স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর আম্বরখানা এলাকায় ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামালকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। আর কিলিং মিশনে অংশ নেন ৫ যুবক। ময়না তদন্তকালে বিএনপি নেতা আফম কামালের শরীরে ২৩টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রায় সবক’টি আঘাতের চিহ্নই গুরুতর। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেছেন বিএনপি নেতা আফম কামাল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, নিহত বিএনপি নেতার সঙ্গে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটতে পারে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলাও হয়েছিল। ওই মামলার ৪ নম্বর আসামি ছিলেন আ ফ ম কামাল। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আ ফ ম কামাল প্রাইভেটকারে চালকের আসনে ছিলেন। তাকে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেল অনুসরণ করছিল। তাতে ছিলেন ৩ যুবক। এদিকে ঘটনাস্থলে আসামাত্র আরেকটি মোটরসাইকেলে করে ২ যুবক সামনে থেকে কামালের গাড়ির গতিরোধ করেন। পরে তার বুকে ও হাতে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা সটকে পড়ে। এরপর গিয়ারে পা পড়া অবস্থায় সিটে পড়েছিলেন কামাল। ফলে গাড়িটি সামনের চাকা মোটরসাইকেলের ওপরে উঠে যায়। প্রথমে লোকজন এটিকে দুর্ঘটনা মনে করলেও পরে বুঝতে পারে যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরপর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী আরও শেখ বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এরইমধ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে এক জনকে আটক করা হয়েছে। তাছাড়া নগরীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বাড়তি নিরাপত্তায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ মাইনুল জাকির বলেন, অভ্যন্তরীণ পূর্ব বিরোধের জের ধরে আ ফ ম কামালকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছি। যদিও বিএনপির নেতারা বলছেন, আ ফ ম কামালকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কামালের মৃত্যুর খবর পেয়েই রবিবার রাতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জড়ো হন। খুনের ঘটনায় নেতা-কর্মীরা রাত পৌনে ১১টার দিকে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভাস্থলে ভাঙচুর করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়দিন আগে বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে নেতাকর্মীরা সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমের বাসায় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে আ ফ ম কামালও ছিলেন। বৈঠক থেকে বিএনপির গণসমাবেশের বিষয় নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে বৈঠক অসমাপ্ত রেখে উঠে আসেন আ ফ ম কামালসহ কয়েকজন নেতাকর্মী বেরিয়ে আসেন। এ ঘটনার কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এছাড়া আ ফ ম কামাল লাহিন এয়ার ইন্টারন্যাশনাল নামের রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে লোকজনকে বিদেশে পাঠানোর কাজেও জড়িত ছিলেন। সেখানে টাকা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে এক ব্যক্তির ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন কামালও। এ ঘটনায় গত ২১ অক্টোবর আজিজুর রহমান সম্রাট নামে লামাকাজির এক ব্যক্তি কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার এজাহার নামীয় ৪ নম্বর আসামি ছিলেন আ ফ ম কামাল। মামলায় এজাহারনামীয় ১০জনসহ অজ্ঞাত আরো ৫/৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এই ঘটনার জেরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে কামাল হত্যার প্রায় ২৪ ঘণ্টা হতে চললেও হলেও মূল আসামী কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে পুলিশ বলছে- রাতের মধ্যেই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে তারা।