হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
দিন দিন আবর্জনার শহরে পরিণত হচ্ছে এই শহর। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সকল প্রকার ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে খোয়াই নদী, পুরাতন খোয়াই, আধুনিক স্টেডিয়াম সংলগ্ন খাল, পুকুর ও জলাশয়ে। ভুক্তভোগী এলাকার মানুষকে দুর্গন্ধময় ও আবর্জনা আবদ্ধ অবস্থায় বসবাস করতে হয়। ফলে হবিগঞ্জের পরিবেশ ও জীবনযাত্রাকে বিপন্ন করে তুলেছে।
পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে খোয়াই নদী, বাইপাস সড়ক সংলগ্ন খাল ও অন্যান্য জলাশয় রক্ষার দাবিতে ‘অবস্থান কর্মসূচি’ চলাকালে পথসভায় বক্তারা একথা বলেন।
গতকাল ৬ মার্চ হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচী পালন করা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা এবং খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার এর আয়োজনে ১৫টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এই কর্মসূচিতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে অংশগ্রহণ করে।
অবস্থান কর্মসূচী চলাকালে বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মোঃ ইকরামুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেলের সঞ্চালনায় পথসভায় বক্তব্য রাখেন বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি, জেলা ক্রীড়াসংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন কলি, জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী সৈয়দ আশিকুর রহমান আশিক, সাবেক জনপ্রতিনিধি হাবিবুর রহমান, ক্রীড়া সংগঠক হুমায়ুন খান ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি ও শখের ছবিয়ালের সমন্বয়কারী ডাঃ এস এস আল-আমিন সুমন, হবিগঞ্জ সোসাইটি ইউকে এর সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বাসিত চৌধুরী, খোয়াই থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন খা, কবি মনসুর আহমেদ, তারুণ্য সোসাইটির সভাপতি আবিদুর রহমান রাকিব, পরিবেশকর্মী আমিনুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম রাজু আহমেদ পাশা, মিসবাউজ্জামান রিপন চৌধুরী প্রমুখ।
অবস্থান কর্মসূচী শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপসচিব) শফিউল আলম ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রেভিনিউ) নূরুল ইসলাম।
স্মারক লিপিতে বলা হয় হবিগঞ্জের নদী-জলাশয়গুলো বছরের পর বছর ধরে দখল-দূষণ, পলি ও আবর্জনাপতিত হয়ে অনেকাংশে বুজে এসেছে। শহরের প্রান্তবর্তী কিবরিয়া ব্রিজের নিচে খোয়াই নদীর অংশটিতে কয়েক বছর ধরে নিক্ষেপ করা ও জমা হওয়া বর্জ্যরে কারণে অনেকাংশে সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। এছাড়াও এলাকাটি হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধময়। শহরের বুক চিরে বয়ে চলা পুরাতন খোয়াই নদীর অবস্থা ভয়াবহ। দখল-দূষণে মাত্রা ছাড়িয়েছে। বর্তমানে পুরাতন খোয়াই নদী হবিগঞ্জ শহরের সর্ববৃহৎ ডাস্টবিনে রূপ নিয়েছে। নদীর আশপাশের বাসাবাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন, ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। এই ময়লা-আবর্জনা ফেলার মধ্য দিয়ে দখলি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। মুসলিম কোয়ার্টার, শ্যামলী ও পুরান মুন্সেফীর পেছনের অংশটি আবর্জনা এবং দখলের কারণে অনেকাংশে ভরাট হয়ে গেছে। যেজন্য বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা, কৃত্রিম বন্যা, আর শুষ্ক মৌসুমে মশা-মাছি উৎপন্ন হয়ে নদী তীরবর্তী এই শহরের বাসিন্দারা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শহরের বেশ কয়টিপুকুর বর্জ্য ফেলে পরিকল্পিতভাবে ভরাট করা হচ্ছে।
এছাড়া আধুনিক স্টেডিয়ামের প্রবেশ পথের উল্টোদিকে ও নিউফিল্ডের প্রান্তবর্তী খালটিও ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এই স্থানটিকে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে রূপান্তরিত করার ফলে চরম দুর্গন্ধময় ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে খেলোয়াড়দের খেলাধুলা করতে হয় এবং পাশ^বর্তী স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ লোকজনকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলাচল করতে হয়। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নদী, খাল ও পুকুরগুলো পুনঃখননসহ সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত এর দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
অবস্থান কর্মসূচীতে বিভিন্ন ক্লাবের খেলোয়াড়সহ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব হবিগঞ্জ, খোয়াই থিয়েটার, রোটারেক্ট ক্লাব হবিগঞ্জ, খোয়াই দুই শূণ্য শূণ্য ছয় পরিবার, তারুণ্য সোসাইটি, আমরা করবো জয়, আমাদের গল্পকথা, দর্পণ হবিগঞ্জ, প্রাকৃতজন, সুর্ন্দম, আলোর পরশ, বাংলাদেশ লোক সংস্কৃতি ফোরাম এর নেতৃবৃন্দসহ কর্মীরা অংশগ্রহন করেন।