কাজিরবাজার ডেস্ক :
সংসদ সদস্যদেরকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সম্পৃক্ত হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আইসিটির জ্ঞান ও ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূলে আইসিটি সুবিধা পৌঁছে দেয়ার ফলে জনগণের জীবনমানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ডিজিটাইজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন করেছে।
এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, দুর্নীতি রোধে সরকার সকল সেবা ডিজিটাল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ১ হাজার ৫শ’ সরকারী সেবার ৩শ’টি ইতোমধ্যে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। বাকি সকল সেবাকে ডিজিটাল করার প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের সকল সেবা ডিজিটাল হতে থাকায় ক্রমান্বয়ে দুর্নীতিও কমে আসছে। সরকারের সকল সেবা ডিজিটাল করা হলে দুর্নীতির কোন সুযোগ থাকবে না। আর দ্রুত সময়ে দেশকে ডিজিটালাইজড করার কার্যক্রম বাংলাদেশ ছাড়া খুব কম দেশই পেরেছে। আমরা এখন ই-গবর্নমেন্ট মাস্টারপ্ল্যান করছি। এখন যেহেতু ক্রিটিক্যাল কিছু সিস্টেম হয়ে গেছে। এটার ওপর বেইজ করে অন্যান্য সার্ভিস ডিজিটাইজ করা সহজ হয়ে গেছে।
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংসদ সচিবালয় আয়োজিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ : সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তব্য প্রদানকালে তারা এসব কথা বলেন। সংসদ সদস্যদের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে ধারণা দিতে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি, জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন, বাস্তবায়ন এবং তদারকিতে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করতে সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সোপানে নিয়ে যেতে দেশের পুরনো আইন-কানুনে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি মানসিকতায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করলে তারাই বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে। সে লক্ষ্যে তরুণ প্রজন্মের জন্য যথাযথ শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
বিদেশী প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বিদ্যমান নীতি ও আইনের পরিবর্তন দরকার উল্লেখ করে জয় বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগী হিসেবে না দেখে তাদের সঙ্গে পার্টনারশিপ করে এগিয়ে যেতে হবে। এটা করতে হলে নীতিমালা, আইনের দ্রুত পরিবর্তন প্রয়োজন। করতে পারলে আমরা আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারব।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আমরা ডিজিটাল সেক্টরে এখন যেটা ফেস করছি তা হলো বাইরের অনেক কোম্পানি আসতে চায়। বিনিয়োগ করতে চায়। তবে আমাদের অনেকের মধ্যে একটি ধারণা রয়ে গেছে, বিদেশী কোম্পানি এসে খালি প্রফিট নিয়ে চলে যায়। ভেবে দেখুন, আজকে যদি বিদেশী কোম্পানি বাংলাদেশে না আসত থ্রিজি, ফোরজি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারতাম না। আজকে তারা কিন্তু দেশে এসে শুধু প্রফিট নিয়ে চলে যায়নি। তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। কত মানুষের লাভ হয়েছে, তারা ট্যাক্স দিচ্ছে। আজকের যুগ বিশ্বায়নের। নিজেদের আলাদা করে রাখতে পারি না। অর্থনীতি আরও ওপেন করতে হবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় যে কোন কোম্পানি বিনিয়োগ করতে পারে। আমাদের সেদিকে যেতে হবে। সরকার একা সব পারে না। সরকারের সব কিছু করা উচিতও না। কারণ সরকার যদি সব কিছু করতে যায়, তখন আরেকটি বিষয় দাঁড়ায়। সেটা হলো সিস্টেম লস। বেসরকারী খাত লাভ-লোকসান বেশি দেখে। সেখানে সিস্টেম লস কম।’
বিনিয়োগ বাড়াতে মানসিকতার পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, প্রয়োজন হলো আমাদের নিজেদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করা। তরুণ প্রজন্ম এবং সিনিয়রদের মধ্যে একটা জেনারেশন গ্যাপ থাকে। এটা বাস্তব। আমি একটু অনুরোধ করব, আমরা এখন আধুনিক পদ্ধতিতে নিজেদের চিন্তাধারা, ভয় ছেড়ে আরও অন্যান্য যেসব দেশ এগিয়ে গেছে যেমন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া তাদের কাছ থেকে উদহারণ নিয়ে নিজেদের নিয়ম-আইন-নীতিমালা একটু দ্রুত পরিবর্তন করব।
তিনি বলেন, দশ বছর আগে আমাদের দেশে শুধুমাত্র টুজি ছিল। দশ বছরে আমরা শুধু থ্রিজি নয়, ফোরজিতে চলে এসেছি। আর আমাদের এখন পরিকল্পনা আছে যে সারাবিশ্বে যখন ফাইভজি আসবে তার সঙ্গে সঙ্গে এগোনোর। বাংলাদেশে বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ নীতিমালা পরিবর্তনের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আমাদের আইসিটি অবকাঠামো যেটা করেছি-যেমন হাইটেক পার্ক, ডেটা সেন্টার। এগুলো আপনারা দেখেছেন। আরেকটা হলো আমাদের টেলিকমিউনিকেশন। আমাদের ডেটা নেটওয়ার্কটাই আইসিটির রাস্তা। আপনারা যেমন নির্বাচনী এলাকায় রাস্তার কাজ করেন। সেই টেলিকমিউনিকেশনের রাস্তার কাজ আমরা করছি। দশ বছর আগে আইসিটি মন্ত্রণালয় বলতে কিছু ছিল না। বাংলাদেশ সংসদ বিভিন্ন আইন করে এই মন্ত্রণালয় আজকে বাস্তবায়ন হয়েছে। সেগুলো আমরা নতুন করে করার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমাদের টেলিকমিউনিকেশন এখনও সেই ২০ বছর আগের। এটাকে আমাদের নতুন করে মডেল পদ্ধতিতে আনার প্রয়োজন। আমি উদ্যোগ নিয়েছি। প্রায় ১৫ বছরের পরিকল্পনা করেছি। আমরা সম্পূর্ণ নতুন একটা টেলিকমিউনিকেশন পলিসি করব।