কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির সীমান্তবর্তী সুনাতনপুঞ্জি গ্রামে গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে ভারতীয় চোরাই পণ্য আটকের সময় চোরাকারবারী ও বিজিবির মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষের ঘটনায় বিজিবির গুলিতে নিহত কিশোর সিরাজের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সিরাজে লাশের ময়নাতদন্তের পর গতকাল মঙ্গলবার বাদ মাগরিব শতশত মানুষের অংশ গ্রহণে নিজ গ্রামের মসজিদ মাঠে নামাজে জানাযা শেষে গ্রামের কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। সিরাজের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসার পর স্বজনদের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠে। শতশত নারী পুরুষ সিরাজের লাশ দেখার জন্য তার বাড়িতে ভিড় করেন। জানাযা কালে এলাকাবাসী এ হত্যা কান্ডের তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান। সোমবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে নিয়ে আসা বাংলাদেশর সুনাতনপুঞ্জি এলাকায় চোরাকারবারীদের বিদেশী সিগারেটের চালান আটকের সময় চোরা কারবারী চক্র কর্তৃক বিজিবির উপর হামলাকালে বিজিবির গুলিতে সুনাতনপুঞ্জি গ্রামের আব্দুল মুতলিবের পুত্র ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিরাজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর সুরইঘাট বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) নুনু মিয়া জানান, ঘটনায় বিজিবি বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার কানাইঘাট থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে বিজিবি এসল্ট মামলা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দু’টি পৃথক মামলা দায়ের করেন, যার নং বিশেষ ক্ষমতা মামলা নং- ১৬, বিজিবি এসল্ট নং- ১৭ তাং ২২/০১/২০১৯ ইং। তবে নিহত কিশোর সিরাজের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে ওসি তদন্ত জানান। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায় বিজিবি’র গুলিতে নিহত সিরাজ ৪ ভাই ৫ বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল। সে স্থানীয় সোনাতনপুঞ্জি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। সরেজমিনে গিয়ে তার বড় ভাই ইসলাম উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন বিজিবি’র গুলিতে তার ভাই মারা গেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার ভাই হত্যার বিচার দাবী করেন তিনি। এ সময় প্রতিবেশী সামছুল হক, আব্দুল হান্নান, আব্দুল মালিক, ফারুক আহমদ ও কুতুব উদ্দিন জানান এ ঘটনায় নিহত কিশোর ছিল একেবারে নির্দোষ। ঐদিন সন্ধ্যায় সে স্থানীয় সুরইঘাট বাজার থেকে বাজারের খরচ করে বাড়িতে ফিরছিল, কিন্তু পথিমধ্যে বিজিবি’র গুলিতে সে নিহত হয়। নিহত সিরাজের সাথে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী কিশোর রেজওয়ান ও শরীফ উদ্দিন জানান তারা এক সাথে বাজার থেকে বাড়িতে ফিরছিল। পথিমধ্যে গুলির শব্দ শুনার সাথে সাথে সিরাজ রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এদিকে চোরাচালানী পণ্য সামগ্রী আটক কালে চোরাকারবারী ও বিজিবির মধ্যে সৃষ্ট ঘটনায় সিরাজ উদ্দিন গুলিতে নিহত ও চোরাকারবারীদের হাতে ৩ বিজিবি সদস্য আহতের ঘটনায় বিজিবির সিলেটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা গতকাল মঙ্গলবার হত্যা কান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় লোক জনদের সাথে কথা বলেন এবং তদন্ত পূর্বক বিজিবির উপর হামলাকারী চোরাকারবারীদের চিহ্নিত করা সহ এবং গুলিতে নিহত সিরাজের হত্যার বিষয় উদঘাটনের আশ^াস প্রদান করেন বলে জানা গেছে। এর আগে সোমবার রাতে কানাইঘাট থানার ওসি মোঃ আব্দুল আহাদ ও ওসি (তদন্ত) নুনু মিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করেন। এছাড়া কিশোর সিরাজ বিজিবি’র গুলিতে নিহতের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা ঘটনার একটি প্রতিবেদন সিলেটের জেলা প্রশাসক সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছেন।