স্পোর্টস ডেস্ক :
ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বিশ্বকাপের আর মাত্র ৯দিন বাকি। বিশ্বকাপের মতো এমন বড় আসরে বরাবরই ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি বোলাররাও ভালো ভূমিকা রেখেছেন। আর এই বোলারের নামের পাশে সব সময়ই ‘হ্যাটট্রিক’ দারুণ কিছু যোগ করে। একজন বোলারের জন্য এ অর্জন ক্যারিয়ারে সাফল্যের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
৩০ মে এবারের বিশ্বকাপের পর্দা উঠবে। দেখে নেওয়া যাক বিগত ১১টি আসরে বোলাররা হ্যাটট্রিকে কিভাবে নিজেদের রাঙিয়েছিলেন।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের ঘটনা আছে হাতে গোনা নয়টি। সেই নয়টি হ্যাটট্রিকের গল্পই তুলে আনা হলো পাঠকদের জন্য-
# চেতন শর্মা (১৯৮৭ সাল-ভারত)
বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক আসে ভারতীয় পকেট ডায়নামাইট চেতন শর্মার হাত ধরে। ১৯৮৭ আসরে ভারতের নাগপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই হ্যাটট্রিক পান তিনি। গ্রুপ পর্বের এই ম্যাচে চেতন পরপর তিন বলে একেএকে তুলে নেন কেন রাদারফোর্ট, ইয়ান স্মিথ ও এওয়েন চ্যাটফিল্ডকে। এই হ্যাটট্রিকের সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো তিন জনকেই চেতনের বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয়।
# সাকলাইন মুশতাক (১৯৯৯-পাকিস্তান)
বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিকের ১২ বছর পর আসে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সাকলাইন মুশতাক বিশ্বকাপের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকের মালিক হন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লন্ডনে এই হ্যাটট্রিক পান তিনি। গ্রুপ পর্বের এই ম্যাচে জিম্বাবুয়ের শেষের দিকের তিন ব্যাটসম্যান হেনরি ওলোংগা, অ্যাডাম হাকল ও পমি এমবাংগোয়াকে একে একে তুলে নেন মুশতাক।
প্রথম দুটি আউটের ক্ষেত্রে উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো মঈন খানের সাহায্য পান মুশতাক। তবে তৃতীয়টিতে ব্যাটসম্যানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি।
# চামিন্দা ভাস (২০০৩-শ্রীলঙ্কা)
বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক পান শ্রীলঙ্কার সাবেক পেসার চামিন্দা ভাস। পিটারমেরিটেজবার্গের ম্যাচে শ্রীলঙ্কা টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। বোলিংয়ে এসে প্রথম তিন বলেই তুলে নেন বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যানকে।
প্রথম তিন বলে তুলে নেওয়া তিন টপ অর্ডার বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান ছিলেন হান্নান সরকার, মোহাম্মদ আশরাফুল ও এহসানুল হক। এদের মধ্যে দুর্দান্ত এক ইনসুইংগারে হান্নান সরকার ক্লিন বোল্ড হন। আশরাফুল ও এহসানুল হক ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ম্যাচটি ১০ উইকেটে জিতে যায় শ্রীলঙ্কা।
# ব্রেট লি (২০০৩-অস্ট্রেলিয়া)
২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ব্রেট লির হাত ধরে আসে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। এটিই ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একই বিশ্বকাপে প্রথম দুই হ্যাটট্রিকের রেকর্ড। ডারবানে কেনিয়ার বিপক্ষে এই হ্যাটট্রিক পান লি।
সুপার সিক্সের এই ম্যাচে একে একে আউট করে ফেরান কেনেডি অটিয়েনো, ব্রিজাল প্যাটেল ও ডেভিড ওবুয়াকে। ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেয় অস্ট্রেলিয়া। ১৭৪ করা কেনিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেটে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।
# লাসিথ মালিঙ্গা (২০০৭-শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটারদের এটি দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রভিডেন্সে এই হ্যাটট্রিক করেন লাসিথ মালিঙ্গা। পর পর চার বলে চার প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানকে ফেরান এই ডানহাতি পেসার।
টানা চার বলে শন পলক, অ্যান্ড্রু হল, জ্যাক ক্যালিস ও মাখায়া এনটিনিকে ফেরান মালিঙ্গা। লঙ্কান এই পেসারের এ স্পেলকে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেরা স্পেল বলা হয়।
# কেমার রোচ (২০১১-ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ভারতের দিল্লিতে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক পান কেমার রোচ। টানা তিন বলে পিটার সেলার এবং বারনারড লোটসকে এলবিডব্লিতে ও বেরেন্ড ওয়েস্টডিজিককে ইয়র্কারে বোল্ড করে ফেরান। ম্যাচে ৬ উইকেট নেন উইন্ডিজ এই পেসার।
# লাসিথ মালিঙ্গা (২০১১-শ্রীলঙ্কা)
ক্রিকেট ইতিহাসে শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গাই একমাত্র বোলার যিনি বিশ্বকাপে দু’বার হ্যাটট্রিক অর্জন করেন। ২০১১ সালে কলম্বোতে কেনিয়ার তিন ব্যাটসম্যানকে তুলে নিয়ে এই সম্মান অর্জন করেন তিনি। ম্যাচে ৬ উইকেট পাওয়া মালিঙ্গা ফেরান পিটার ওনগোনদো, শিম এনগোচ ও এলিজাহ ওটিএনোকে।
তিনজনই মালিঙ্গার দুর্দান্ত ইয়র্কারে পরাস্থ হন। ওনগোনদো ফেরেন এলবিডব্লিউ হয়ে আর বাকি দুজনই ফেরেন বোল্ড হয়ে। ম্যাচে একাই ৬ উইকেট তুলে নেন মালিঙ্গা।
# স্টিভেন ফিন (২০১৫-অস্ট্রেলিয়া)
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের প্রথম ম্যাচে বাজে বোলিং করেন স্টিভেন ফিন। কিন্তু পরের ম্যাচেই সবাইকে চমকে দিয়ে তুলে নেন হ্যাটট্রিক। মেলবোর্নের এই ম্যাচে পাওয়া এ হ্যাটট্রিকে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট রেকর্ডেও জায়গা করে নিয়েছেন ফিন। তিনিই প্রথম কোনো ইংলিশ বোলার যিনি বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেছেন।
ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিং নেয় ইংল্যান্ড। প্রথম দিকেও বোলিংয়ে এসে খুব একটা চাপে ফেলতে পারেননি ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু সেই ফিনই একে একে তুলে নেন ব্র্যাড হ্যাডিন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল জনসনকে। তবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল হ্যাটট্রিক এটি।
# জেপি ডুমিনি (২০১৫-দক্ষিণ আফ্রিকা)
বিশ্বকাপ ইতিহাসে নক আউট পর্বে এক মাত্র হ্যাটট্রিকটি আসে দক্ষিণ আফ্রিকার জেপি ডুমিনির হাত ধরে। এছাড়াও এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র পার্ট টাইমার বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন। সিডনির এ ম্যাচে ডুমিনির স্পিনে ফেরেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, নুয়ান কুলাসেকারা ও থারিন্দু কুশল।