কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট পৌরসভার সুরমা নদীর পাশে জনবহুল খেয়াঘাট বাস স্ট্যান্ড নামক স্থানে স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধ ষ্টোন ক্রাশার মেশিন দ্বারা প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট পাথর ভাঙ্গছে একটি পাথর খেকো চক্র। তারা পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ জনবসতিকে তোয়াক্কা না করে সুরমা নদীর বাসস্ট্যান্ড এলাকাকে যেন ষ্টোন ক্রাশারের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত করেছে। এতে মারাত্মক ভাবে দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। ধূলো-বালুর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সহ হাজারো পথচারী। বিশেষ করে উপজেলার সদর বাজার সহ সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ গুলো রয়েছে নদীর পশ্চিম তীরে। এর মধ্যে কানাইঘাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, কানাইঘাট মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামিজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কৌমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কানাইঘাট দারুল উলুম দারুল হাদিস মাদ্রাসা। সব মিলিয়ে এখানকার কয়েক হাজার মানুষের বসতিকে উপেক্ষা করে তারা অবৈধ ষ্টোন ক্রাশারের জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যার কারণে নদীর তীরের এসব বিদ্যাপিঠ গুলোর শিক্ষার্থী সহ কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন ষ্টোন ক্রাশারের ধূলো-বালুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কানাইঘাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুর রহিম ও রামিজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার জানান; নদীর তীরে বাতাসে উড়ে আসা ষ্টোন ক্রাশারের ধূলাবালি ও ক্রাশারের ঝনঝনানী শব্দে তারা অসহ্য হয়ে উঠেছেন। এসব ধূলা-বালুর কারনে তাদের পিছনে সব সময় সর্দি, কাশি সহ লেগে আছে নানা রোগব্যাধি। এ ছাড়াও ক্রাশারের ঝনঝনানিতে বেড়েই চলছে শব্দ দূষণ। সুরমা নদীর পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা মৃত ছৈদুর রহমানের পুত্র নজরুল ইসলাম জানান বাতাসে উড়ে আসা ক্রাশারের ধূলিতে তারা অসহ্য জীবন যাপন করছেন। ধূলা-বালুতে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ধরনের লাইসেন্স ছাড়াই এসব অবৈধ ষ্টোন ক্রাশার চলছে। গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায় কানাইঘাট বাজার সংলগ্ন সুরমা নদীর পূর্বপারে জেগে উঠা চরে প্রায় অর্ধশতাধিক ক্রাশার মেশিন অবৈধ ভাবে চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় কানাইঘাটের প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ ভাবে এসব ক্রাশার মেশিন গুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে নিবন্ধন বিহীন খেয়াঘাট পাথর ব্যবসায়ী সমিতি নামে একটি সংগঠনও করেছেন। নতুন কেউ এখানে ব্যবসা করতে হলে প্রথমেই সমিতিতে বড় অংকের চাঁদা দিতে হয়। এ ভাবে তারা কয়েক কোটি টাকা যে কোন পরিস্থিতি সামাল দিতে জমা রেখেছেন বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে। তাদের তালিকা অনুযায়ী এখানে ৫৯ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদের মধ্যে সভাপতি পদে রয়েছেন আব্দুল মালিক মানিক, সহ সভাপতি আব্দুন নুর, সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন, সহ সাধারণ সম্পাদক মঈনুল হক, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মুমিন, প্রচার সম্পাদক আলমাছ উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ, সদস্য ফখর উদ্দিন ও ফয়েজ উদ্দিন সহ ৫৯ জন পাথর ব্যবসায়ী। তাদের প্রায় সবারই অবৈধ ষ্টোন ক্রাশার রয়েছে। অনেকের একাধিক মেশিন রয়েছে বলেও জানা গেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসি কান্ত হাজং জানান এই ক্রাশার মেশিন গুলো সরকারী জায়গার উপর সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে চলছে। এসব বন্ধে প্রশাসন বার বার তাদেরকে বলা সত্ত্বেও তারা কর্ণপাত করছেন না। তার পরও প্রশাসন বিষয়টি দেখছে বলে তিনি জানান।