৫ জেলা, সিলেট বিভাগের ৪ জেলা এবং ময়মনসিংহের ২ জেলায় শনাক্ত হয়েছে ডেঙ্গু রোগী।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল : চলমান ডেঙ্গু রোগ সংক্রান্ত জনভোগান্তি নিরসনে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চলমান কর্মকা- তদারকি করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি তার নিজ দফতরে ডেঙ্গু রোগ সংক্রান্ত ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ নামক একটি আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করে দিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার ফি সংক্রান্ত সরকারী নির্দেশনার কোন ধরনের লঙ্ঘন হলে তার অভিযোগ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে জনভোগান্তি লাঘবে ‘মিনিস্টার মনিটরিং সেল’ এ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ডেঙ্গু সংক্রান্ত যেকোন অনিয়মে দ্রুত অভিযোগ জানাতে যোগাযোগ করুন- হটলাইন: ০১৩১৪-৭৬৬০৬৯/ ০১৩১৪-৭৬৬০৭০, ০২-৪৭১২০৫৫৬/০২-৪৭১২০৫৫৭; ই-মেইল: আর সোমবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডেঙ্গু ও বন্যাজনিত কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার পাঠানো মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ মাইদুল ইসলাম প্রধান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে, সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি নানা বেসরকারী উদ্যোগে চলছে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম। সেই ধারাবাহিকতায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবার কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান সম্মিলিত জোট। আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর দনিয়া কলেজ মাঠ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক পদযাত্রা করবে জোট। পদযাত্রায় জোট নেতৃবৃন্দসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা অংশগ্রহণ করবেন। মঙ্গলবার জোটের পক্ষ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
দেশের ৬০ জেলায় ডেঙ্গু রোগী ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে রয়েছে দেশবাসী। একদিনের ব্যবধানে ১০টি নতুন জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সোমবার শনাক্ত হয়েছিল ৫০ জেলায়। ডেঙ্গু সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা না থাকায় সাধারণ জ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গুর পার্থক্য অনেকে বুঝে উঠতে পারছে না। ফলে আক্রান্ত হওয়ার পরও বাড়িতে সময় ব্যয় করে জটিল করে তুলছে রোগীর অবস্থা।
ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে দিনে ৫০ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয় আজ পর্যন্ত ৪৭ জন। এদের মধ্যে মঙ্গলবার সকালে দুইজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে গত দু’দিনে।
নীলফামারীতে তিন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা চলছে। এদের মধ্যে নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে ২ জন ও সৈয়দপুর হাসপাতালে ১ জন। মঙ্গলবার সকালে সৈয়দপুর উপজেলায় ১০০ শয্যা হাসপাতালে আসাদ আলী (২৯) ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। সে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচন্ডি গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে।