কাজিরবাজার ডেস্ক :
এপ্রিলের শেষে এসে সাগরে সৃষ্টি হয়েছে নিম্নচাপ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ তৈরি হয়। শুক্রবার সুস্পষ্ট লঘুচাপ আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপ এবং ঘুর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাগরে সৃষ্ট এই লঘুচাপের কারণে দেশের সমুদ্রবন্দর সমূহকে এক নম্বর দূরবর্তী সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে বিচরণ না করতেও বলা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি আজ শনিবার অথবা আগামীকাল রবিবারের মধ্যে ঘুর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এটি ঘুর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ফণি। এটি বাংলাদেশের দেয়া নাম। আবহাওয়াবিদ বজহলুর রশিদ বলেন, সামনে যে ঘূর্ণিঝড়টি আসছে বাংলাদেশের দেয়া সেটির নাম ‘ফণি’। উপসাগরীয় এলাকার দেশ সমূহের প্যালেন বসে ঘূর্ণিঝড়ে নাম ঠিক করে। এবারের যে ঘূর্ণিঝড় আসছে তা বাংলাদেশ দেয়া নাম, ধারণ করে। এর আগে শ্রীলঙ্কার দেয়া নাম সিডর, মহাসেন পাকিস্তানের দেয়া নাম তিতলি নার্গিস নাম দেয়া হলে এবারই বাংলাদেশের দেয়া নাম গ্রহণ করা হয়েছে। সাপের ফণার নাম অনুসারে ঘুর্ণিঝড়ের এই নাম দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি শনিবার অথবা রবিবার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা কতটা শক্তিশালী হবে বা তা সিডরের মতো প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে কিনা তা এর গতিপথের ওপর নির্ভর করবে। এখন বাংলাদেশের উপকূল থেকে যে দূরত্বে অবস্থান করছে তাতে এটি শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
গত মধ্য এপ্রিল থেকে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে জনজীবন। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা বেড়ে এই মৌসুমের সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। তবে একদিন পরে শুক্রবার তাপমাত্রা কিছু কমে ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যায়। সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে শুক্রবার রাজধানীর ঢাকার আকাশে প্রায় সময়ই মেঘে ঢাকা ছিল। এ কারণে গরমের মাত্রা আগের দিনের চেয়েও কিছুটা কম ছিল। এদিন রাজধনীর ঢাকার তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস কমে যায়। বৃহস্পতিবার যেখানে ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৭. ১ ডিগ্রী সেলসিয়স। সেখানে একদিনের ব্যবধানে শুক্রবার তামামাত্রা নেমে আসে ৩৬.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার দেশের ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ অব্যাহত ছিল। আজ এই তাপপ্রবাহ কিছু প্রশমিত হতে পারে। একইসঙ্গে দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টিপাতের খবর দিয়েছে তারা। জানিয়েছে বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে গরমের পরিমাণ কমে আসবে। তবে সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় এলকায় ঝড়ো হাওয়া বিরাজ করতে পারে। এর প্রভাবে আগামী দু/একদিনের মধ্যে উপকূলসহ অন্যত্র বৃষ্টিপাত হতে পারে। একইসঙ্গে তারা জানায়, সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি আর ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিনে সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণে আবহাওয়া অফিস থেকেও বিশেষ বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। শুক্রবার প্রচারিত এক নম্বর বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করা হয়েছে নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২ হাজার ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২ হাজারর ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২ হাজার ১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ২ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিমি যা দম্কা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর উত্তাল রয়েছে। এই কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।