কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলতি জুনে সারাদেশের ৬৪ জেলায় পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে ১০ হাজার সদস্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সারাদেশের ৬৪ জেলার কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের বিষয়ে ঘুষ লেনদেনসহ স্বজনপ্রীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী। এ ছাড়া পুলিশে উচ্চ ও গুরুত্বপূর্ণ পদে বড় ধরনের রদবদল করা হতে পারে। পুলিশের ভাবমূর্তি বাড়ানোর জন্য রাজনীতির উর্ধে রেখে ‘দলবাজ’ কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের তালিকায় রাখা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন তুলনামূলক সৎ, দক্ষ, নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২২ জুন থেকে সারাদেশের ৬৪ জেলায় ৯ হাজার ৬৮০ কনস্টেবল নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সদর দফতর। সাধারণত কনস্টেবল নিয়োগ দিয়ে থাকেন জেলার এসপি। তবে দীর্ঘদিন ধরে কনস্টেবল নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ড. পাটোয়ারীকে পুলিশের আইজি পদে নিয়োগ দেয়ার পর থেকে কনস্টেবল পদসহ পুলিশ প্রশাসনে নিয়োগ দেয়ার জন্য ঘুষ লেনদেন বা উৎকোচের বিষয়টি বন্ধ রয়েছে। এজন্য গত বছর দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ প্রশাসন গড়তে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছেন ড. পাটোয়ারী।
সদর দফতর সূত্র মতে পুলিশ বাহিনীতে বড় ধরনের রদবদল অপেক্ষা করছে। পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পদে কে কোথায় বদলি হচ্ছেন বা রদবদল হচ্ছে সে বিষয়ে বরাবরই তা আগেভাগেই ফাঁস হয়ে যায়। কিন্তু ড. পাটোয়ারীর সময় উচ্চ পদে যেসব রদবদল হয়েছে তাতে একান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে। ফলে পুলিশ সুপার, এডিশনাল পদ, ওসিসহ যেসব পদে বদলি বা রদবদল হয়েছে তা কেউ জানা তো দূরের কথা টেরও পাননি। এ মাসে পুলিশ সুপার পদসহ পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পদে বেশকিছু রদবদল হচ্ছে।
সদর দফতর সূত্র জানায়, পুলিশ প্রশাসনের রদবদল প্রক্রিয়ায় আছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের পদটিও। আগামী আগস্টে চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার। আগস্টের মাঝামাঝিতে তার এলপিআরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার আশা না থাকলে ওই শূন্য পদে একজন যোগ্য, সৎ, নিষ্ঠাবান পুলিশ কমিশনার বেছে নেবে সরকার। সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পদে রদবদল আসন্ন। ইতোমধ্যেই পুলিশের এডিশনাল আইজি (এডমিন) ও সিআইডি প্রধানের চাকরির মেয়াদ শেষে এলপিআরে যাওয়ার পর নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পুলিশের এডিশনাল (এডমিন) পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও সিআইডির প্রধান পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এডিশনাল আইজি শফিকুল ইসলামকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পদগুলো পূরণে বরাবরই সরকারপ্রধানের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে তার জায়গায় নতুন কে আসছেন এ নিয়েও চলছে জল্পনা-কল্পনা। এ মাসেই আরও কয়েকটি জেলার এসপি পদে রদবদল হতে পারে। আসতে পারেন নতুন মুখ। সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতর, ডিএমপি ও কয়েকটি জেলার এসপি রদবদল হয়েছে। প্রভাবশালী হিসেবে খ্যাত কয়েক কর্মকর্তার বদলির বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে আলোচনা।
পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে বদলি ও পদোন্নতি একটি চলমান প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। আইনশৃঙ্খলা সুষ্ঠু রাখতে এবং মানুষকে আরও বেশি পুলিশী সেবা দেয়া ও প্রশাসনিক কাজে গতি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী মাঝেমধ্যেই এ ধরনের বদলি বা রদবদল করা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ২১ কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়েছে। অনেক জেলায় টানা কয়েক বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসা এসপিদের সরিয়ে সেসব জায়গায় নতুন মুখ দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৬ মে পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে একজন অতিরিক্ত আইজি ও পাঁচ জন ডিআইজি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী সপ্তাহেই জেলার পুলিশ সুপারদের মধ্যে আরেকটি বড় ধরনের রদবদল হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এসপি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, এমন কর্মকর্তাদের সরিয়ে নতুনদের পদায়ন করা হবে। পুলিশের ইমেজ বাড়ানোর জন্য এক্ষেত্রে তুলনামূলক সৎ কর্মকর্তাদের তালিকায় রাখা হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, পুলিশকে আরও বেশি জনবান্ধব ও পুলিশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের যে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ তা কমিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন স্বয়ং আইজিপি। একইসঙ্গে আগে অভ্যন্তরীণ বদলি বা পদায়নের জন্য ঘুষ-দুর্নীতির যে অভিযোগ ছিল তাও শূন্যের কোঠায় আনার চেষ্টা করছেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ প্রশাসনে নতুন করে রদবদলের একটি প্রস্তাব ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছে। দলমতনির্বিশেষে পেশাদার একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে দক্ষ হওয়ার পরও অনেক কর্মকর্তার মধ্যে যারা দীর্ঘদিন ধরে মাঠপর্যায়ে পুলিশিং করার সুযোগ পাননি তাদেরও তালিকায় রাখা হয়েছে। খুবই কাছাকাছি সময়ে বদলির এই প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া যেসব প্রভাবশালী এসপির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তাদের বদলি করা হতে পারে। আগে জেলার এসপিরও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বদলি হতে নানারকম তদবির করতে হতো। সাধারণত এসপি থেকে উর্ধতন কর্মকর্তাদের মধ্যে কাকে কোথায় বদলি বা পদায়ন করা হবে তা তিনি আগে থেকেই অনেকটা জানতেন। তবে সম্প্রতি বদলি বা রদবদল হওয়া অনেক পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা জানতেনই না যে, তাদের বদলির নির্দেশ হতে যাচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তুলনামূলক সৎ কর্মকর্তাদের সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ কারণে পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পদে রদবদল, বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপার পদে বদলিতে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই কনস্টেবল নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেনের যে অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দফতর থেকে মনিটরিংসহ কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কনস্টেবল নিয়োগসহ রদবদল প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক তদবির বন্ধের মাধ্যমে দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিহার করা হবে বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।