কাজিরবাজার ডেস্ক :
অপেক্ষার পালা শেষ। আগামীকাল সোমবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বঙ্গভবনে শপথ নেবেন ভূমিধস বিজয়ী আওয়ামী লীগের নতুন মন্ত্রিসভা। পুরো দেশবাসীর দৃষ্টি এখন গণভবনে। ইতিহাসের নজির সৃষ্টি করে টানা তিনবার বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী পাঁচ বছরে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে কেমন মন্ত্রিসভা আনছেন, তা দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায় পুরো দেশের মানুষ। সবাই মন্ত্রী হতে চান। এত চাহিদার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কাকে কাকে বেছে নেবেন, আর কাকেই বা বাদ দেবেন, এ নিয়ে আলোচনার যেন শেষ নেই। অন্যদিকে বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যেমন অধিক আগ্রহে প্রতীক্ষা করছেন কখন আসবে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে শপথ নেয়ার সেই কাক্সিক্ষত টেলিফোন। তেমনি মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা সাবেক মন্ত্রী ও মনোনয়নবঞ্চিত নেতারাও অপেক্ষা করছেন হয়ত এবার তাদের ভাগ্য খুলবে।
আগামীকাল সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় শপথ নেবেন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা। বঙ্গভবনে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কাছে রেকর্ডসংখ্যক চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর সহকর্মী হিসেবে বেছে নেয়া পূর্ণমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা একে একে শপথ নেবেন রাষ্ট্রপতির কাছে। শপথের জন্য পুরো প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে বঙ্গভবন।
মন্ত্রি পরিষদ বিভাগও মন্ত্রী সভার শপথের কাগজপত্র তৈরির কাজও শেষ করেছে। শনিবার সরকারী ছুটির দিনও শপথ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে এ বিভাগের সকল কর্মকর্তাবৃন্দ। কাল সোমবার সকাল থেকেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় স্থান পাওয়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের কাছে শপথ নেয়ার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হবে। পাঠানো হবে মন্ত্রীদের ব্যবহারের জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড লাগানো সরকারী গাড়ি। শপথ গ্রহণ শেষে পতাকা উড়িয়ে বঙ্গভবন থেকে বের হবেন ভাগ্যবান মন্ত্রীরা। প্রবীণের অভিজ্ঞতা এবং নবীনের প্রতিভার সংমিশ্রণ ঘটিয়েই চমক সৃষ্টির মতো করা মন্ত্রীপরিষদ জাতিকে উপহার দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এবার মহাজোটের সরকার নয়, চৌদ্দ দলের সরকার গঠন করছেন তিনি। কেননা জাতীয় পার্টি দশম জাতীয় সংসদের মতো সরকারের মন্ত্রিসভায় কেউ থাকছেন না। দ্বিতীয়বারের মতো এবার দলটি স্বাধীন বিরোধী দল হিসেবেই জাতীয় সংসদে দেখা যাবে।
দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চৌদ্দ দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভার আকার এবার একটু বাড়তে পারে। এ নিয়ে দলের হাতে গোনা কিছু সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথাও বলছেন ভাবী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশবাসীর ঐতিহাসিক গণরায়ের প্রতি সম্মান রেখে প্রবীণ নেতাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে নবীনদের মেধার সমন্বয় ঘটিয়েই বঙ্গবন্ধুর কন্যা তৈরি করছেন নতুন মন্ত্রিসভা। এক্ষেত্রে কিছু সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যেমন বাদ পড়ার আভাস পাওয়া গেছে, তেমনি চমক দেয়ার মতো বেশকিছু নবীন সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন। তবে দলটির নানা সূত্রই আভাস দিয়েছেন, দলের প্রবীণ ও সিনিয়র মন্ত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই পুনরায় মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন। তবে কয়েকজনের মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করা হতে পারে।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় বড় চমক থাকছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সেই আভাসই দিয়েছেন। চমকের একটি অংশ হচ্ছে দফতর বদল; অপর অংশ হচ্ছে বাদ পড়া এবং নতুন অন্তর্ভুক্তি। দশম সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভাও এ ধরনের চমক ছিল। গত পাঁচ কিংবা দশ বছরে যেসব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর ‘পারফরম্যান্স’ সন্তোষজনক নয় তাদের মধ্যে কয়েকজনের দফতর বদল এবং কয়েকজনকে বাদ দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে টানা তিন থেকে চারবার সংসদ সদস্য হয়েও মন্ত্রী হতে পারেননি কিংবা নবম জাতীয় সংসদে মন্ত্রিত্ব পেলেও দশম জাতীয় নির্বাচনের পর মন্ত্রিত্ব হারান- এমন অনেককেই এবার নতুন মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে। এছাড়া তরুণদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেও চমক দেখাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।