লোভাছড়া কোয়ারীতে পাথর খেকোদের ধ্বংসলীলা অব্যাহত ॥ বাঁধ অপসারণ নিয়ে বিজিবির সাথে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা

117
কানাইঘাটের পাথর কোয়ারীতে লোভা নদীর পানির গতিপথ বন্ধ করে দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে ও নদীর গতিপথে বাঁধ দেওয়ায় ডুবে গেছে বাঁশের সাঁকো ঝুঁকিতে পারাপার হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা।

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে পাথর খেকো চক্রের ধ্বংসলীলা চলছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কন্যা লোভা নদীর পানি প্রবাহের গতিপথ বন্ধ করে দিয়ে সেখানে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ ভয়াবহ গর্ত তৈরী করে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এসব অবৈধ এবং মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পাথরের গর্তের মালিকদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পাথর কোয়ারীতে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে এলাকার পরিবেশকে ক্ষতবিক্ষত করে যাচ্ছে। কোয়ারীতে আধিপত্য ও পাথরের গর্তের মালিকানা এবং দখল নিয়ে মারামরিসহ কোটি কোটি টাকার লীলা খেলা চলছে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের নাম ভাঙ্গিয়ে পাথর কোয়ারীর নিয়ন্ত্রণকারী চক্র নামে বেনামে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে যা সরজমিনে কোয়ারী এলকা ঘুরে জানা গেছে। সর্বশেষ গত শনিবার সকাল ১১ টার দিকে তেরহালী সাউদগ্রাম ও কান্দলা নামক স্থানে লোভা নদীর মধ্যখানে পাথরে গর্ত করে পানি চলাচলে প্রতিন্ধকতা সৃষ্টি নিয়ে বিজিবি জোয়ানদের সাথে পাথর শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, কোয়ারীর তেরহালী নামক স্থানে কিছু প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ী ফেলোডার, স্কেভেটর দ্বারা লোভা নদীর মধ্যখানের চারিদিকে বড়বড় গর্ত করে বালুমাটি তুলে বাঁধ তৈরী করে পানি চলাচলের মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছিল। বিশাল কয়েকটি বড় গভীর গর্ত তৈরী করে সেখান থেকে পাথর উত্তোলন করায় নদীর পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোভা নদীর মূল উৎপত্তিস্থল ভারত থেকে নেমে আসা পানি উজানে আটকা পড়ে। এতে করে কোয়ারীর মুলাগুল কান্দলা নয়া বাজার পাশে লোভা নদীতে স্কুলের শিক্ষার্থী ও জনসাধারনের পারাপারে বাঁশের সাঁকোর দুপারের অংশ তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় মুলাগুল হারিছ চৌধুরী একাডেমীর শিক্ষার্থী, মহিলা, শিশুসহ জনসাধারনের সাকু দিয়ে চলাচলে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। এতে শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন থেকে ফুঁসে ওঠেন। তারা নদীর পানির প্রবাহের পথে প্রবিন্ধকতা দূর করতে গত শনিবার সকাল ৯ টার দিকে হারিছ চৌধুরী একাডেমীর বেশ কিছু শিক্ষার্থী স্থানীয় লোভা ছড়া বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে বিজিবি’র কর্মকর্তাদের কাছে তাদের অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের আশ^াস দিয়ে ঘন্টা খানেক পরে বিজিবি সদস্যরা কোয়ারীর তেরহালী নামক স্থানে পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সেখানে যান এবং মাটিবালুর বাঁধ কেটে দিলে কান্দলা পাড়ের ৩/৪টি পাথর উত্তোলনের গর্ত পানিতে ডুবে গিয়ে ১০/১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ সময় সেখানে কান্দলা পাড়ের বেশ কিছু পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা তাদের গর্ত ডুবিয়ে দিলেও একেবারে পাশে অবস্থিত পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ঠিকারী সাউদ গ্রাম পাড়ের প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ী মাতাই, নজমুল, নুরুল, নজরুল, গিয়াস ও জয়নালের পাথরের গর্তের বাঁধ কেন অপসারন করা হচ্ছে না এ নিয়ে বিজিবি জোয়ানদের সাথে কথা কাটাকটিতে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হয়ে সাউদ গ্রামের পারের পাথরের গর্তের বাঁধ অপসারণের দাবী জানায় বিজিবি’র কাছে। এতে সেখানে আবারও উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ছাত্রদের সাথে বেশ কিছু পাথর শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা যোগ দিয়ে বিজিবি’র দিকে কয়েকটি ঢিল ছুঁড়ে মারলে বিজিবি জোয়ানরা লাঠি চার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এ সময় শিক্ষার্থী ও শ্রমিকরা বিজিবি’র দাওয়া খেয়ে কয়েক জন লাঠি চার্জে আহত হন। অনেক শিক্ষার্থী তাড়া খেয়ে পাথরের গর্তে পড়ে কান্নাকাটি করে। আহতদের মধ্যে দু’জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অনেকে জানান, মাতাই গংদের কয়েকটি গর্তের কারণে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হলেও তাদের পাথরের গর্ত বহাল তবিয়তে রয়েছে। হারিছ চৌধুরী একাডেমীর প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জানান, তিনি ঘটনার সময় স্কুলে ছিলেন না। ছাত্ররা বিজিবি সদস্যদের কাছে পারাপারের সাঁকো ডুবে যাওয়ায় স্কুলে আসতে তাদের দুর্ভোগ লাগবের জন্য বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে ছিল। পরে বাঁধ অপসারণ নিয়ে সৃষ্ট ঘটনায় বিজিবি তাদের লাঠি চার্জ করেছে বলে শিক্ষার্থীরা তাকে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে লোভাছড়া ক্যাম্পের বিজিবি’র নায়েক সুবেদার আব্দুল কাদিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হারিছ চৌধুরী একাডেমীর অনেক শিক্ষার্থী সকালে আমাদের ক্যাম্পে এসে তেরহালী এলাকায় পাথর ব্যবসায়ীরা লোভা নদীর পানি প্রবাহের গতিপথ বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ায় বাঁশের সাঁকো ডুবে যাওয়ায় তারা স্কুলে যেতে পারছেন না বলে জানায়। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে বিজিবির সদস্যরা পানি প্রবাহের মূল গতিপথ থেকে বালুমাটির বাঁধ অপসারণ করেন। এতে পানি প্রবাহের পথ সুগম হয়। এ সময় কিছু পাথর ব্যবসায়ী ও পাথর শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছুড়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উস্কানী দিয়ে বিজিবির সাথে লেলিয়ে দিতে চেষ্টা করলে আমরা পরিস্থিতি শান্ত করি। শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে চলে যায়। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসিকান্ত হাজং জানান, লোভাছড়া কোয়ারীতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি বিভিন্ন সময় অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে। গত শনিবার বাঁধ অপসারণ নিয়ে কিছু পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা ছাত্রদের ভুল বুঝিয়ে বিজিবি’র সাথে জামেলা সৃষ্টি করতে চেয়ে ছিল। পরে বিজিবি পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। প্রসঙ্গত যে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপশি কোয়ারীতে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে বিজিবির জোয়ানরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন বলে সচেতন মহল জানিয়েছেন।