উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা ॥ সিলেট সহ ৮৭ উপজেলায় ভোট ১০ মার্চ ॥ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের ভোট ৪ মার্চ ॥ ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক থাকছে না

120

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রথম দফায় ৮৭ উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে ১০ মার্চ। বরিবার কমিশনের সভা শেষে উপজেলায় প্রথম দফায় নির্বাচনের জন্য বিস্তারিত তফসিল ঘোষণা করল ইসি। তফসিল অনুযায়ী আগামী প্রার্থীদের ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। বাছাই হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ধার্য করা করা হয়েছে। উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে না।
রবিবার কমিশনের বৈঠক শেষে তফসিলের বিস্তারিত ঘোষণা করেন ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে উপজেলায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসে কমিশন। ইসি সচিব বলেন, এবারে ৫ ধাপে উপজেলায় নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। প্রথম ধাপে ১০ মার্চ চার বিভাগের ১২ জেলার ৮৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে।
এর আগে গত ২২ কমিশনের বৈঠকে মার্চের চার দফায় উপজেলায় নির্বাচনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে ১৮ মার্চ, তৃতীয় দফায় ভোট হবে ২৪ মার্চ এবং তৃতীয় দফায় ৩১ মার্চে ভোট নেয়া হবে। বাকি উপজেলায় রমজানের পরে ভোট গ্রহণ করা হবে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এবারই প্রথম উপজেলায় দলীয় ভিত্তিতে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে ইসি সচিব জানিয়েছেন, উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে হলেও ভাইস চেয়ারম্যান দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না। এই পদ ওপেন থাকছে। ফলে যে কেউ ইচ্ছে করলে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে পারবেন। তার জন্য দলীয় মনোনয়নের দরকার হবে না।
এর আগে দেশে চারবার উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হলেও তা নির্দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইন অনুযায়ী ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এর বাইরে যে কেউ ইচ্ছে করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলায় নির্বাচন করতে পারবেন। উপজেলায় একজন চেয়ারম্যান এবং ২ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদেই নির্বাচন হবে। ভাইস চেয়ারম্যান পদের মধ্যে একজন নারী সদস্য নির্বাচিত হবে। চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী হতে হলে আগে দল থেকে প্রার্থীকে মনোনয়ন নিতে হবে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তি কেবল দলীয় প্রতীক পাবেন।
ইসি সচিব জানান, প্রথম দফায় রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় উপজেলার সব কটি উপজেলা ছাড়াও কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার সবগুলো উপজেলায় নির্বাচন হবে। ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলা সবগুলো উপজেলায় ভোট হবে। অপর দিকে এই বিভাগের নেত্রকোনার আটপাড়াবাদে সবগুলো উপজেলায় ভোট নেয়া হবে। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর বাদে সবগুলো উপজেলায় এবং হবিগঞ্জের শায়েস্তগঞ্জ বাদে সবগুলোর উপজেলায় ভোট নেয়া হবে। রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলা বাদে বাকি সবগুলো উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জয়পুর হাটের সবগুলো উপজেলায়, নাটোরের নলডাঙ্গা বাদে সবগুলো উপজেলা এবং রাজশাহী জেলার সবগুলো উপজেলায় প্রথম দফায় ভোট নেয়া হবে।
আইন অনুযায়ী উপজেলায় দলীয় ভিত্তিতে ভোট হলেও দেশের অন্যতম বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ইতোমধ্যে উপজেলায় নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও এই নির্বাচনে যাচ্ছে না। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে তারা উপজেলায় এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট বর্জনের এই ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি বাম গণতান্ত্রিক জোট এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
তবে একাদশ, জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগের বিভিন্ন জেলায় প্রার্থী নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তবে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে উপজেলায় চেয়ারম্যান পদ ছাড়া বাকি দুই পদে তদের দলীয় প্রতীক কোন প্রার্থীর অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হবে না। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে তারা বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছেন।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের মার্চ-মে মাসে ছয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আইনে মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে ভোটের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে একদিনেই ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালে ছয় ধাপে ভোট হয়েছিল। এবারের উপজেলা নির্বাচনে সদর উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে ভোট নেয়ার হবে বলে ইসির পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে। তফসিল ঘোষণা অনুষ্ঠানে ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে স্থানীয় সরকারের লাভজনক সকল পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
এদিকে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ইসি মাহবুব তালুকদার উপজেলায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাওদের উদ্দেশ্যে বলেন, চাপের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দেশের গণতন্ত্রের অভিযাত্রার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন নির্বাচনেই শিথিলতার সুযোগ নেই। কমিশনের সম্মান, মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে সাহসিকতার সঙ্গে এবং নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে দায়িত্বপালন করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন দেশপ্রেমের অভিব্যক্তি।
তিনি বলেন, উপজেলায় নির্বাচন উপলক্ষে কর্মসূচীর প্রত্যেকটি আলোচ্য বিষয় গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে কারো অস্পষ্টতা থাকলে তা নিরসন করা বাঞ্ছনীয়। কোনো বিষয়ে যদি কারো বিভ্রান্তি থাকে, তাহলে যাদের প্রশিক্ষণ দেবেন, তাদের মধ্যে সেই বিভ্রান্তি সঞ্চারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থা কোনভাবেই কাম্য নয়।
অনুষ্ঠানে ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেন, যেসব এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে প্রতীয়মান হবে কমিশনের কাছে, সেসব জেলার উপজেলা পরিষদে আগে ভোটগ্রহণ করা হবে। ময়মনসিংহ ও পার্বত্য তিন জেলায় একত্রে নির্বাচন করা হবে। তিনি আরও বলেন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে না। শুধু চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে হবে। একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। এ জন্য দল থেকে একজনকে নোমিনেশন দিলেও দলের বাইরে থেকে অনেকেই কিন্তু নির্বাচন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করবে। ভাইস-চেয়ারম্যান অনেকটা ওপেন। স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান এমনকি ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে যাবে। এ জন্য এবারের নির্বাচনটা কিন্তু চ্যালেঞ্জিং হবে এবং খুব কেয়ারফুল থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সদর উপজেলা পরিষদে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। সদর উপজেলার প্রত্যেকটা কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। উপজেলায় ইভিএম বিধিমালা ইতিমধ্যে কমিশন অনুমোদন করেছে। শিগগিরই এটা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ওখান থেকে যদি ভেটিং হয়ে আসে। তাহলে এটা ব্যবহারে আমরা আইনগত ভিত্তি পেয়ে যাব। বাকি সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভাতেও ইভিএম ব্যবহার করার পরিকল্পনা নির্বাচন কমিশনের আছে।