জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা :
জগন্নাথপুরে দিনেদিনে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। টানা বৃষ্টিপাত যেন থামতে চাইছে না। প্রতি দিন হু হু করে বাড়ছে বন্যার পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
১৫ জুলাই সোমবার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে দেখা যায়, উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের কয়েকটি বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বাড়িঘরে পানি উঠে গিয়ে শতশত পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় জীবন-যাপন করছেন।
উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল তলিয়ে এবার জগন্নাথপুর পৌর শহরের বিভিন্ন গ্রামের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। এতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বেচে থাকার জীবন যুদ্ধে সাহসের সাথে লড়াই করে যাচ্ছেন লড়াকু লোকজন। তবুও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না। দিন-রাতে ধারাবাহিক টানা বৃষ্টিপাত চলছে। সারা দিনের মধ্যে একবারও সূর্য্যরে দেখা মেলেনি। আকাশকে কালো মেঘের ছায়ায় ঢেকে রেখেছে। যে কারণে বড় ধরণের প্লাবনের আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ সহ সর্বস্তরের জনতা।
পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রোববার রাত ৩টায় নতুন করে ধলাই নদীর কমলগঞ্জের রামপাশায় আরও একটি ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ধলাই নদীতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে মোট ৪টি। এসব ভাঙ্গনে অন্তত ১১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাক্রান্ত প্রায় ৮শত পরিবার। অন্যদিকে ভারি বর্ষণে লাউয়াছড়া বনে পাহাড় ধসে গাছ পড়ে এক ঘন্টা বন্ধ ছিল সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ। ঢলের পানিতে নিমজ্জ্বিত থাকায় কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর-কুলাউড়া ও শমশেরনগর-তারাপাশা সড়ক যোগাযোগে বিঘœ ঘটে। ফলে এ সতল সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চাকুরীজীবীরা দুর্ভোগে পড়েন। উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টিতে কমলগঞ্জের ধলাই নদী ছাড়াও লাঘাটা ও ক্ষিরনী নদীর পানি বেড়ে গত তিন দিনে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যার্তরা। সরকারীভাবে এখনো অনেব এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, সোমবার বিকেলে ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রবিবার বিকেলে আদমপুর ইউনিয়নের হকতিয়ারখোলা ও রহিমপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে ২টি নতুন ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। উপজেলার নতুন-নতুন এলাক প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ধলাই নদীর পানি বেড়ে প্রতিরক্ষা বাঁধে নতুন ও পুরাতন ভাঙ্গন দিয়ে কমলগঞ্জের পৌরসভা, রহিমপুর, আদমপুর, পতনঊষার, মুন্সীবাজার ও শমশেরনগর, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ১১৫ টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে উজান থেকে আসা পাহাড়ীঢলে কমলগঞ্জের ঘোড়ামারা, কেওয়ালীঘাট, রুপসপুর, রাধাগোবিন্দপুর, মহেশপুর, শ্রীরামপুর, দক্ষিণ ধুপাটিলা, পালিতকোনা, রসুলপুর, বনবিষ্ণুপুর, গোপীনগর, রশিদপুর, নোয়াগাঁও, চন্দ্রপুর, কোনাগাঁও, বনবিষ্ণুুপুর, রায়নগর, রামপুর, রামচন্দ্রপুর, হরিশ্মরন, জালালপুর, জগন্নাথপুর, প্রতাপী, কান্দিগাঁও, রামপাশা, কুমড়াকাপন, রামপুর, বিষ্ণুপুর. নারায়ণপুর, কান্দিগাঁও, গন্ডামাা, হকতিয়ারখোলা, কেওয়ালীঘাট, জালালপুর, বন্দরগাঁও, সতিঝিরগাঁও, মারাজানের পার, রাধানগর, হরিপুর প্রভৃতি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত। ভাঙছে গ্রামীণ সড়ক।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য ইতিমধ্যে ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে সোমবার কমলগঞ্জ পৌর এলাকা ও রহিমপুরে বন্যাক্রান্তদের মাঝে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমলগঞ্জে ১২ মেট্রিক টন চাল ও ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ইতিমধ্যে বেশকিছু শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বন্যা কবলিত গ্রামহগুলোতে।
শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটায় কমলগঞ্জ পৌরসভার রামপাশা এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে যায়। ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড প্লাবিত হয়। বিকেলে রহিমপুর ইউনিয়নের প্রতাপী এলাকায় পুরাতন ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়। এদিকে বন্যার খবর শুনে সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ সদস্য, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মামুনুর রশীদ, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক, পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এদিকে কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ কমলগঞ্জ পৌর এলাকা ও রহিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল নিজ ইউনিয়নের বন্যাক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। অপরদিকে বৃষ্টি হলে আরো কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ভাঙ্গনের আশংকা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : কানাইঘাট উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও নি¤œাঞ্চলে পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে। এখনো হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। গতকাল সোমবার কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি ১১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সরকারী ভাবে বন্যা দুর্গতদের জন্য এ পর্যন্ত ১৪ মেট্রিটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শতাধিক প্যাকেট শুকনো খাবার বন্যাদুর্গতদের মাঝে প্রশসানের উদ্যোগে বিতরণ করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্ত জানিয়েছেন। টানা বারি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হলেও গত ২ দিনে উঁচু অঞ্চল থেকে কিছুটা পানি কমলেও হাওর এলাকায় পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে। বন্যার পানির সাথে ব্যাপক কাদা মাটি থাকায় বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে করে শত শত মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক বাড়ী ঘর এখনো বন্যার পানিতে আক্রান্ত, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে। ব্যাপক আউস ধানের মাঠ ও আমন ধানের বীজতলা তলিয়ে যাওয়া ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। কৃষি অফিস সূত্রে সাড়ে ৩ শত বিঘা আউস ধানের মাঠ অনেক বীজতলা তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেলেও স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন ৮ শত’র উপর বিঘা আউস ধান ও কয়েক’শ আমন ধানের বীজতলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যা দুর্গতদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল মুমিন চৌধুরী জানিয়েছেন কানাইঘাট বন্যা দুর্গত মানুষের মাঝে আরো ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ করার জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথে কথা বলেছেন এবং কানাইঘাটের সার্বিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করে ব্যাপারে সরকারী ভাবে উদ্যোগ গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি গত সোমবার কানাইঘাট পৌরসভা সহ অনেক এলাকা পরিদর্শন করে বন্যা দুর্গতদের সান্ত্বনা দেন।