উন্মাদনার বিশ্বকাপ শুরু আজ

30

স্পোর্টস ডেস্ক :
অপেক্ষার প্রহর শেষ, শেষ প্রস্তুতিপর্বও। এবার মূল মঞ্চের লড়াই, লড়াই ‘আসল’ বিশ্বকাপের। টি২০ যেখানে ‘গিনিপিগ’ ভার্সন, টেস্ট সেখানে সত্যিকারের ক্রিকেট। আর টেস্টের জন্য যেহেতু বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট নেই, তাই পঞ্চাশ ওভারের ওয়ানডে ফরমেটের শ্রেষ্ঠত্বের এ দ্বৈরথই ‘আসল’ বিশ্বকাপ। ১৯৯৯ সালের পর দীর্ঘ ২০ বছরে সেই বিশ্বকাপ ফিরেছে ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ডে। দশ দেশ, এক ট্রফি, দেড় মাসব্যাপী ব্যাট-বলের বারুদ ছড়ানো উত্তাপ…। প্রস্তুত লর্ডস, ওভাল, নটিংহ্যাম, ওল্ডট্র্যাফোর্ডের মতো জগদ্বিখ্যাত সব ভেন্যু। ক্রিস গেইল, স্টিভেন স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন, জস বাটলার, তামিম ইকবালদের উইলোবাজির রঙিন রোশনাইয়ে বুঁদ হতে তৈরি বিশ্বব্যাপী অগণিত ক্রিকেট পাগল মানুষ। কেনিংটন ওভালে আজ স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে শুরু বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর। সম্প্রতি মাঠের ক্রিকেটে ছড়ি ঘোরানো ‘নাম্বার ওয়ান’ ইংল্যান্ড, আগের ১১ ট্রফির পাঁচটি জয়ী বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, অন্যতম ফেবারিট সুপার কোহলির ভারত, ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান, আছে ক্রমশ ক্রিকেটে উন্মাদনার প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠা বাংলাদেশসহ এলিট ক্লাবের দশ সদস্য।
‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জয় করে। ১৯৮৭ সালে চতুর্থ বিশ্বকাপে প্রথম চ্যাম্পিয়ন অসিরা ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ সালে টানা তিনবার অর্থাৎ হ্যাটট্রিক শিরোপা অর্জন করে। সর্বশেষ ২০১৫ সালেও ওড়ে অস্ট্রেলিয়ার পতাকা। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে প্রথম দুই আসরে টানা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ১৯৮৩ সালে প্রথম শিরোপার স্বাদ পাওয়া ভারত দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১১ সালে দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছিল। ১৯৯৬ সালের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। তবে ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২ সালে তিনবার ফাইনালে উঠে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ইংল্যান্ড। এবার ঘরের মাটিতে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে ইংলিশরা। ইয়ন মরগানের নেতৃত্বে বদলে যাওয়া ইংল্যান্ড আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের ‘এক নম্বরে’। অন্যতম হট-ফেবারিট তারা। একটা তথ্য দিয়ে রাখা ভাল, শেষ দুই বিশ্বকাপ জিতেছে স্বাগতিক দল। ২০১১ সালে ভারত, ২০১৫তে অস্ট্রেলিয়া। এবার কি তাহলে সিংহের ঘরেই যাবে বিশ্বকাপের মুকুট? অধিনায়ক ইয়ন মরগান যা বলছেন এক কথায় তার সারমর্ম, ‘নিজ দেশে ফেবারিটের ট্যাগ, এখন চাপমুক্ত থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিশ্বাস এবার আমরা সেরা সাফল্য পাব। বিশ্বকাপ নিয়ে আমি খুবই রোমাঞ্চিত।’
স্বপ্নে বিভোর মরগানের কাছে চাপজয় করে সামর্থ্যরে সেরাটা দেয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, ‘দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলার চাপ অবশ্যই থাকবে। তবে আমরা সেই চাপ নিতে প্রস্তুত। গত তিন বছরে আমরা অনেক পরিপক্ব হয়েছি। তাই চাপমুক্ত হয়ে দল ভাল খেলতে পারবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। সামর্থ্যরে সেরাটা দিতে ছেলেরা সবাই অধীর হয়ে আছে।’ এবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দশ টেস্ট খেলুড়ে দেশ- ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। ১৯৯২ সালের পর এবারই কোন গ্রুপিং ছাড়া বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে লীগ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ অংশগ্রহণকারী দশটি দল একবার করে একে অপরের মুখোমুখি হবে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ চার দল খেলবে সেমিফাইনালে। ১৪ জুলাই ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ব্যাটে-বলে বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের এ লড়াই। বিশ্লেষক থেকে সমর্থক, সাবেক থেকে বর্তমান- সবার মুখে ইংল্যান্ড। কারণটা অনুমেয়। গত বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর খোলনলচে বদলে আগ্রাসী ক্রিকেটের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন ইয়ন মরগান, জো রট, বেন স্টোকসরা।
এবার তাই অধরা শিরোপার স্বপ্নে বিভোর গোটা বৃটেনবাসী। আর কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর প্রত্যাশার চাপ সামলে ইতিহাসের সেরা সাফল্য তুলে নিতে আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক মরগান। এবারের বিশ্বকাপে যে বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত সেটি রান-বন্যা। ক্রিকেটপ্রেমীদের বিনোদনের কথা ভেবে আইসিসি তত্ত্ববধানে তৈরি উইকেটগুলোতে যে রানের ফল্গুধারা বইয়ে যাবে, সম্প্রতি ম্যাচগুলোই তার বড় প্রমাণ। প্রস্তুতি ম্যাচ চার শ’র ওপরে রান করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারতও বাংলাদেশের বিপক্ষে করে সাড়ে তিন শ’র ওপরে। আর ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে জয়ী সিরিজের বেশিরভাগ ম্যাচেই তিন শ’-সাড়ে তিন শ’ রান করে স্বাগতিক ইংলিশরা। সুতরাং উইলোবাজিতে ব্যাটসম্যানরা যেমন দর্শকদের জন্য বিনোদনের পসরা নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছেন, তেমিন এটি হতে যাচ্ছে বোলারদের জন্য অগ্নিপরীক্ষারও।