বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
দীর্ঘদিন ধরে পলি বালিতে ভরাট হওয়া মাহরাম নদী থেকে বালি পাথর উত্তোলন করে বিক্রির মহোৎসবে ব্যস্ত একটি সংঘবদ্ধ বালি পাথর খেকো চক্র। এ চক্রে কমপক্ষে ১০ জন বালুখেকো রয়েছে আর তাদের কথা মত নদীর বিভিন্ন ভাগে কমপক্ষে ৫ শতাধিক নারী পুরুষ শ্রমিক দিয়ে বালি উত্তোলন করাচ্ছেন।
নদীর বালি নিয়ে যাওয়ার কারণে দিন দিন পাহাড়ি ঢলের আগাম বন্যার হুমকিতে পড়ছে মাঠিয়ান, শনি ও বলদা হাওর সহ একাধিক হাওরের প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর বোরো জমির ফসল। এখনই মাহরাম নদী থেকে বালি উত্তোলন বন্ধ না হলে চলতি বছরই অকাল বন্যায় হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় লোকজন।
জানা যায় যুগ যুগ ধরে হাওরের ফসল বোরো ফসল রক্ষায় যাদুকাটার শাখা নদী মাহারাম নদীতে প্রতি বছরই লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বেড়ি বাঁধ দেয়া হতো অকাল বন্যায় হাওরের বোরো ফসল রক্ষার জন্য। পরবর্তীতে দিনে-দিনে পাহাড় থেকে নেমে আসা পলি বালিতে এবং ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় পাহাড়ি ঢলে মাত্রাতিরিক্ত বালি পাথর চলে আসায় স্থায়ীভাবে ভরাট হয়ে যায় যদুকাটার শাখা নদী মাহরাম। ফলে এ বছর থেকেই সতুন করে আর বোরো ফসল রক্ষায় মাহরাম নদীতে বেড়ি বাঁধ দেয়ার প্রযোজন পড়ে না। অদ্যবদি ২৯ বছর ধরে মাহারাম নদী এভাবেই আছে।
সম্প্রতি একটি সংঘবদ্ধ চক্র স্থায়ীভাবে বালিতে ভরাট হওয়া মাহরাম নদী থেকে ইচ্ছেমত বালি পাথর উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। মাহরাম নদীতে কর্মরত মাহরাম গ্রামের শ্রমিক জাকির হোসেন, বারহাল গ্রামের শ্রমিক রইস উদ্দিন সহ একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ১০ জনের নেতৃত্বে প্রতিদিন ৫ শতাধিক শ্রমিক এখান থেকে বালি পাথর উত্তোলন করছেন।
জানা যায় এ সংঘবদ্ধ বালু খেকো চক্রের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে রয়েছেন, মানিগাঁও গ্রামের হাসান মিয়া, আবুল কাশেম, হাসেন আলী, মুক্তার আলী, আসাদ মিয়া, রইস মিয়া, মোহাম্মদ আলী, দ্বীন ইসলাম, খাসতাল গ্রামের মুক্তার মিয়া, গুটিলা গ্রামের সামছু মিয়া সহ অনেকে।
এ বিষয়ে বালু খেকো চক্রের একাধিক জনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হযে উঠেনি তবে গুটিলা গ্রামের সামছু মিয়া জানান, তিনি তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিছু বালি নদী থেকে উত্তোলন করছেন।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, মাহারাম নদীতে যেভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে এভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকলে মাটিয়ান হাওরের ফসল অকান বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবার আশংকা রয়েছে।
মাটিয়ান হাওর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হাজী আব্দুল জলিল তালুকদার বলেন, মাহরাম নদীর স্থায়ী বাঁধটি কেটে বালি নিয়ে গেলে শুধু মাঠিয়ান হাওর নয় উপজেলার সবকটি বোরো ফসলি হাওর আগাম বন্যার হুমকিতে পড়বে।
তাহিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জ নন্দন কান্তি ধর বলেন, মাহারাম নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে উপেজেলা নির্বাহী অফিসারকে নিয়ে মোবাইল কোর্ট করতে হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি জেনে জেলা প্রশাসককে অবগত করেছি। এ বিষয়ে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।