দশ বিমানবন্দরে চলছে ২৫ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ

21

কাজিরবাজার ডেস্ক :
’৮১ সালে যখন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হয় তখন বছরে যাত্রী হতো বড়জোর ৫ লাখ। এখন তা দাঁড়িয়েছে বছরে ৬৮ লাখে। তখন এটাই ছিল দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এখন ঢাকা ছাড়াও রয়েছে আরও দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-সিলেট ও চট্টগ্রাম। কক্সবাজারও আন্তর্জাতিক হওয়ার পথে। চার দশক আগের সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে আজকের সিভিল এভিয়েশনের বিস্তর ব্যবধান। এখন সিভিল এভিয়েশনের পরিধি বেড়েছে অনেক। প্রতিবছর বাড়ছে যাত্রী সংখ্যা। এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোর মধ্যে যাত্রীবৃদ্ধির শীর্ষ দশে বাংলাদেশ। অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে যাত্রী। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশল শাখার কাজও। ঠিক এই মুহূর্তে সিভিল এভিয়েশনের অধীনে সারাদেশে কমপক্ষে ২৫ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। অথচ মাত্র ১০৯ প্রকৌশলী দিয়েই সামাল দিতে হচ্ছে এত বড় কর্মযজ্ঞ। দারুণ নৈপুণ্যে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, বিমানবন্দরগুলোর সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নতি পুরোটাই নির্ভর করছে মাত্র এই কজন প্রকৌশলীর ওপর। এত গুরুদায়িত্ব যাদের ওপর নির্ভরশীল, তারাই আজ নানাভাবে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন। সিভিল এভিয়েশনে গত চার দশকে সার্বিক কাজের ভলিয়ম বেড়েছে ২০ গুণ, যাত্রী বেড়েছে ১০ ও অবকাঠামো বেড়েছে ২০ গুণ। অথচ সে তুলনায় বাড়েনি প্রকৌশলীদের সংখ্যা। পুরান অর্গানোগ্রামে অনুমোদিত পদের চেয়েও অনেক কম প্রকৌশলী দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। আইকাওয়ের মান অনুযায়ী দেশের এভিয়েশন খাতের যে প্রবৃদ্ধি বর্তমানে বিদ্যমান তাতে কমপক্ষে ৪ শতাধিক প্রকৌশলী থাকা আবশ্যক। অথচ মাত্র ১০৯ প্রকৌশলীকে এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এর ওপর প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার জরুরী প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সৈয়দপুর, রাজশাহী, যশোর ও বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের নির্মাণ প্রকল্প প্রায় শেষের পথে। নতুন করে শুরু হয়েছে টার্মিনাল ভবন ও দ্বিতীয় পর্যায়ের সম্প্রসারণ কাজ। এর প্রকল্প পরিচালক আমিনুল হাসিব জানান- প্রকৌশলী কম থাকলেও নির্মাণ কাজ সামাল দিতে হচ্ছে শতভাগ দক্ষতায়। এ নিয়ে শৈথিল্যের কোন অবকাশ নেই। এছাড়া দেড় হাজার কোটি টাকার স্বপ্নের থার্ড টার্মিনালের দরপত্রও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। মূল্যায়ন শেষ করে জাপানে পাঠানো হয়েছে মতামতের জন্য। এত বিশাল কর্মযজ্ঞের চাপ সামাল দিতে হচ্ছে এই গুটিকয় প্রকৌশলীকে। তাদেরকে সর্বক্ষণিক ড্রয়িং, ডিজাইন, দাফতরিক কাজকর্মের পাশাপাশি প্রকল্প তদারকির গুরুদায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, বিগত চার দশকে বিমানবন্দরের কাজের ভলিয়মের পাশাপাশি অবকাঠামো পরিধি বেড়েছে প্রায় বিশ গুণ। অথচ সে তুলনায় প্রকৌশলীর সংখ্যা রয়ে গেছে একেবারেই নগণ্য। এ অবস্থায় তাদের পক্ষে এত বড় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ‘ত্রাহি ত্রাহি’ অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এ সম্পর্কে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হারুণ রশিদ ভূঁইয়া বলেন, যেভাবে এখন প্রকল্প বেড়েছে তা যে কিভাবে সামাল দিচ্ছেন গুটিকয় প্রকৌশলী সেটাই অবাক বিষয়। এত কিছুর পরও তারা বর্তমানে যতটা পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন তা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং।
একটা বিষয় বুঝতে হবে এভিয়েশন প্রকৌশলী অন্যান্য প্রকৌশলী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ধরা যাক, এয়ারপোর্ট ব্যবস্থাপনার কথাই। রানওয়েতে তিল পরিমাণ গাফিলতি থাকলে কিংবা ধরা পড়লে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ব্যাহত হবে। রানওয়েতে প্রকৌশলীর অবহেলাজনিত কাজের দরুন যদি একটা ফ্লাইট বিলম্ব ঘটে, মুহূর্তেই তা দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। এমন কঠিন দায়িত্ব কিন্তু লোক স্বল্পতার অজুহাতে এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দর সর্বক্ষণিক সচল রাখার জন্য দিনরাত সতর্ক থাকতে হয় প্রকৌশলীদের। বলা চলে অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটানোর মতো। সিভিল এভিয়েশনে বর্তমানে বেশিরভাগই তরুণ প্রজন্মের প্রকৌশলী। প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামীর নেতৃত্বে মূলত একটা টিমওয়ার্ক যেভাবে কাজ চালাচ্ছেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তারা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে কর্মনিষ্ঠ ও ত্যাগী মনোভাব নিয়েই কাজ করছে। এত বড় কর্মযজ্ঞ দু’একটি ভুলত্রুটি কিংবা বিচ্যুতি হতে পারে সেটা ধর্তব্য নয়। এখন দরকার চলমান প্রকল্পগুলোকে আরও ত্বরান্বিত করতে জনবল বাড়ানো। সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল নাইম হাসান বলেন, জনবল কিছু বাড়ানো হয়েছে। আরও বাড়ানোর বিষয় প্রক্রিয়াধীন। ইতোমধ্যে অর্গানোগ্রাম ও সেটআপ নিয়ে কাজ চূড়ান্ত হওয়ার পথে। তখন এ সঙ্কট অনেকটাই কেটে যাবে। তবে এভিয়েশন প্রকৌশলী এমন একটা বিষয় যাতে এক মুহূর্ত গাফিলতির অবকাশ নেই। আজ পর্যন্ত প্রকৌশলজনিত ত্রুটির জন্য এক মুহূর্তের জন্য ফ্লাইট ওঠানামার ব্যাহত হওয়ার রেকর্ড আমাদের নেই। এতেই প্রমাণিত তারা সর্বক্ষণিক কাজে কতটা কর্মদক্ষ। তিনি জানান, প্রকৌশলীর সব কাজ চোখে দেখার মতো নয়।
তাদেরকে বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশনাল কাজের পাশাপাশি নতুন প্রকল্প নির্মাণের কাজ করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জনবলের ঘাটতির অজুহাতে কোন ব্যত্যয় ঘটার অবকাশ নেই। শাহজালালে থার্ড টার্মিনালের প্রস্তুতিকাজের পাশাপাশি সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেও চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। এছাড়া সেয়দপুর, যশোর, রাজশাহী ও বরিশাল বিমানবন্দরেও চলছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। প্রকৌশলীরা কাজ করছেন বলেই প্রকল্পগুলো এত দ্রুতগতিতে শুরু ও শেষ হচ্ছে। কাজেই বলা যাবে না জনবলের ঘাটতিতে কাজের ঘাটতি রয়েছে। এরপরও আমরা নতুন অর্গানোগ্রাম ও সেটআপের অপেক্ষায় রয়েছি।