একে কুদরত পাশা সুনামগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জের হাওরে এখন সোনালী ধানের মৌ মৌ গন্ধ, দিগন্তজোরা সবুজ এখন সোনালী রঙ ধারণ করেছে। পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কালিয়াকোটা হাওরে শিশু কিশোররাই এখন কৃষকের ভরসা, স্কুল পালিয়ে শিশুরা এখন ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। হাওরে ধান কাটার শ্রমিক সমস্যা এড়াতে আগামী ৫ মে পর্যন্ত জেলার সব বালু ও পাথরমহাল বন্ধ থাকবে। এসব শ্রমিক যুক্ত হবেন হাওরের ধান কাটার কাজে।
সুনামগঞ্জে হাওরের বোরো ধান কাটা, ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ ও কৃষি উৎপাদনে ছোট ছোট খাল খননের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় জানানো হয়, এবার হাওরের ধান কাটার শুরুর পর থেকেই কৃষকেরা ধান কাটার শ্রমিকের সংকটে পড়েছেন। হাওরে ধান এখন পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে সব স্থানে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিকেরা আসতেন সুনামগঞ্জে। কিন্তু ১০ থেকে ১২ বছর ধরে জেলার বাইরে থেকে ধান কাটা শ্রমিক আসা কমে গেছে। তাই ধান কাটার মৌসুম এলেই সমস্যায় পড়তে হয়ে কৃষকদের। স্থানীয় শ্রমিকদের বেশি লাভ দিয়ে ধান কাটাতে হয়। আবার টাকা দিয়েও অনেক সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দিরাই কালিয়াকোটা হাওর পারের কৃষক সুকুমার তালুকদার জানান, শিশু শ্রম একটি অপরাধ তা জেনেও গ্রামের শিশুদের এখন ধান কাটার কাজে লাগিয়েছি কারণ আমাদের হাওর এলাকার মানুষের একমাত্র ভরসা বোরো ফসল। জমিতে পাকা ধান দেখে মনে কষ্ট হচ্ছে যে ভাবেই হোক ধান ঘোলায় তুলতে চাই তাই শিশুদের ধান কাটার কাজে লাগিয়েছি।
টাংনির হাওর পারের কৃষক রাসেল চৌধুরী জানান, প্রতি কেয়ার (৩০ শতাংশ) জমি দুই হাজার টাকা করে সাত কেয়ার জমি চৌদ্দ হাজার টাকায় ধান কাটিয়েছি। এখন ভাঙ্গাতে হবে মারাই মেশিন দিয়ে সব মিলিয়ে কৃষকরে ধান উৎপাদনে যে খরচ হয় ধান বিক্রি করে সে টকাই হয়না ফলে দিন দিন কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে বর্তমানে হাওরে ধানচাষ করছেন বর্গা চাষিরা।
কৃষকরা জানান, ১০-১২ বছার পূর্বেও আমাদের এলকায় নরসিংদি, কুমিল্লা, বরিশাল, ফরিদপুর থেকে প্রচুর ধান কাটার শ্রমিক আসতো। সে সময় চৈত্র মাসের শেষের দিকে নৌকায় করে শ্রমিকরা আসতে তারা কাপড়, হলুদ, মরিচ, আলু, তেতুল ও গুর এনে গৃহস্থদের ঘরে ঘরে দিয়ে দিতেন ধানকাটা শেষে যাওয়ার সময় মালামালের মূল্য বাবদ ধান দেওয়া হতো। এখন আমাদের এলাকা থেকে ওইস এলাকার মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার তারা আর ধান কাটতে আসেন না ফলে হাওরে শ্রমিক সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হাওরের মানুষ বিকল্প জীবিকায়ন চিন্তা করবে এবং ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।