কাজিরবাজার ডেস্ক :
জাতীয় নির্বাচনের পর আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকেও গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে চতুর্থ বারের মতো নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ। আগে থেকেই প্রতিটি উপজেলাতে একক চেয়ারম্যান প্রার্থী নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে তৃণমূলে চিঠিও দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলে পাঠানো চিঠিতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সর্বোচ্চ তিন জনের নাম কেন্দ্রে পাঠাতে বলা হয়েছে। এছাড়া যেসব মহানগর, জেলা-উপজেলায় দলের নিজস্ব জমি রয়েছে অথচ কার্যালয় নেই, সেখানে দলীয় খরচে স্থায়ী দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। আর নিজস্ব জমি না থাকলে দ্রুত ক্রয় করে সেখানে দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তৃণমূলের নেতাদের।
সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিটি ডাকযোগে দেশের প্রতিটি মহানগর, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবরে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করায় তৃণমূল নেতাদের ধন্যবাদও জানানো হয়।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর শুধু দলকে শক্তিশালী করা নয়, সেইসঙ্গে আগামীতে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। অতীতের নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে এখন থেকে মাঠ জরিপের কাজ শেষ করার কাজে হাত দিয়েছে দলটি। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত থাকলেও মাঠ জরিপের ফলাফলও একক প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে মূল ফ্যাক্টর হবে।
অতীতে শুধু দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে উপজেলা, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অনেক স্থানেই দলের প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ ঘটেছে। এতে করে সেসব এলাকাতে দলের মধ্যে বিভেদ, দ্বন্দ্বও প্রকট হয়ে দেখা দেয়। বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার আগে থেকেই শক্ত অবস্থানে থেকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে চান আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সেক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাৎক্ষণিক দল থেকে বহিষ্কার ছাড়াও আর কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে দলটিতে। আর এ কারণেই তৃণমূল নেতাদের চিঠি দিয়ে বর্ধিত সভার মাধ্যমে একেকটি উপজেলায় দলের তিন জন প্রার্থীকে মনোনীত করে তা কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, দলের কার্যালয় সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে দলের সব জেলা, উপজেলা, মহানগর, থানা ও পৌর কমিটির কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী যেসব জেলা, মহানগর, উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নিজস্ব জমি রয়েছে কিন্তু কার্যালয় নেই, সেসব এলাকায় দলীয় খরচে কার্যালয় তৈরি করতে হবে। আর যেসব এলাকায় দলের নিজস্ব জমি নেই, সেখানে জমি কিনতে বলা হয়েছে। জেলা, উপজেলা, মহানগর, থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের কার্যালয় আছে কি না, থাকলে জমির মালিকানাসহ ঠিকানা ও ফোন নম্বর দিতেও বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে দলের অস্থায়ী কার্যালয় থাকলে তার ঠিকানা ও ফোন নম্বর, অস্থায়ী কার্যালয় (ভাড়া নেয়া) থাকলে তার বিবরণসহ স্থায়ী-অস্থায়ী কার্যালয়ের কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ, ফ্যাক্স ও টেলিফোন সম্পর্কিত তথ্যও চাওয়া হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার নিরঙ্কুশ জয়ের জন্য চিঠির শুরুতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এরপর আগামী মার্চে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও একইভাবে দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনার আহ্বান জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। এ লক্ষ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে বর্ধিত সভা করে একক বা সর্বোচ্চ তিনজন প্রার্থীর নাম জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠাতে বলা বলেছে। জেলা আওয়ামী লীগকে সংশ্লিষ্ট জেলার সব উপজেলার প্রার্থীর তালিকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডাকযোগে বা সরাসরি কোন মাধ্যমে পৌঁছানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী মার্চ থেকে কয়েক ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে দলের মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে লবিং-তদ্বির শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘সুনজরে’ আসতে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখন ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কয়েকটি মানদন্ডের ভিত্তিতেই দলের মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।