বানান ভুল বিব্রতকর

18

বাংলাদেশে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার হচ্ছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার। দেশের বিশিষ্টজনদের এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাঁদের বিশেষ অবদানের জন্য। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানও এই পুরস্কার পেয়ে থাকে। অথচ দুটি পুরস্কারই যেন এখন অবহেলার শিকার। ‘একুশে পদক-২০২০’-এ পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের বাইরে দুটি শব্দ ও দুটি সংখ্যা আছে। এর মধ্যে দুটি শব্দই ভুল বানানে লেখা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে একটি বানান সংশোধন করতে জোড়াতালির আশ্রয় নেওয়া হলেও আরেকটি ভুল থেকেই গেছে। আর এই পদকই প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে পদকপ্রাপ্তদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সেদিন কয়েকজন কর্মকর্তার চোখে পড়লেও সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান চলায় কেউ উচ্চবাচ্য করেননি।
এবারের একুশে পদক নিয়ে নানা কথা উচ্চারিত হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। কী অবদানের জন্য, কাদের এই পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে, এমন প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে সদ্য ঘোষিত স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়েও। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক-২০২০ নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। পদকপ্রাপ্তদের তালিকায় এমন কিছু ব্যক্তির নাম আছে, তাঁদের ঠিক কী কারণে, কী অবদানের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হচ্ছে, সেটা কেউ বুঝতে পারছেন না। বিভিন্ন মহল থেকে উঠেছে প্রতিবাদ। অবশ্য এতে বিস্মিত হওয়ারই বা কী আছে? দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ আর কয়েক লাখ নারীর সম্ভ্রম জড়িয়ে আছে স্বাধীনতা পুরস্কারের সঙ্গে। অথচ অতীতে একাত্তরের ঘৃণ্য রাজাকারদেরও সর্বোচ্চ এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আর এবার তো এমন একজনকে সাহিত্যে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, সাহিত্যে যাঁর কোনো অবদানই খুঁজে পাচ্ছেন না বিশিষ্টজনরা। তিনি আবার নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেছেন। অথচ স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল ১১ বছর।
পদক পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক এটাই তো আর প্রথম নয়। ঘটেছে জালিয়াতির ঘটনাও। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননা দেওয়া হয় কয়েক বছর আগে। সে সময় দেওয়া ক্রেস্টে যে পরিমাণ সোনা থাকার কথা ছিল, তা দেওয়া হয়নি। আর ক্রেস্টে রুপার বদলে দেওয়া হয় পিতল, তামা ও দস্তামিশ্রিত সংকর ধাতু। পরে জাতীয় মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন, বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় এ তথ্য বেরিয়ে আসে।
একুশে পদকের বানান ভুল, ভুল ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার, বিদেশি বন্ধুদের দেওয়া ক্রেস্টে জালিয়াতি এমন ঘটনা রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের জন্য কাম্য নয়। আমরা মনে করি এসব করে জাতিকে বারবার বিব্রত করা হচ্ছে।