মুসলিম এলাকাগুলোতেও আধিপত্য বিজেপির

33

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের মুসলিমপ্রধান এবং ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মসুলিমের বাস এমন আসনগুলোতেও এবার সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের মুসলিমরা যে বিশেষ কোনো দলের ভোট ব্যাংক নয়, তারা বিজেপিকেও ভোট দিয়েছেন, সেটাই প্রমাণ করছে বিজেপির এই সাফল্য। একই সঙ্গে তারা এ-ও বলছেন, হিন্দু ভোটাররা এবার বিজেপির পক্ষে আরও বেশি একজোট হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানায়, মুসলিমপ্রধান ২৯টি লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছে ৫টিতে। অন্য কোনো ধর্মনিরপেক্ষ দল অতটি আসন পায়নি এসব এলাকায়।
তবে বিজেপির জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে কেউই মুসলিম নন। শুধু এগুলোতেই নয়, যেসব লোকসভা আসনে মুসলিম জনসংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে, সেই ৬৭টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৯টিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। সেখানেও কোনো মুসলিম প্রার্থী নেই কট্টর হিন্দুত্ববাদী দলটির।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মুসলিমপ্রধান কেন্দ্রগুলোতে মুসলিমরা জোট বেঁধে অন্য সম্প্রদায়ের প্রার্থী বা বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন, এমনটা নয়। ২০১৪ সালেও তেমনটা হয়নি। বরং মুসলিমপ্রধান ওই আসনগুলোতে হিন্দু ভোট অনেক বেশি একজোট হয়ে বিজেপি প্রার্থীদের ঝুলি ভরিয়ে দিয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছিল গত লোকসভা নির্বাচনেও।
এর আগেও অনেক গবেষণা দেখিয়েছে, মুসলিম অধ্যুষিত আসনগুলোতে মুসলিমরা কখনোই জোট বেঁধে নির্দ্বিধায় কোনো দল বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দেন না। তারা ভোট দেন নিজেদের পছন্দমতো। পরিস্থিতি, প্রার্থীর গুণাগুণ বিচার করে। বস্তুত, স্বাধীনতার পর থেকে এটাই হয়ে আসছে।
মুসলিমরা যদি একজোট হয়ে কোনো প্রার্থী বা বিশেষ কোনো দলকে ভোট দিতেন, তা হলে সংসদে মুসলিম সাংসদের সংখ্যা আরও বেশি হতো, ৫০-এর কিছু বেশিতে আটকে থাকত না। তবে এটাও ঠিক, স্বাধীনতার পর থেকে যে কজন মুসলিম সাংসদ হয়েছেন এখনো পর্যন্ত, তারা সবাই নির্বাচিত হয়েছেন মুসলিমপ্রধান ওই ২৯টি লোকসভা আসন থেকেই।
সাম্প্রতিক জনগণনা ও নির্বাচন কমিশনের তথ্যাদি জানাচ্ছে, দেশের ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে এমন ২৯টি আসন রয়েছে, যেখানে মুসলিমদের সংখ্যা ৪০ শতাংশের বেশি। সেই ২৯টি আসনের মধ্যে ২৭টিই রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, আসাম, কেরল ও পশ্চিমবঙ্গে। বাকি দুটির একটি- লক্ষদ্বীপ। অন্যটি তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদ।
ওই ২৯টি আসনের মধ্যে গত লোকসভা ভোটে ৭টি জিতেছিল বিজেপি। অন্য সব কটি দলের চেয়ে বেশি। যাদের মুসলিম ভোটব্যাংক রয়েছে বলে মনে করা হয়, সেই ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর কেউই বিজেপির মতো অত বেশি মুসলিমপ্রধান আসনে জিততে পারেনি। ২৯টির মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ৬টি। বাকি ১৬টি আসন ভাগাভাগি হয়েছিল অ-বিজেপি, অ-কংগ্রেসি দলগুলোর মধ্যে। ৭টির মধ্যে বিজেপি ৫টিই জিতেছিল উত্তর প্রদেশে।
এবার মুসলিম-প্রধান ওই ২৯টি আসনের মধ্যে ‘হিন্দুবাদী’ পার্টি বিজেপি জিতেছে ৫টি আসনে। দুটি আসন খুইয়েছে উত্তর প্রদেশেই, বসপা-সপা জোটের কাছে। এটাই প্রমাণ করছে, মুসলিমরা ওই আসনগুলোতে বিজেপি প্রার্থীদের একেবারে বর্জন করেছেন, তা নয়। বরং মুসলিমদের একাংশ ওই সব আসনে অ-মুসলিম বিজেপি প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন।
তবে বিজেপি এবার ছয়জন মুসলিমকে ভোটে প্রার্থী করেছিল, তাদের একজনও জয়ী হননি। সামগ্রিকভাবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে সংসদে মুসলিম সাংসদের সংখ্যা বেড়ে ২৬ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা এ-ও জানাচ্ছেন, জনসংখ্যার নিরিখে মুসলিমরা যেসব লোকসভা আসনে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ (৪৮টি আসন) এবং ৩০ থেকে ৪০ (১৯টি আসন) শতাংশের মধ্যে, এমন ৬৭টি কেন্দ্রে বিজেপির পারফরম্যান্স ২০১৪ সালে যা ছিল, এবারও তা-ই রয়েছে। ওই ৬৭টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৯টিতে জিতেছে বিজেপি। ওই আসনগুলোতে বিজেপি প্রার্থীদের জয়ের ব্যবধান বেড়েছে।