কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলমান বন্যার কারণে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পূর্বঘোষিত বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আপাতত কার্যকর করছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী সোমবার (২৯ জুলাই) দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলে একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গত ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ‘বিদ্রোহী’ ও তাদের মদতদাতাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহীদের প্রথমে সরাসরি সাময়িক বহিষ্কার করে এরপর কেন তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ অনুযায়ী দুই শতাধিক নেতাকে এ শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২৮ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এরইমধ্যে আবার আরেক দফা তদন্তও শুরু হয়। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন (জয়ী ও পরাজিত) এবং যারা সরাসরি সমর্থন করেছিলেন, এমন নেতাদের বিষয়ে আগেও একদফা যাচাই-বাছাই করা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় চিকিৎসাজনিত কারণে সিঙ্গাপুরে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। সে কারণে নতুন করে আবার যাচাই-বাছাই চলছে। অবশ্য, আগেই বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের রিপোর্টে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থনকারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দলের কাছে তুলে ধরেছিলেন।
প্রথম দফায় চলতি বছরের ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় বিদ্রোহী ও তাদের ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর গত ৫ এপ্রিল এসব নেতাকে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় দল। সর্বশেষ আসে কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু সারাদেশ বন্যাকবলিত থাকায় নেতাকর্মীদের বন্যার্তদের সাহায্যার্থে কাজ করতে বলা হয়েছে। এমন সময়ে বহিষ্কারের চিঠি পেলে এ কাজে সমন্বয়হীনতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। দলের তৃণমূলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। তাই সব বিবেচনায় নিয়ে আপাতত শাস্তি কার্যকরের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সম্পাদক এবং সম্পাদকমণ্ডলীর দু’জন সদস্য বলেন, আপাতত শাস্তি কার্যকর হচ্ছে না। প্রথমত, সারাদেশে বন্যা চলছে। দ্বিতীয়ত, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নেই। এছাড়া, আবারও নতুন করে কিছু নাম যাচাই-বাছাই হচ্ছে। তারা বলেন, ২৯ জুলাই সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনা হবে। ওই বৈঠকেই পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
প্রসঙ্গত, পাঁচ ধাপে শেষ হওয়া ৪৭৩টি উপজেলার নির্বাচনে ১৪৯টিতে চেয়ারম্যান পদে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১৪০ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাকে দলের বিদ্রোহী হিসেবে ধরে নেয় দলটি।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮ বিভাগে আওয়ামী লীগের অভিযুক্ত দুই শতাধিক নেতার মধ্যে রয়েছেন—খুলনায় ৪১ জন, রাজশাহীতে ২০ জন, সিলেটে ৩২ জন, রংপুরে ২৬ জন, বরিশালে ১৭ জন, ময়মনসিংহে ২০ জন, ঢাকায় ৪৫ জন ও চট্টগ্রামে ১৭ জনেরও বেশি।
এদিকে, বিদ্রোহীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার অপরাধে ৬২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, ৮ বিভাগে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।