৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০১৯ ফলাফল বিশ্লেষণ ॥ দলের একাংশের বিরোধিতা সত্ত্বেও কমলগঞ্জে কেন্দ্রীয় আ’লীগ নেতা অধ্যাপক রফিকুর রহমানের হ্যাটট্টিক জয়

20

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
দলের একাংশের বিরোধিতা, সাংসদের ছোট ভাই বিদ্রোহী প্রার্থী সত্ত্বেও তৃতীয়বারের মতো মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান। গত সোমবার (১৮ মার্চ) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিকটতম প্রার্থীর চেয়ে প্রায় ৩০ হাজার ভোট বেশী পেয়ে নির্বাচিত হন অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান।
এবার অধ্যাপক রফিকুর রহমানকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার পর দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হন ৬য় বারের নির্বাচিত স্থানীয় সাংসদ, সাবেক চীফ হুইপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এর ছোট ভাই মো: ইমতিয়াজ আহমেদ (বুলবুল)। আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও কিছুসংখ্যক প্রভাবশালী নেতা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনের আগে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালালেও ভোটের ফলাফলে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেননি বুলবুল। আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত কমলগঞ্জ উপজেলায় ব্যক্তি নয় দলীয় প্রতীককেই প্রাধান্য দেয় তৃণমূলের ভোটাররা। এছাড়া সাংসদ এর পরিবারে সব পদ দিতে নারাজ ভোটাররা। যদিও স্থানীয় আওয়ামীলীগ দলীয় সাংসদ উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদের ছোট ভাই কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম, মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক, আরেক ভাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ১নং রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল, আরেক ভাই উপজেলা বিআরডিবি চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহমেদ (বুলবুল) কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। অনেকটা ক্লিন ইমেজ এর অধিকারী হিসেবে খ্যাত ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল ভোটের মাঠে চমক দেখাতে পারেননি। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপির অধিকাংশ ভোটই এবারের উপজেলা নির্বাচনে নৌকার পক্ষে পড়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ সদস্য অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান। তখন দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। নির্বাচনের আগে স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্গন করে বিদ্রোহী প্রার্থী ছোট ভাইয়ের পক্ষে কৌশলে প্রচারণা চালানোরও অভিযোগ করেছিলেন।
বেসরকারীভাবে প্রাপ্ত ফলাফলে নৌকা প্রতীক নিয়ে অধ্যাপক রফিকুর রহমান পেয়েছেন ৪৯ হাজার ১৮৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি’র ছোট ভাই আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: ইমতিয়াজ আহমেদ (বুলবুল) আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৫০ ভোট। আর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী আব্দুল আহাদ মিনার হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে ৩৬৫ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী টিবওয়েল প্রতীক নিয়ে ৩১ হাজার ১২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: সিদ্দেক আলী তালা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭৭৯ ভোট। এছাড়া শাব্বির এলাহী চশমা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৯ হাজার ৭৬৮ ভোট ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আব্দুল মুয়ীন (ফারুক) মাইক প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৮ হাজার ১৮২ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষিকা বিলকিস বেগম পদ্মফুল প্রতীক নিয়ে ৩৮ হাজার ৭৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বহিষ্কৃত বিএনপি নেত্রী পারভীন আক্তার লিলি ফুটবল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৮ হাজার ৩৫৪ ভোট।
কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মোট ৭২টি ভোটকেন্দ্রে মোট ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৪০০ ভোটের মধ্যে সোমবার অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ৭০ হাজার ৯৪৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এতে ১ হাজার ৯৪৮টি ভোট বাতিল হয় এবং মোট ৬৮ হাজার ৯৯৯ টি ভোট বৈধ হয়। ভোট প্রদানের হার শতকরা ৪০ ভাগ। গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার প্রাথমিক বেসরকারী ফলাফলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে রামভজন কৈরী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিলকিস বেগমকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।