সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে :
গোলাপগঞ্জে গোয়াইনঘাট জাফলংয়ের এক কিশোরকে শারিরিক নির্যাতন থেকে উদ্ধার করে দুই যুবককে আটকের পর পুলিশে দিয়েছে জনতা। আটককৃতরা হলেন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার রণকেলী উত্তর গ্রামের আয়লাফ আহমদ চৌধুরীর ছেলে নয়ন আহমদ চৌধুরী ওরফে আবদাল মুহিদ (২৯) ও একই এলাকার মুসলেহ উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে সিপার আহমদ চৌধুরী ওরফে বাবু (৩৮)। নির্যাতনের শিকার ওই কিশোর গোয়াইনঘাট থানার জাফলং কালীনগর গ্রামের মোতালেব মিয়ার ছেলে শাহিন আহমদ (১৫)। ওই কিশোর স্থানীয় লোকদের জানায় শিপন আহমদ নামে তার এক বন্ধুকে নিয়ে নিজ মোটরসাইকেল যোগে বিয়ানীবাজারের রামদা মোহাম্মদপুর গ্রামে যায়। সেখান থেকে শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) রাত ১২টায় আমনিয়া বাজার হয়ে ফেরার পথে একটি মাদ্রাসার সামনে পৌছার পর রাস্তা হারিয়ে ফেলে। এ সময় ওই মাদ্রাসার সামনে থাকা নয়ন আহমদ চৌধুরী ও বাবুর কাছে সিলেটের রাস্তা জানতে চায়। এ সময় তারা দুই বন্ধু রাস্তা দেখিয়ে দেওয়ার কথা বলে একটি টিলার নির্জন এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে তারা মদ পান ও নেশা করায় জোরপূর্বক। পরে রাতভর তারা তিন বন্ধু মিলে তাকে শারিরিক নির্যাতন করে। ভোরবেলা আটককৃত দুইজন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার উত্তরবাজারের একটি মার্কেটের শাহ্ পুতলা টেলিকম নামে একটি দোকানে নিয়ে যায়। সকাল ১০টায় সেখানেও তারা শারীরিক নির্যাতন করার চেষ্টা করে। এ সময় আটককৃত বাবু ওই কিশোরের টিভিএস মোটরসাইকেলের চাবি চাইলে সে চাবি দিতে অপরগতা প্রকাশ করে। এ সময় তারা দুজন তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে চাবি নেওয়ার চেষ্টা করলে তার আর্ত চিৎকার শুনে ওই মার্কেটের সামনে থাকা স্থানীয় রিক্সা চালক অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা নিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। পরে স্থানীয় কয়েকজনকে ঘটনার বর্ণনা দেয়। বিষয়টি জানার পর ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা আটককৃতদের আটকে রাখেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলেও বিক্ষুব্ধ জনতা নির্যাতনকারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়নি। পরে গোলাপগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলেকুজ্জামান আলেখের সহযোগিতায় গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এএসআই বাপ্পী রুদ্র পাল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে ওই কিশোরকে নির্যাতনকারী দুইজনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। স্থানীয় সরস্বতি রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে রিক্সা চালক সুফিয়ানের সাথে আলাপ করা হলে সে উপরোক্ত বিষয়টি তুলে ধরে বলে আমি না থাকলে তারা ওই ছেলেটিকে শ^াসরুদ্ধ করে মেরে ফেলতো। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার মোবাইলটি হারিয়েছি। বিষয়টি জানতে গোলাপগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলেকুজ্জামান আলেখের সাথে আলাপ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারি ওই কিশোরকে জোরপূর্ব তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় তাকে প্রায় অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সরস্বতি এলাকার একটি বাড়িতে রাখা হয়। পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১নং ওয়ার্ডের ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য নাজিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,স্থানীয়রা বিষয়টি জানতে পেরে শতশত লোক আটককৃতদের গণপিটুনি দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেই। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে যাওয়া এএসআই বাপ্পী রুদ্র পালের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন,আটককৃতদের টার্গেট ছিল ওই কিশোরের মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়া। তবে নির্যাতনের বিষয়টি পরে জানতে পারবেন। এব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি একেএম ফজলুল হক শিবলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন,আমি সারাদিন বাহিরে ছিলাম। বিষয়টি জানতে পেরেছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।