কাজিরবাজার ডেস্ক :
ফণা তুলে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। শক্তিশালী হয়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে উড়িষ্যা হয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ফণী আজ সন্ধ্যা নাগাদ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা খুলনা, সাতক্ষীরা, সুন্দরবন এবং বাগেরহাটের ওপর দিয়ে ১১০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানতে পারে। এছাড়া দেশের উপকূলীয় জেলা ও দ্বীপসমূহ ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত, চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত এবং কক্সবাজার বন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় এটি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানলেও ঝড়ে অগ্রগতি অংশের প্রভাব আজ শুক্রবার ভোর থেকে খুলনা, সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে শুরু হতে পারে। ফলে ভোর থেকে এসব এলাকায় ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ঘূর্ণিঝড় উষিড়্যার পুরী এলাকার কাছাকাছি অবস্থান করছিল। এটি আরও অগ্রসর হচ্ছে। তিনি জানান, এটি ঘণ্টায় ২৭ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ শুক্রবার দুপুরের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সন্ধ্যার দিকে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার শক্তি নিয়ে এবং হাজার কিলোমিটার ব্যাসের বিস্তার নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার দুপুরের পর উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করবে। তবে ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব খুলনা ও সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চলে শুক্রবার সকাল থেকেই দেখা দিতে পারে।
তারা জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ রয়েছে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। যা দমকা ও ঝড়োহাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকট সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এদিকে তারা জানায়, এটি উড়িষ্যা অতিক্রম করার সময় এর গতিবেগ কিছু কম থাকবে। ফলে দেশের উপকূলে আঘাত করার সময় এর ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতি বেগ থাকতে পারে। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকন্ঠকে বলেন, শক্তির বিবেচনায় এটি অধিক বা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হলেও, এর চেয়ে অধিক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দেশের উপকূলে আঘাত করেছে। বিশেষ করে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে। যার গতিবেগ ছিল ২২৩ কিলোমিটার। তারও আগে ১৯৯১ সালেও চট্টগ্রাম উপকূল এলাকায় যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে তার গতিবেগ ছিল ২২৫ কিলোমিটার। এছাড়া ’৭০ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ২২৫ কিলোমিটার বেগে। সেই তুলনায় ফণীর গতিবেগ অনেক কম রয়েছে। যদিও এটি অধিক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। এই গতিবেগ নিয়ে আঘাত করলে উপকূলীয় এলাকায় অধিক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকা থেকে এ বিষয়ে মাইকিং শুরু হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার আগে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এদিকে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় দেশের সব নৌ চলাচল বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ। উপকূলীয় এলাকায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি বৈঠকে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিকে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সদর দফতর এবং উপকূলবর্তীর ১৯ জেলায় সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যুত, নৌ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণীতে বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আগামী ৪৮ ঘণ্টা চট্টগ্রাম এবং খুলনাঞ্চলের সব বিদ্যুত কেন্দ্র এবং বিতরণ সংশ্লিষ্ট সকলের ছুটি বাতিল করে স্ব স্ব কর্মস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। বিদ্যুত বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, অনেক সময় ঝড়ের কারণে বিদ্যুতের পোল উপড়ে যায়। আবার দেখা যায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ করে রাখা হয়। এতে করে লোড ম্যানেজমেন্টে সমস্যা হয়। এ কারণে যে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ন্যাশনাল লোডডেসপাস সেন্টারের (এনএলডিসি) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ঝড়ের পর যাতে দ্রুত বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক করা যায় এজন্য সংশ্লিষ্টদের আজ বিদ্যুত বিভাগ নির্দেশ দিয়েছে।
ইতোমধ্যে আবহাওয়া অফিস থেকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর সতর্কতায় মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এলাকায় ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় এবং অমবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পাবে।
একই সঙ্গে এসব এলাকায় ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। এই অবস্থায় উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৯ নম্বর বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়ার এই বিশেষ বুলেটিনে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং সংলগ্ন দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে।
অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের মাত্রা একই। ঝড় বন্দরের কোন্ দিক দিয়ে যাবে তার ভিত্তিতে নম্বর আলাদা করা হয়। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে আগের মতোই ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ শুক্রবার বিকেল নাগাদ উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তীতে উড়িষ্যা পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে আজ সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তার আশপাশ এলাকায় পৌঁছাতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের বর্তমান গতিবেগ ঠিক থাকলে ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব সকাল থেকেই বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলে দেখা দিতে। জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব মানে হচ্ছে, আকাশে মেঘ দেখা যাবে, বৃষ্টিপাত শুরু হবে, বাতাস শান্ত থেকে অশান্ত হয়ে উঠবে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি রূপ নেয় সুস্পষ্ট লঘুচাপে। এরপর এটি গভীর নিম্নচাপ এক সপ্তাহ আগে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। নাম হয় ফণী। ‘ফণী’ বাংলাদেশের দেয়া একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলীয় ৮টি দ্বীপরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত প্যানেলের দেয়া নাম থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয়ে থাকে। এর আগেও বাংলাদেশের দেয়া নামে একাধিক ঘূর্ণিঝড় জন্ম নিয়েছে।
এদিকে ভারতের দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ফণী শুক্রবার ভারতের উড়িষ্যা রাজ্য উপকূলে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আছড়ে পড়ার সময় ঘণ্টায় প্রায় ২০৫ কিলোমিটার গতি থাকবে এই ঘূর্ণিঝড়ের। গত চার দশকেরও (৪৩ বছর) বেশি সময়, অর্থাৎ ১৯৭৬ সালের পর ভারত মহাসাগরে এত শক্তিশালী ঝড়ের মুখোমুখি হয়নি দেশটি। ঘূর্ণিঝড় ফণী বর্তমানে তামিলনাড়ুর বিশাখাপত্তমের পূর্ব উপকূল থেকে ৬০০ কিলোমিটার ও পুরী থেকে ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ১৯৭৬ সালের (গত ৪৩ বছরে) পর এখন পর্যন্ত এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরে যত ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, তার কোনটি কখনই এত শক্তিশালী আকার ধারণ করেনি।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের ঘূর্ণিঝড়সংক্রান্ত তথ্যে দেখা গেছে, ১৯৬৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে ৪৬টি ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ হয়েছে। এর মধ্য ২৮টি হয়েছে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্য। সাতটি ছিল মে মাসে। দুটি ছিল এপ্রিলে। এ দুটি ঘূর্ণিঝড় ১৯৬৬ ও ১৯৭৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে হয়েছে। ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার গতির ঝড় হলে তা শক্তিশালী ঝড় এবং ২২১ কিলোমিটার গতির হলে ‘সুপার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলে। প্রবল ঝড়ের সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাতও চলবে এই ফণীর কারণে।
চট্টগ্রাম অফিস : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। সমুদ্র থেকে ফিরে আসছে মাছ ধরার নৌকা ও ছোট নৌযানগুলো। উপকূলীয় এলাকায় চলছে জনসাধারণকে সতর্ক করে মাইকিং। ঘূর্ণিঝড় শুরুর আলামত দেখা গেলেই যেন দ্রুত নিরাপদে আশ্রয় নেয়া যায় সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়েছে উপকূলবাসীও।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক জানান, ৬ নম্বর সঙ্কেত জারি হওয়ার পর বন্দরে অভ্যন্তরীণ ‘এ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়েছে। জেটি ও বহির্নোঙ্গরে কন্টেনার ও পণ্য হ্যান্ডলিং বন্ধ আছে। বন্দরে আগে প্রবেশ করা ট্রাক-কভার্ডভ্যান ও লরিগুলোকে পণ্য সরবরাহ দেয়া হলেও নতুন কোন যানবাহন প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কায় কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের নির্দেশে বৃহস্পতিবার এ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। জরুরী প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সভা থেকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নম্বর ৬৩০৭৩৯ এবং ৬৩৩৪৯৬। চসিকের পক্ষ থেকে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিংও করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ফণী যদি চট্টগ্রামে আঘাত হানে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিক্যাল টিম। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও শুকনো খাবারের বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাগেরহাট : ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় জেলায় ২৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সব সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ‘ফণী’র কারণে মংলা বন্দরে পণ্য ওঠা-নামার কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বন্দর জেটি ও আউটার এ্যাংকরেজে অবস্থানরত ১৫ জাহাজসহ সব ধরনের পণ্যবাহী লাইটার জাহাজকে বন্দরের পশুর চ্যানেল থেকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা সদরসহ নয়টি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা এবং ৩৫টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিলসহ রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার কয়েক শত স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাইকিং করা হচ্ছে। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সাতক্ষীরা : ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবেলায় জেলার ১৩৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম ও স্বেচ্ছাসেবক টিম প্রস্তুত, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার, শুকনা খাবার মজুদ রাখা, ওষুধের পর্যাপ্ততা নিশ্চিতকরণসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি নিশ্চিত করার কথা জানানো হয়। ইতোমধ্যে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অফিসে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।