বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ॥ দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে সরকার পাঁচশ’ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়েছে

50
মইন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের আইসিটি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে মোনাজাত করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

স্টাফ রিপোর্টার :
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি বলেছেন, যুবকদের বেকারত্বের হার কমাতে বর্তমান সরকার প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রায় পাচশ’ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প তৈরি করেছে। এই প্রশিক্ষণ পেলে পড়াশুনা শেষ করার সাথে সাথে তারা হয়তো চাকরী পাবেন, অথবা তারা উদ্যোক্তা হবেন। এই বিশেষ প্রশিক্ষণে অনেকগুলো কলেজকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি শনিবার মইন উদ্দিন মহিলা ডিগ্রি কলেজে আইসিটি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ছয়তলা বিশিষ্ট আবুল মাল আবদুল মুহিত শিক্ষা

সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর দক্ষিণ সুরমা কদমতলী বাস টার্মিনাল উন্নয়ন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে মোনাজাত করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি।

ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে। এই উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য উন্নত দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনশক্তি দরকার। তাই, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ৫শ’ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি দুর্বলতার কারণে আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেকগুলো টাকা লুট হয়ে গেছে। আমরা চাই, উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, গুণগত শিক্ষিত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি)। আমাদের সময়টা শিক্ষায়, স্কিল ট্রেনিংয়ে (দক্ষতা অর্জনের প্রশিক্ষণে) নিয়োজিত করুন। যাতে সামনে যত বড় বড় কাজ আসবে এইগুলো সহজভাবে ম্যানেজ করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেকগুলো বড় বড় বিমান এনেছি। এগুলো চালানোর পাইলট আমাদের দেশে নাই। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। আমি চাই, আপনারা পাইলট হবেন, স্কিল ট্রেনিং নেবেন। আপনাদের গুণগত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজন। অন্যথায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা কখনো সম্ভব হবে না।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সেক্টর হচ্ছে গার্মেন্টস। এ সেক্টর থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসে। সেই সেক্টরে বিরাট সংখ্যক বিদেশী লোক কাজ করে। কারণ, আমাদের দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ লোকের নাকি অভাব। এটা আমাকে অনেক বেশি দুঃখ দিয়েছে।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যে কোর্সগুলো সাজাবেন সেগুলোতে এমনভাবে করবেন যাতে শিক্ষার্থীরা কাজে লাগে। কর্মবান্ধব ও হাতেকলমে শিক্ষা দেবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আউটসাইট লেকচারার নেবেন। তাদের পড়াশুনা শেষ হওয়ার আগেই যেনো তারা কর্মসংস্থান পেয়ে যান।
সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত মন্ত্রী সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলীতে ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আধুনিকায়ন’ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, সিলেট মডেল হাই স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ, মেজরটিলায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বাস টার্মিনাল কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিলেটে যেসব উন্নয়ন কাজ হবে সেগুলোর কাজের তদারকি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু, যেসব উন্নয়ন কাজ হচ্ছে সেগুলো যদি ঠিকমত না হয়, প্রকল্পের অর্থ যদি উদায় হয়ে যায় তাহলে তাঁর সে চেষ্টা বৃথা যাবে। এজন্য কমিউনিটি নেতাদেরকে এসব কাজ তদারকির অনুরোধ করেন তিনি।
ড. এ কে মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর। কেউ দুর্নীতি করে পার পাবে না। যারা উন্নয়ন কাজে বাধা দেবে তাদেরকে বরদাশত করা হবে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জাতীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুস সাদেক লিপনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা বাস পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক।
মডেল হাই স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ড. মোমেন বলেন, অচিরেই সিলেটকে ডিজিটাল নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। সরকার এটা অনুমোদন দিয়েছে। সিলেট নগরীতে ফ্রি ওয়াই-ফাই সেবা দেওয়া হবে। এতে ছেলেমেয়েরা উপকৃত হবে। তারা রেস্টুরেন্টসহ যেখানেই যাবে সেখানে ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে পারবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সিটি বাস্তবায়ন হলে বিভিন্ন হাসপাতালে তথ্য পাওয়া সহজলভ্য হবে। হাসপাতালে কী ধরণের সেবা পাওয়া যাবে, কত সিট খালি আছে, সব তথ্য পাওয়া যাবে।
মডেল হাই স্কুলের পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বেসরকারি সংস্থা সীমান্তিকের চীফ পেট্রোন ড. আহমদ আল কবীর।
এর আগে সকাল ১০টায় মন্ত্রী মেজরটিলায় শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের মধ্যে সাইকেল বিতরণ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশকে সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপাওে খুবই কঠোর। সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী’র সাবেক উপদেষ্ঠা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ।