কানাইঘাটে শিক্ষক কর্তৃক শিশু শিক্ষার্থী ধর্ষণের চেষ্টা

67

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট রাজাগঞ্জ ইউপির জামেয়াতুল ইসলাম লিলবানাত খালপার টাইটেল মহিলা মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হাফিজ কবির আহমদ (৪০) কর্তৃক মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেনীর শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। গত ৫ ফেব্র“য়ারী ভিকটিম এ শিশু ছাত্রীকে তার অভিভাবকরা সিওমেক হাসপাতালের ওসিসি বিভাগে নিয়ে ভর্তি করেন। ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগের খবর পেয়ে ঐ দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসিকান্ত হাজং ও কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ সরেজমিনে মাদ্রাসায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ভিকটিমের পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসীকে আশ্বাস প্রদান করেন। ডাক্তারী পরীক্ষায় মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টার আলামত পাওয়ার পর পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজ কবির আহমদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৪) এর ৯ (৪) (খ) রুজু করা হয়। কানাইঘাট থানার মামলা নং ১২, তাং-১০/০২/২০১৯ইং।
জানা গেছে, থানায় মামলা দায়েরের পর থেকে মামলার আসামী শিক্ষক কবির আহমদ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে রয়েছেন। মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুর রহমান শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার জঘন্য ঘটনাটি শুরু থেকে ধামাচাপা দিয়ে তিনি গত ৭ ফেব্র“য়ারি স্থানীয় লোকজনদের তোয়াক্কা না করে বার্ষিক জলসার আয়োজন করলে এ নিয়ে জনমনে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষে বেশ কয়েকজনের স্বাক্ষরিত শিশু ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার সাথে জড়িত শিক্ষক কবির ও মুহতামিম আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জলসা বন্ধ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে ৬ ফেব্র“য়ারী লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে থানা পুলিশ জলসা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় জনমনে উত্তেজনার অবসান হয়। স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেছেন, খালপার গ্রামের মৃত শহর উল্লাহর পুত্র মাওলানা আব্দুর রহমান স্বঘোষিত ভাবে কোন ধরনের পরিচালনা কমিটি ছাড়াই নিজে পরিচালক আবার মুহতামিম পরিচয় দিয়ে স্থানীয় লোকজনদের কে তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে লিলবানাত খালপার মহিলা মাদ্রাসাটি পরিচালনা করে আসছেন। বিভিন্ন সময় উক্ত মাদ্রাসার ভিতরে ছাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণের নানা ঘটনা ঘটে থাকে। সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারী মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার একটি নির্জন কক্ষে মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক স্থানীয় মইনা গ্রামের মৃত আব্দুস শুক্কুরের পুত্র হাফিজ কবির আহমদ তৃতীয় শ্রেণীর ৯ বছরের এক শিশু ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করলে মেয়েটি পরদিন থেকে মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় ছাত্রীর অভিভাবকরা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুর রহমানের কাছে বিচার প্রার্থী হলে তিনি ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং কারো কাছে এ বিষয়টি না বলার জন্য ছাত্রীর অভিভাবকদের বাধা নিষেধ করলে এ নিয়ে এলাকায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয়রা জানান মাদ্রাসার পরিচালক ও মুহতামিম দাবীদার মাওলানা আব্দুর রহমান এক সময় মসজিদের ইমাম ছিলেন। সে সময় তার বিরুদ্ধে এ ধরনের নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ ছিল। স্থানীয় লোকজনকে কোন ধরনের সম্পৃক্ত না করে তার বাড়ীর পাশে নিজস্ব জায়গার উপর লিলবানাত মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে মাদ্রাসার নামে দেশ-বিদেশ থেকে অনুদান এনে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। মাদ্রাসার কোন ধরনের আয়-ব্যয় প্রকাশ করা হয় না। বিভিন্ন সময়ে মাদ্রাসার ভিতরে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে। শিশু ছাত্রী ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত হাফিজ কবির আহমদ এলাকার লালারচক নামক একটি মাদ্রাসা শিক্ষকতা করার সময় সে একই ধরনের অভিযোগে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার হয়ে ছিল। এলাকাবাসী অবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার ও মাদ্রাসার মুহতামিম আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই আবু কাউছার জানিয়েছেন মামলার আসামী শিক্ষক কবির আহমদকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুর রহমানের সাথে মাদ্রাসায় কথা হলে তিনি বলেন তার মাদ্রাসাটি পুরোনো। এখানে ১১০ জনের মতো ছাত্রী লেখা পড়া করে থাকেন। এলাকার কিছু লোকজন তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। মাদ্রাসার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক কবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা তিনি জেনে মাদ্রাসায় ১০ জন শিক্ষক নিয়ে বৈঠক করেন। কিন্তু শিক্ষক কবির উদ্দিন মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তিনি কিছু করতে পারেননি। মাদ্রাসার টাকা আত্মসাৎ সহ তার বিরুদ্ধে আনা অন্যান্য অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।