কাজিরবাজার ডেস্ক :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলন সরকারী আধা-সরকারী কর্মচারীদের কর্মস্থল বর্জন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারী ও বেসরকারী ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ ও যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানোর মাধ্যমে অব্যাহত থাকে। লাহোরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব) আসগর খান বলেন, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, দোষ করা হলো লাহোরে কিন্তু বুলেট বর্ষিত হলো ঢাকায়। তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসেবে নয়। পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে। আর তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। লাহোরে ন্যাপের মহাসচিব সি.আর. আসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের বর্তমান সঙ্কটের জন্য একচেটিয়া পুঁজিপতি ও আমলারাই দায়ী। ভুট্টোও এ বিষয়ে নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ভুট্টোর হুমকিপূর্ণ মনোভাব ও ক্ষমতার লিপ্সাই রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে। জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত খেতাব বর্জন করেন। রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারী ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপ প্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাত কোটি বাঙালীর মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমি জানি শেখ মুজিবুর রহমান কখনই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন। সিএসপি ও ইপিসি সমিতি বঙ্গবন্ধু আহূত অসহযোগে তাদের সমর্থন জ্ঞাপন করে। এই দুই সমিতির কর্মচারীরা আওয়ামী লীগের সাহায্য তহবিলে তাদের একদিনের বেতন জমা দেন। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এইদিন ব্যবসায়ী ও মজুদদারদের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অপচেষ্টা বন্ধের নির্দেশ ঘোষণা করে। চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ দলের নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য প্রেরিত খাদ্য বোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচী প্রেরণের ঘটনায় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা প্রকাশ করেন। বগুড়া জেলখানা ভেঙ্গে ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। কারারক্ষীদের গুলিতে একজন কয়েদি নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে আয়োজিত শিল্পীদের এক সভায় শিল্পী কামরুল হাসান শাপলাকে জাতীয় ফুল হিসেবে প্রস্তাব করেন। সভায় তার প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। শিল্পী মুর্তজা বশীর ও কাইয়ূম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘চারুশিল্প সংগ্রাম পরিষদ’। বাঙালিদের ওপর বিহারীদের হামলা ও আর্মিদের একতরফাভাবে বিহারীদের পক্ষ অবলম্বনের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম শহরে মিছিল বের হয়। চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের জরুরী সভা আহ্বান করা হয়। সভায় সবাইকে সংযম রক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়। বিকেলে সাহিত্যিক আবুল ফজলের নেতৃত্বে শান্তি মিছিল বের হয়। পাকিস্তানী বাহিনী কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। ক্যান্টনমেন্টের বাইরে তাদের তেমন গতিবিধি ছিল না। পেশাজীবীরা মূলত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।