উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ, মুজাদ্দিদে যামান, শামসুল উলামা হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.)-এর প্রতিষ্ঠিত সুন্নিয়তের অতন্দ্র প্রহরী ছাত্র কাফেলা বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার ৩৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ১৮ ফেব্র“য়ারি, সোমবার সকাল ১০ টায় ঢাকাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে তাশরিফ এনেছিলেন উস্তাযুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি হযরত মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা ইমাদ চৌধুরী ফুলতলী বলেন- ফুলতলীর সেই মসজিদের পাশে আমাদের মুর্শিদ শুয়ে আছেন। আমাদের মুর্শিদ তালামীযের জন্য যে দুআ করে গেছেন তা শেষ নয় বরং অব্যাহত আছে। সিলসিলার সকল বুযুর্গের দুআ তালামীয কর্মীদের উপর থাকবে। আমি তালামীযের যুবকদের দেখেছি দুর্গম পাহাড়ের পাদদেশে আসহায় রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণের বোঝা বহন করতে। তিনি তালামীয কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন- অসহায় বনী আদমের জন্য জীবন উৎসর্গ করলে সফলতা আসবে। জীবনে অনেক দুর্যোগ আসে তখন ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। প্রত্যেককে শিক্ষকের আদেশ-নিষেধের প্রতি যতœবান হতে হবে। সঠিক আমল-আখলাক চর্চার মাধ্যমেই ইনসানে কামিল হওয়া যায়।
তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি রেদওয়ান আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসাইন জাহেদ ও সহ-সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূনুর রহমান লেখন-এর যৌথ পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর স্থায়ী কমিটির সদস্য শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা হবিবুর রহমান, বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভিসি প্রফেসর ড. এম শমসের আলী, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা একেএম মনোওর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ ও বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সহ-সভাপতি মাওলানা ছরওয়ারে জাহান, মাওলানা আবু নছর জিহাদী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব ও তালামীযে ইসামিয়ার সাবেক সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ উসমান গণির স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক মাসুম বিল্লাহ, ফেনী ছাগলনাইয়া আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হোসাইন আহমদ ভূইয়া, তালামীযে ইসামিয়ার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজুর রহমান, লতিফিয়া কারী সোসাইটি ঢাকা মহানগরী সভাপতি মাওলানা ইকবাল খন্দকার, আনজুমানে আল ইসলাহ ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনোওয়ার হোসাইন সালেহী, সহ-সাধারণ সম্পাদক ড. মোর্শেদ আলম সালেহী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী বলেন-ইসলাম আমাদের নিকট অত্যন্ত করুন ইতিহাসের মাধ্যমে এসেছে। ইসলামের হুরমত রক্ষা করার জন্য অসংখ্য মানুষের রক্ত-ঘাম ঝরেছে। খোলাফায়ে রাশেদিনের সকলেই তাদের জীবন কুরবান করেছেন তবুও ইসলামের ক্ষতি হতে দেননি। একই কাজ করে গেছেন হযরত হাসান ও হুসাইন (রা.)। আউলিয়ায়ে কিরামও ধারাবাহিকভাবে ইসলামের হুরমত রক্ষার জন্য বাতিলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তালামীযে ইসলামিয়া সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী ও আউলিয়ায়ে কেরামের সে সংগ্রামের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এখন কাদিয়ানিরাও ইজতেমা করতে চায়। এরকম আরো অনেক বিপথগামী ভন্ডদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদের বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, এদেশে তাক্বওয়া নির্ভর ইসলামী রাজনীতি করলেই কেবল সফলতা আসবে। জামায়াতে ইসলামীর মতো বাণিজ্য নির্ভর ইসলামী রাজনীতিতে সফলতা আসতে পারে না। তিনি তালামীয কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দুনিয়ার স্বার্থ থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে ইসলামের জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের সামনে রুল মডেল হিসেবে আমাদের পীর ও মুর্শিদ হযরত ফুলতলী ছাহেব ক্বিলাহর আদর্শ আছে। তিনি ইসলামের সঠিক প্রচারের জন্য প্রচুর ত্যাগ স্বীকার করেছেন কিন্তু কখনোই দুনিয়ার স্বার্থ তাকে গ্রাস করতে পারেনি।
শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা হবিবুর রহমান বলেন- আল ইসলাহ ও তালামীযে ইসলামিয়া আমাদের কাছে আল্লামা ছাহেব ক্বিবলাহ (র.)-এর রেখে যাওয়া আমানত। আমাদের কাছে সে আমানতের খেয়ানত যেন না হয়।
দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক কবি মাওলানা রূহুল আমীন খান বলেন-তালামীযে ইসলামিয়া বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা সহ সারাবিশ্বে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। নবী-রাসূল, সাহাবী, সলফে সালেহীন এবং আউলিয়ায়ে কিরামের আদর্শ প্রচার প্রসারের জন্য একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত থাকা প্রয়োজন। তালামীযে ইসলামিয়া সেরকম একটি সংগঠন। আমাদের সন্তানদের যেন কেউ নবী, সাহাবী ও আউলিয়া বিদ্বেষী, সন্ত্রাসী বানাতে না পারে সে জন্যই আল্লামা ফুলতলী ছাহেব ক্বিবলাহ (র.) তালামীয প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তালামীযে ইসলামিয়া ৪ দশক ধরে সে দায়িত্ব পালন করে আসছে। তিনি আরো বলেন- এদেশ ওলী-আউলিয়াদের দেশ। এই দেশ ইসলামী আদর্শ সুফীদের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত, তাদের মাধ্যমেই তা রক্ষা করা সম্ভব।
সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, তালামীযে ইসলামিয়া কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দুলাল আহমদ, মুহাম্মদ মুহিবুর রহমান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাছুম আহমদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোজতবা হাসান চৌধুরী নোমান, অর্থ সম্পাদক ওয়ালীউর রহমান সানী, অফিস সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ সম্পাদক মোঃ মারুফ হোসাইন, সহ প্রশিক্ষণ সম্পাদক সৈয়দ আহমদ আল জামিল, শিক্ষা সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার অজিউর রহমান আসাদ, সহ-শিক্ষা সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মুহিত রাসেল, সহ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সাঈদ হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ তৌরিছ আলী, সুলতান আহমদ, আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা মহানগরী সভাপতি মুজিবুর রহমান, শাবিপ্রবি সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম মহসিন, সিলেট মহানগরী সভাপতি মাহবুবুর রহমান ফরহাদ, সিলেট পশ্চিম জেলা সভাপতি জাহেদুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি আব্দুল জলিল, সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি রফিকুল ইসলাম তালুকদার, হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি মোবাশ্বির হোসাইন চৌধুরী, সিলেট প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি জোন সভাপতি মাসরুর হাসান জাফরী ও ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি আব্দুল আউয়াল প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি