পর্নোগ্রাফির মোহজালে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা ॥ বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা ॥দেখা দিয়েছে লেখাপড়ায় অমনোযোগীতা

89

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পর্নোগ্রাফির মোহজালে আক্রান্ত আজ গোটা পৃথিবী। উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে বাংলাদেশও নিমজ্জিত হয়েছে সেই চোরা গ্রোতে। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয়টি হচ্ছে বড়দের সঙ্গে ছোটরাও প্রবেশ করছে এই নীল সাম্রাজ্যে। স্কুল কিংবা কলেজ শিক্ষার্থীদের অনেকের কাছেই অন্যতম বিনোদন মাধ্যম এখন পর্নোগ্রাফি। তাই আইনের চোখে নিষিদ্ধ হলেও ক্রমশ পর্নোগ্রাফি পরিণত হচ্ছে সমাজের ছায়া সংস্কৃতিতে। কয়েকটি স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী নাম না প্রকাশের শর্তে পর্নোগ্রাফিতে আসক্তির কথা স্বীকার করেছে এই প্রতিবেদকের কাছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোনের সুবাদে পর্নোগ্রাফি হয়েছে আরও বেশি সহজলভ্য। প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে অনলাইনে প্রবেশ করলেই দেখা যাচ্ছে দেশ-বিদেশের নানা ধারার পর্নোগ্রাফি। শিশু মানসে দারুণভাবে প্রভাব ফেলছে বিকৃত যৌনাচারের দৃশ্য। এই আসক্তি শিশুদের মাঝে উস্কে দিচ্ছে যৌন সহিংসতা। বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। মনোযোগের অভাব ঘটছে পড়াশোনায়। ঘটছে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়। লুপ্ত হচ্ছে বিবেকবোধ। দৈনন্দিন অন্য কাজের প্রতি বেড়ে যাচ্ছে অনাগ্রহ। অভিভাবকের সঠিক পরিচর্যার অভাবে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত শিশুরা ভুগছে একাকিত্বের যাতনায়। পর্নোগ্রাফি প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও আসছে না কাক্সিক্ষত সাফল্য। কারণ, ইন্টারনেটে অশ্লীল দৃশ্যনির্ভর কোন কনটেন্ট মুছে ফেলা হলেও আসছে নতুন নামে। আবার পশ্চিমা অনেক পর্নো সাইট আছে যেগুলো চলছে বৈধতা নিয়ে। তাই সরকার চাইলেও বন্ধ করতে পারছে না এসব অনাকাক্সিক্ষত সাইট। অন্যদিকে ইউটিউবে ছেড়ে দেয়া দেশীয় বিভিন্ন ওয়েব সিরিজ বা নাটকের নামেও ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অশ্লীল কনটেন্ট। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির কৌশলে এসব ওয়েব সিরিজ ও নাটকে অশালীন সংলাপ এবং অঙ্গভঙ্গিযুক্ত কনটেন্ট সহজেই টানছে ছোট-বড় সবাইকে। অথচ পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ ২০১২ অনুসারে এসব বাজে কনটেন্ট নির্মাতার জন্য রয়েছে শাস্তির বিধান। বিশিষ্টজনরা বলছেন, পর্নোগ্রাফির ভাইরাস থেকে মুক্ত হতে হলে আইনটির যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা। দূর করতে হবে শিক্ষা ব্যবস্থায় যৌন শিক্ষার অভাবজনিত ত্রুটি। শিক্ষাদানের সঙ্গে বাড়াতে হবে সাংস্কৃতিক চর্চা। সব মিলিয়ে পর্নোগ্রাফি থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষায় প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।
পর্নোগ্রাফির প্রতি শিশু-কিশোর কিংবা স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের আসক্তির তথ্য তুলে ধরেন বিষয়টি নিয়ে কাজ করা বেসরকারী সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী রাফেজা শাহীন। পর্নোগ্রাফি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানটির একটি সমীক্ষার প্রতিবেদনের সূত্র ধরে তিনি জানান, রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কিশোর ও তরুণরা অবাধে দেখছে পর্নোগ্রাফি। কয়েক বছর আগে আমরা অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শতাধিক শিক্ষার্থীর ওপর এ বিষয়ে সমীক্ষা চালাই। সেখানে ষাট শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী স্বীকার করেছে যে নানাভাবে তারা পর্নোগ্রাফি দেখে থাকে। এই ষাট শতাংশের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত দেখে থাকে টু এক্স বা থ্রি এক্স রেটেড ছবি। নিরবচ্ছিন্নভাবে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় আমাদের কছে তথ্য আছে, বর্তমানে পর্নোগ্রাফির প্রতি শিক্ষার্থীদের এই আসক্তি একটুও কমেনি। বরং আরও বেড়েছে। তবে বদলে গেছে দেখার ধরন। আগে অনেকেই সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে এসব দেখত। এখন আর সেটার দরকার হয় না। হাতে থাকা স্মার্টফোনেই পেয়ে যাচ্ছে পছন্দের পর্নোগ্রাফি। এরপর সেটা ব্লু টুথ, পেন ড্রাইভসহ নানা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে সবার কাছে। অনেক শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজের কম্পিউটার রুমে বসে শিক্ষককে ফাঁকি দিয়ে দেখছে পর্নোগ্রাফি। এই দেখার সময় আবার অনেকে নিজেই শিকার হয় পর্নোগ্রাফির। বিশেষ করে মেয়েরা এটার শিকার হয়। একসঙ্গে দেখার সময় ছেলেদের প্রলোভনে মেয়েরা অংশ নেয় পর্নোগ্রাফিতে। পরবর্তীতে সেটা ভাইরাল হয়ে যায়। এ অবস্থার উত্তরণে চাই সরকারী-বেসরকারী সমন্বিত উদ্যোগ। ছেলে-মেয়েদের বিষয়ে অভিভাবকদের নজরদারি বাড়াতে হবে। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকেই শিশু মনে করতে হবে। কারণ, স্বার্থান্বেষী মহল চারপাশে পেতে রেখেছে ফাঁদ। প্রতিরোধে আইনের ব্যবহার এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিকতা জাগ্রত করতে হবে। উন্নত জীবনের জন্য শিক্ষা পদ্ধতির ভেতর যৌন শিক্ষার প্রচলন করতে হবে। রাষ্ট্র, ব্যক্তি ও সমাজকে একসঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পর্নোগ্রাফিতে আসক্তির নেপথ্যে আছে সামাজিক অবক্ষয়। এখন অনেকেই সচেতন। পর্নোগ্রাফির কিছু ওয়েবসাইটে সরকারী নিয়ন্ত্রণে আছে। স্কুল আওয়ারে শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না। উন্নত বিশ্বেও এটা দেয়া হয় না। পর্নোগ্রাফিতে আক্রান্তের কারণে শিশুদের মনে উস্কে দেয় সহিংসতা। তারা হয়ে ওঠে অপরাধপ্রবণ। অমনোযোগী হয়ে যায় লেখাপড়ায়। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের প্রতি অনাগ্রহী এসব শিশু এক সময় একাকিত্বে ভোগে।
শিশু-কিশোরদের মাঝে পর্নোগ্রাফির আসক্তির বিষয়ে কিছু স্কুল-কলেজের বাংলা ও ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের আলাপ হয়। সে সব শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তাদের বেশিরভাগই শুরুতে বিষয়টি চেপে যেতে চায়। নাম গোপন রাখার শর্তে তারা মুখ খোলে। চল্লিশ শিক্ষার্থীর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগই দেশী-বিদেশী পর্নোগ্রাফি দেখেছে এবং সুযোগ পেলেই দেখে। তাদের বেশিরভাগই মোবাইলে অন নেটে এসব দেখে। যাদের নিজেদের মোবাইল ফোন নেই তারা বন্ধুদের সঙ্গে পথে আসা যাওয়া, আড্ডা দেয়া বা খেলার ফাঁকে এসব দেখেন। শুধু তাই নয়, শেয়ার ইট, ব্লু টুথ ছাড়াও নানাভাবে তারা এগুলো একে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করে। অবাক করার মতো কিছু বিষয়ও জানা গেছে এসব শিক্ষার্থীদের কাছে। শুধু ভিডিও নয় অডিওতেও ছড়িয়ে পড়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন এই নীল জগত। কানে হেডফোন গুঁজে ইউটিউবেই শিক্ষার্থীরা অডিও আকারে শুনছে চটি নামে পরিচিত অশ্লীল গল্প। আকর্ষণ বাড়াতে আবেদনময়ী নারী কণ্ঠে পাঠ করা হচ্ছে যৌনতার গল্প। ঘরের সন্তানটি সবার সামনে বসেই কৌশলে শুনতে সেই কাহিনী। কেউ যাতে বুঝতে না পারে সেজন্য ইউটিউব চ্যানেলে ভাসছে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার ছবি, অন্যদিকে অডিওতে চলছে অশ্লীল গল্প পাঠ। কানে হেডফোন দিয়ে শুনতে থাকলে কাছে এসেও কেউ দেখে মনে করবে আসলে ছেলে বা মেয়েটি হয়ত খেলা দেখছে।
সম্প্রতি ওয়েব সিরিজ নাটকের নামে ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে অশ্লীলতা। হাল আমলে জনপ্রিয় হওয়া কিছু ওয়েব সিরিজ দর্শককে নির্মল বিনোদন দিলেও অসংখ্য ওয়েব সিরিজে রয়েছে যৌনতা উস্কে দেয়ার মতো নানা বিষয়। এসব নাটকে উঠতি এবং তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদেরও অভিনয় করতে দেখা যায়। এসব নাটকে সামাজিক মেসেজ দেয়া, সচেতনতা তৈরির কৌশল অবলম্বন করে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে অশ্লীলতা। নষ্ট মেয়ে, নাইট ক্লাব, সাবলেট, আনমেরিড ওয়াইফ, আবাসিক হোটেল, এ্যাডমিশন টেস্ট, থার্ড পারসনসহ কিছু ওয়েব সিরিজ নাটক ইউটিউবে অনায়াসেই পাওয়া যাচ্ছে। এসবে নানাভাবে ছড়িয়ে আছে অশ্লীল দৃশ্য। থার্ড পারসন নামের ওয়েব সিরিজে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে করতে নায়িকা গেয়ে শোনা ‘নটি নটি আমি ফোর ফোরটি ভোল্ট’ নামের গান। ইউটিউবে গিয়ে এসব নাটকের লাখ লাখ দর্শক ও চ্যানেল সাবসক্রাইভারের দেখা পাওয়া যায়। ওয়েব সিরিজের নাটকের পাশাপাশি প্রাঙ্কের নামেও ছড়ানো হচ্ছে অশ্লীলতা। কৌতুক করার ছলে এসব প্রাঙ্কে প্রকৃত অর্থে নারীর প্রতি আশালীন আচরণ করা হয়। অনেকে আবার অশালীন দৃশ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফ্রেন্ডস বুম, এমএসএফ গ্রীন চিলিস, রংঢং টিভি, মজার টিভি, দুলাল টিভি, মজামাস্তি এন্টারটেইনমেন্ট, টঙ্গি বয়েজ, জনি দ্য নটি বয়, ভাদাইম্মাসহ অসংখ্য প্রাঙ্ক ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে যেখানে এসব দেখানো হচ্ছে। দেশীয় এসব সাইটের সঙ্গে শিশু-কিশোররা পর্নোগ্রাফির টানে ঢুঁ মারছে এক্সভিডি ডটকম, পর্নোহাব, টিউবএইট ডটকমসহ বিভিন্ন বিদেশী রেজিস্টার্ড পর্নো সাইটে। এসব সাইটে অনেক সময় বিনা পয়সায় দেখা যায় পর্নোগ্রাফি। কখনও আবার দুই থেকে পাঁচ ডলার খরচ করে হওয়া যায় নিবন্ধিত ভোক্তা।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, পর্নোগ্রাফি বন্ধের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। আমরা আমাদের শিশুদের ভবিষ্যতকে সুন্দর রাখতে। ইতোমধ্যে ২২ হাজার পর্নো সাইট বন্ধ করা হয়েছে। তিনজন পর্নো স্টার সালমান মুক্তাদির, সানাই, ভাদাইম্যার মতো দেশী পর্নো স্টারকে সতর্ক করা হয়েছে। পর্নোগ্রাফি প্রতিরোধে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। ওয়েব সিরিজের বিষয়েও আমরা নজর রেখেছি। কেউ কোন ওয়েব সিরিজের বিষয়ে অভিযোগ জানালে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। তবে অল্প সময়ে মধ্যেই সমস্ত পর্নোগ্রাফি বন্ধ করা সহজ কাজ নয়। এ ধরনের কাজে রাতারাতি সফলও হওয়া যায় না। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
পর্নোগ্রাফি সমাজে অবক্ষয় ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, এর ফলশ্রুতিতে ক্রমাগতভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। পর্নোগ্রাফির আসক্তিতে নৈতিকতার এতটাই অবক্ষয় ঘটেছে যে, প্রায় প্রতিদিনই স্কুলশিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর ধর্ষিত হওয়ার খবর থাকছে পত্রিকার পাতায়। এ অবস্থার নেপথ্যে আছে শিক্ষা ব্যবস্থায় গোড়ায় গলদ। শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোন আন্তঃসম্পর্ক নেই। বেতন কম হওয়ায় প্রাইমারী স্কুলগুলো অযোগ্য শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। কিশোর বয়সী ছেলে-মেয়েদের কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় সেটা তারা জানে না। মাদ্রাসা শিক্ষকদের অবস্থাও একইরকম। এসব শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে মেশার পাশাপাশি যথাযথভাবে পড়াতেও পারে না। উল্টো চাপ সৃৃষ্টি করে। অথচ পাঠদান পদ্ধতি হতে হবে আনন্দদায়ক। আমি যখন ক্লাস করাই তখন শিক্ষার্থী কেউ ফেসবুক বা ইন্টারনেটে মগ্ন না থেকে বরং ক্লাসটাকেই উপভোগ করে। এছাড়া পিএসসি কিংবা জেএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষাগুলো উঠিয়ে শ্রেণী ভিত্তিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। পর্নো সাইটের প্রতি শিক্ষার্থীদের আসক্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে, পারিবারিক শৃঙ্খলা। বাবা-মা তার সন্তানের যতœ ঠিকমতো নিচ্ছে না বলেই শিশুটি সময় কাটাতে গিয়ে পর্নোগ্রাফিতে ঝুঁকছে। পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদের প্রয়োজন বিনোদন। অথচ এই শহরে এখন খেলাধুলার জন্য মাঠ খুঁজে পাওয়া যায় না। খেলতে গেলে অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সেই বন্ধুত্বের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তির জায়গাটি পূরণ হয়। পর্নোগ্রাফির প্রতি শিক্ষার্থীদের আসক্তি নিরসনের কিছু সুপারিশ তুলে ধরে এই শিক্ষাবিদ বলেন, প্রথমত প্রাইমারী স্কুলগুলোতে ভাল বেতনের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রকৃতিবিষয়ক ক্লাব গঠন, অভিনয় ক্লাব গড়াসহ সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়াতে হবে। স্কুল-কলেজের ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণভাবে ফেসবুক বা ইউটিউব বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া সাইবার অপরাধকারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সাইবার অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হলে তখন যে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার বিষয়ে অনেক বেশি সংযত হবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও কথাশিল্পী অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, একজন মানুষের ভেতর তিন ধরনের শক্তি কাজ করে। উৎস, আকাক্সক্ষা ও চাহিদা। সেক্ষেত্রে পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি সময়ের আগেই শিশুর যৌন চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে তাদের মনস্তত্ত্বের প্রেষণা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে কারণে জীবনের লক্ষ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের ভেতরে একদিকে ভোগবাদী সত্তা প্রাধান্য পায় আর অন্যদিকে নৈতিকতা হারিয়ে যায়। সামাজিক নৈতিকতা ও ধর্মীয় অনুশাসন গৌণ হয়ে যাওয়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে শিশুরা। লুপ্ত হয় বিবেকবোধ। পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত এসব শিশুরা পরবর্তীতে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পর্নোগ্রাফির প্রতিরোধে করণীয় প্রসঙ্গে মনোচিকিৎসক বলেন, উন্মুক্ত আকাশ সাংস্কৃতিক যুগে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে একইসঙ্গে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারী উদ্যোগে বাজে সাইটগুলোকে ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যক্তি উদ্যোগে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনের কারণে শিশুর হাতে স্মার্টফোন তুলে দিলেও তারা কি ধরনের কনটেন্ট অবলোকন সেটা মাঝে মাঝে চেক করতে হবে। ল্যাপটপ বা কম্পিউটারটি এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেন সেটা সবার নজরেই থাকে। পাশাপাশি সেক্স এডুকেশনের মাধ্যমেও সঠিক পথ দেখাতে হবে শিশুকে। সব মিলিয়ে শিশুকে পর্নোগ্রাফি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ।
নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ওয়েব সিরিজ বা নাটকের নামে এখন যা খুশি তাই চলছে। অন্তঃসারশূন্য বিষয়ের ভেতরে কৌশলে যৌনতা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মেধাহীন মানুষ পরিণত হচ্ছেন নির্মাতা। অভিনয়ের অ-ও জানে না বনে যাচ্ছেন অভিনেতা। মূলত অশ্লীলতাকে নির্ভর এসব করে নির্মিত হচ্ছে এ ধরনের ওয়েব সিরিজ। আর এ ধরনের বাজে জিনিস নির্মাণে এসব পেয়ে যাচ্ছেন অবাধ স্বাধীনতা। প্রিভিউ করার কেউ নেই। যার যা খুশি করছে। সত্যি কথা বলতে আমরা নাটকের যে একটা বিশ^াসযোগ্যতার জায়গা তৈরি করেছিলাম সেটা ধ্বংস করা হচ্ছে। ক্রমাগত সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষ ঘটানো হচ্ছে। পক্ষান্তরে এ ধরনের কনটেন্ট উস্কে দিচ্ছে যৌন সহিংসতাকে। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, কঠিন এ্যাকশন ছাড়া উপায় নেই। এক সময় চলচ্চিত্রে ব্যাপকভাবে অশ্লীলতা ভর করলে তখন সরাসরি শূটিং স্পটে গিয়ে র‌্যাব বা পুলিশ রেইড করেছে। এসব পর্নোগ্রাফি টাইপ নাটক ও ওয়েব সিরিজের বেলায়ও সে ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে এসবের সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে।