সিলেট অঞ্চলে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কৃষি উপকরণ বিতরণ প্রক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ সচিব ॥ সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে

92

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
পরিকল্পনামাফিক প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া, কৃষির পুরোনো ইতিহাস না জানা, চারা ও কৃষি উপকরণ বিতরণে অনিয়মসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ। সবজি, ধানের চারা বিতরণে কৃষকদের সুনির্দিষ্ট তালিকা না থাকায়ও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ভিনদেশী কলম কেনায় তিনি তাদের দেশ প্রেম নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। সিলেট অঞ্চলে আউশ আবাদ বৃদ্ধিকরণ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন সঠিকভাবে না হওয়ায় ডিপিপি (সম্ভাব্যতা যাচাই) প্রস্তুতকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। তাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি। হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শনিবার সকালে আয়োজিত কর্মশালায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেব বক্তৃতা করেন।
সচিব বলেন, সবজি ও ধানের চারা, কৃষি উপকরণ চাষিদের মাঝে ঠিকমতো বিতরন করতে হবে। সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলো বিতরণ করতে হবে। এগুলো বিতরণের আগে ঘোষণা দিতে হবে। বিতরণের সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কৃষক সমিতির প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এ অঞ্চলের কৃষির ২৫/৩০ বছর আগের ইতিহাস জানতে হবে। তা নাহলে কা করা যাবেনা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নও সম্ভব নয়। কৃষকদের কাছে যেতে হবে। তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। তাদের কাছে যেতে না পারাটা নিজেদের ব্যর্থতা। অন্তত ৫০ শতাংশ জায়গায় যেতে পারলেও খুব ভাল কাজ হয়েছে বলে ধরে নেয়া যাবে।
সচিব বলেন, বিজের অভাব, ভেজাল সার, কীটনাশক, বিজ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। পরিবেশের বিপরিতে গিয়ে বোরো আবাদ করা হয়। বোরো আবাদে খরচ বেশি হয়। ঝুকিও বেশি। তাই উন্নত মানের আউশ আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ঘাস চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এতে গবাদি পশুর খাদ্য নিশ্চিত হবে। আবার তা বিক্রিও করা যাবে। আমনের ভাসমান বিজতলা তৈরীর প্রতি জোর দেন সচিব। তিনি আউশের আবাদ বাড়ানোর তাগিদ দেন।
সভায় সচিব কর্তব্যে অবহেলার জন্য সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ও তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান। এ সময় কৃষি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, হয় সঠিকভাবে কাজ করেন, না হয় চাকরি ছাড়েন। দু’চার জনের জন্য সব সাফল্য ধুলিস্যাৎ হবে তা মানা যাবেনা।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক বছর ধরে কৃষি নিয়ে কাজ হচ্ছে। তবেও কেন পতিত জমি থাকবে। প্রকল্প দিয়ে অর্থ ব্যয় হচ্ছে। যার যা কাজ তার জন্য অতিরিক্ত প্রকল্প কেন। সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প দিয়ে টাকা খরচ হবে কেন। সম্প্রসারণ আমাদের চাকরিরই অংশ। প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে জমি কমছে। তাই পতিত রাখা যাবেনা। এধরণের প্রকল্প না দিয়ে কৃষির উন্নয়নে অন্য খাতে ব্যয় করা হবে।
কৃষি বিভাগের সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলতাবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও পরিচালনায় এতে বক্তৃতা করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মহসীন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির, সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলতাবুর রহমান, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক তমাল লতা আদিত্য, সিলেটের উপ-পরিচালক মো. আবুল হাসনাত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফজলুল জাহিদ পাভেল, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী প্রক্ষুখ। কর্মশালায় সিলেট বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়াও উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।