সিলেটের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ, ওসমানী মেডিকেল কলেজের আবু সিনা ছাত্রাবাস নামে পরিচিত ভবনটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ভবনের একাংশ ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এ নিয়ে সিলেটের সচেতন মানুষদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দাবি উঠেছে ভবনটি না ভেঙ্গে সেখানে মিউজিয়াম তৈরি করার। এ প্রেক্ষাপটে ভবনটি রক্ষার দাবিতে হেরিটেজ ও পরিবেশবাদী সংস্থাগুলো দু’দিনব্যাপি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির প্রথম দিন আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা সিলেটের উদ্যোগে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসচি পালিত হবে। পরের দিন বুধবার হেরিটেজ নিয়ে কর্মরত সংগঠন সেভ দ্য হেরিটেজ এন্ড এনভায়রনমেন্ট-এর উদ্যোগে আগামীকাল বুধবার বিকাল ৪টায় আবু সিনা ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
ঐতিহাসিকদের মতে, সিলেটের প্রথম সংবাদপত্র ‘শ্রীহট্ট প্রকাশ’-এর প্রেস ছিলো এই ভবনে। শ্রীহট্ট প্রকাশ প্রকাশিত হয় ১৮৭৬ সালে। ১৯৩৬ সালে এ বাড়িতে মানুষের চিকিৎসাসেবা জন্য ছোট পরিসরে হাসপাতাল চালু করা হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় এ হাসপাতালের বর্ধিতাংশে বার্মা-ইংরেজ সৈনিকদের চিকিৎসা দানের লক্ষ্যে মিলিটারী হাসপাতাল চালু করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে এ ভবনে মেডিকেল শিক্ষাদানের জন্য নির্মাণ করা হয় ’লাইসেন্সড মেডিকেল ফেকাল্টি’ (এলএমএফ)। ১৯৬২ সালে এটিকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর ধবংসযজ্ঞ থেকে ভবনটি রক্ষা পায়নি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৮-৭৯ সালে হাসপাতালটি কাজলহাওরে পরিপূর্ণভাবে স্থানান্তরিত হলে ভবনটি আবু সিনা ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
অনুপম স্থাপত্যশৈলীর ঐতিহাসিক সে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার আয়োজন চূড়ান্ত। বাংলাদেশ পুরাকীর্তি আইন ১৯৬৮ অনুযায়ী এটি ভাঙ্গা সম্পূর্ণ বেআইনি। কালের সাক্ষী ঐতিহাসিক ভবনটিকে সংস্কার করে সুরক্ষার দাবিতে ঘোষিত আজ মঙ্গলবার ও আগামীকাল বুধবারের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য বাপা, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর করিম কিম ও সেভ দ্য হেরিটেজ এন্ড এনভায়রনমেন্ট’র প্রধান সমন্বয় সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তি