স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের শেরপুরে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে ওয়াসিম আফনান (২১) নামে সিকৃবির এক শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছে বাসের হেলপার ও চালক। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের শেরপুরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তার সহপাঠীরা।
ছাত্র মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসমানী হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা উপ পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমদ বলেন, ওয়াসিম আফনানকে হাসপাতালে আনার পর ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ওয়াসিম সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের (৪র্থ বর্ষ) ফলাফল প্রত্যাশী ছাত্র। তার বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়ন রুদ্র গ্রামে। বাবার নাম মো. আবু জাহেদ মাহবুব ও মা ডা. মীনা পারভিন।
এদিকে এর প্রতিবাদে সিকৃবির শিক্ষার্থীরা কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এসে উদার পরিবহনের কাউন্টার ভাংচুর ও গাড়ী ভাংচুর করে। পরে হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বরে গিয়ে তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। অপর দিকে ওসমানীনগরের বেগমপুর থেকে (ঢাকা মেট্রো-ভ-১৪-১২৮০) বাসটি আটক করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী তথ্যানুসারে ও সিকৃবির শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ থেকে সিলেটগামী উদার পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ভ-১৪-১২৮০) নং বাসে সিকৃবির ১১ শিক্ষার্থী ওঠেছিলেন। তারা শেরপুর এসে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য নেমে পড়েন। তখন ভাড়া নিয়ে বাসের চালক ও হেলপারের সাথে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ভাড়া পরিশোধ করে তারা বাস থেকে নেমে আসছিলেন। ওয়াসিম আফনান ছিলেন সবার পেছনে। তিনি বাস থেকে নামার আগেই তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। এরপর বাসের চালক বাসের স্পিড বাড়িয়ে দেন। বাসটি ওয়াসিমের শরীরের ওপর চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত ওয়াসিম আফনানকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে ওয়াসিমের লাশ সিলেট ওসমানী হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী বাসযাত্রীরা জানান, সিলেট-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী উদার পরিবহনের বাসটির চালক ও হেলপারের সঙ্গে সিকৃৃবির কয়েকজন ছাত্রের বাকবিতণ্ডা হয়। শিক্ষার্থীরা সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে নামতে চাইলে বাস থেকে কয়েকজনকে নামিয়ে দিয়েই দ্রুত গতিতে চলতে থাকে। এ সময় ওয়াসিম বাসের দরজার হাতল ধরে ঝুলতে থাকলে হেলপার গাড়ির দরজা লাগিয়ে দেন এবং চালক বাস না থামিয়ে চালাতে থাকেন। এতে ওয়াসিম বাসের নিচে চাপা পড়েন। পরে দ্রুত ওয়াসিমকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতাল নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিকৃবির ছাত্র শিপলু রায় বলেন, ওয়াসিমের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায়। তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে নবীগঞ্জের টোলপ্লাজা থেকে উদার পরিবহনে ওঠেন। শিপলুর অভিযোগ, তারা সিলেট-ময়মনসিংহ সড়কে নামার সময় হেলপার তাদের ধাক্কা দেন এবং জোর করে দরজা লাগিয়ে দেওয়ায় ওয়াসিম বাসের নিচে চাপা পড়েন।
শেরপুর হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম বলেন, উদার পরিবহনের বাসটি (ঢাক মেট্রো-ভ-১৪-১২৮০) তারাকান্দি, মধুপুর হয়ে ময়মনসিংহ সড়কে চলাচল করে। ওয়াসিমসহ সিকৃবির কয়েকজন ছাত্র ঘটনাস্থলে নামার সময় হেলপার বাসের দরজা লাগিয়ে দেন। পরে চালক বাস দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাওয়ার সময় ওয়াসিম বাসের নিচে পড়ে নিহত হন। তিনি বলেন বাসটি আটক করা হয়েছে।
এদিকে, ওয়াসিম আফনানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বাসচাপায় হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগে বিক্ষোভ করেছেন সিকৃবির শিক্ষার্থীরা। ওসমানী হাসপাতাল থেকে তাদের বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। পরে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে দক্ষিণ সুরমাস্থ বাস টার্মিনাল গিয়ে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা উদার পরিবহনের কাউন্টার ভাংচুর করার পাশাপাশি বিভিন্ন বাসের গ্লাসও ভাংচুর করে। রাত সাড়ে ৯ টার দিকে কদমতলী হুমায়ূন রশিদ চত্ত্বরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। ওই সময় উভয় দিকে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তাদের দাবি উদার পরিবহনের বাস চালক ও হেলপারকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অবিলম্বে যদি ঘাতক বাসের চালক ও হেলপারকে পুলিশ না গ্রেফতার করে তবে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এমনকি তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র আন্দোলনেরও ডাক দিবেন বলে জানান। পরে সিকৃবির প্রক্টর ও শিক্ষক এসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে নিয়ে যান।
দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী ইনচার্জ এসআই শাহজাহান জানান, প্রথমে সিকৃবির শিক্ষার্থীরা কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এসে উদার পরিবহনের কাউন্টার ভাংচুর করে। এসময় তারা দু’একটি গাড়ির গ্লাস ভাংচুর করে কদমতলী হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বরে গিয়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। তখন রাস্তার উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা চালায়। তিনি বলেন, পরে সিকৃবির প্রক্টর ও শিক্ষক এসে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে নিয়ে যান।