স্পোর্টস ডেস্ক :
বিশ্বকাপে লীগপর্বের নয় ম্যাচের মধ্যে ভারত ছাড়া সবগুলো দল এরই মধ্যে সাতটি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে। ছয় জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। ছয় ম্যাচে পাঁচ জয় ও এক পরিত্যক্ত মিলিয়ে ১১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ভারত। পাঁচ জয় ও এক পরিত্যক্ত মিলিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডেরও পয়েন্ট সমান ১১। ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। চতুর্থ দল নিয়ে হয়তো সমীকরণ আছে, তবে ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে শীর্ষ তিন দেশ অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ড সেমির দৌড়ে অনেক এগিয়ে। ক্রিকেট-মক্কা লর্ডসে আজ ‘বড়’ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। গত বিশ্বকাপে (২০১৫) প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেও এই অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল কিউইরা। আর আগের ম্যাচেই এবারের আসরে তাদের প্রথম হারের স্বাদ দিয়েছে পাকিস্তান। সুতরাং কেন উইলিয়ামসনদের সামনে আচমকা ওই ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। অন্যদিকে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে মারিয়া দুরন্ত-দুর্বার এ্যারন ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়।
আগের এগারোবারের মধ্যে পাঁচবার শিরোপা জিতে বিশ্বকাপটাকে যেন নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৫ আসরের পর অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কসহ একঝাঁক তারকা ক্রিকেটারের অবসরে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে ভালই এগোচ্ছিল তারা। অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ, ডেপুটি আরেক তুখোড় উইলোবাজ ডেভিড ওয়ার্নার। কিন্তু গত বছর কেপটাউন টেস্টে হঠাৎই বল টেম্পরিংয়ে জড়িয়ে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন বড় দুই তারকা। বেসামাল হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট। টিম পেইনের অধীনে হারতে থাকে একের পর এক সিরিজ। কিন্তু যেই না বিশ্বকাপ এগিয়ে এলো অমনি পৈত্রিক সেই শিরোপার ঘ্রাণে জেগে উঠল কুলিন দেশটি! এ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বে ভারত সফরের পর আমিরাতে আরেক পরাশক্তি পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়ে জানান দিল শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে প্রস্তুত তারা। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে যোগ দিলেন স্মিথ-ওয়ার্নার। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া হয়ে উঠল আরও দুর্বার। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং মিলিয়ে দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ। শিরোপা ধরে রাখার মিশনে কক্ষপথে স্টিভ ওয়াহ-রিকি পন্টিংয়ের উত্তরসূরিরা।
বিশ্বকাপে এবার অস্ট্রেলিয়ার মিশন শুরু হয়েছিল দুর্বল আফগানিস্তানকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে। ব্রিস্টলে মাত্র ২০৭ রান টপকে জয়ের নায়ক ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার (অপরাজিত ৮৯)। বল হাতে প্যাট কামিন্স ও এ্যাডাম জাম্পা নিয়েছিলেন ৩টি করে উইকেট। আম্পারিং নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় ১৫ রানে। স্টিভেন স্মিথ (৭৩) ও নাথান কুল্টার নাইলের (৯২) ব্যাটিং-দৃঢ়তায় ৪৯ ওভারে ২৮৮ রানে অলআউট হয় অসিরা। ২৭৩/৯-এ থামে উইন্ডিজ। ৫ উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক। তবে বল হাতেও ২ উইকেট নিয়ে দুর্দান্ত অলরান্ড নৈপুণ্যের জন্য ম্যাচসেরা হন কুল্টারনাইল। এরপরই আসরে প্রথম ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচে ভারতের কাছে প্রথম ও একমাত্র হারের (৩৬ রানে) স্বাদ পায় ফিঞ্চের দল। ৫ উইকেটে ৩৫২ রানের বিশাল স্কোর গড়েছিল ভারত। জবাবে স্মিথ (৭০ বলে ৫৯), ওয়ার্নার (৮৪ বলে ৫৬) ও এ্যালেক্স ক্যারির (৩৫ বলে ৫৫*) ব্যাটিং-দৃঢ়তা সত্ত্বেও ৩১৬ রানে অলআউট হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। স্নায়ুর চাপ সামলে বড় ম্যাচে কিভাবে ভাল খেলা যায়, আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হয়তো অসিদের সেই পরীক্ষাটাই হয়ে যাবে।
উল্টো করে দেখলে পরীক্ষাটা নিউজিল্যান্ডেরও। ভারতের কাছে ওই ম্যাচে হারের ধাক্কা অবশ্য পরের ম্যাচেই কাটিয়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৮১ রানের পাহাড়গড়ে তুলে নেয় ৪৮ রানের জয়। ১৬৬ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলেন ডেভিড ওয়ার্নার। এ্যারন ফিঞ্চ (৫৩)ও উসমান খাজা (৮৯) তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। স্টার্ক, কুল্টারনাইল ও মার্কাস স্টয়নিস শিকার করেন ২টি করে উইকেট। অস্ট্রেলিয়ানরা বড় আত্মবিশ্বাস পায় সর্বশেষ আয়োজক ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে। এই লর্ডসেই ২৮৫ রান করে ফিঞ্চদের জয় ৬৪ রানে। ওই ম্যাচে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকান অধিনায়ক ফিঞ্চ (১০০)। ওয়ার্নার করেন ৫৩ রান। ইংল্যান্ডকে ২২১ রানে অলাউট করে দেয়ার পথে একাই ৫ উইকেট নেন জ্যাসন বেহেনডর্ফ। স্টার্কের শিকার ৪ উইকেট। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে লর্ডসে চিরায়ত সিমিং কন্ডিশনে লড়াইটা হতে পারে দু’দলের পেসারদের মধ্যে। যেখানে একদিকে স্টার্ক, কামিন্স, বেহেনডর্ফ অন্যদিকে ট্রেন্ট বোল্ট, লোকি ফার্গুসন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ রানের নাটকীয় জয়ের ম্যাচে দু’জনে নিয়েছেন যথাক্রমে ৪ ও ৩টি করে উইকেট।
তবে নিউজিল্যান্ডের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় সর্বশেষ পাকিস্তানের কাছে ৬ উইকেটের হার। বিশেষ করে কিউইদের বড় চিন্তা ব্যাটিং নিয়ে। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও অভিজ্ঞ রস টেইলর ব্যর্থ হলেই যেন সব এলোমেলো। ওইদিন ৮৩ রানে ৫ উইকেট হারানো কিউইদের সম্মানজনক স্কোর (২৩৭/৬) এনে দিয়ে মান বাঁচিয়েছিলেন দুই অলরাউন্ডার জিমি নিশাম (৯৭*) ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (৬৪)। ওপেনিংয়ে মার্টিন গাপটিল, কলিন মুনরো। টপঅর্ডারে অধিনায়ক উইলিয়ামসনের সঙ্গী ইনফর্ম রস টেইলর। উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান টম লাথামও প্রয়োজনে কম যান না। অলরাউন্ডার হিসেবে জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্রান্ডহোম বেশ কার্যকর। স্পিনে মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি। আর যেটির কথা আলাদা করে বলতে হয় সেটি নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণ। ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, লোকি ফার্গুসনের পাশাপাশি চতুর্থ ও পঞ্চম পেসার হিসেবে আছেন নিশাম আর গ্রান্ডহোম। ১০ উইকেটের বড় জয়ের পথে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে মিশন শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ড। এরপর একে একে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তারা হারিয়েছে যথাক্রমে ২, ৭, ৪ উইকেট ও ৫ রানে।
১৯৭৪-২০১৭ পর্যন্ত মুখোমুখি ১৩৬ ওয়ানডের ৯০টিতে জয় অস্ট্রেলিয়ার। পরিত্যক্ত ৭। আর বিশ্বকাপে ১০ দেখায় ৭ জয় অসিদের। কিউইরা জিতেছে ৩টিতে। ২০১৫ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপে অকল্যান্ডে গ্রুপপর্বে অস্ট্রেলিয়াকে ১ উইকেটে হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু মেলবোর্নের ফাইনালে সেই তারাই অসিদের কাছে হেরেছিল ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে।