কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট উপজেলায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক সহ এমপিওভুক্ত মাদরাসার প্রায় ৩ শতাধিক চাকুরীজীবীকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বাদ পড়া চাকুরীজীবীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করলেও কেউ প্রকাশ্যে কোন ধরনের কথাবার্তা বলছেন না। অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় অভিজ্ঞদের নির্বাচনী ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে এমন গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার কানাইঘাটে নির্বাচনী দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং, পোলিংদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে শতাধিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক অভিজ্ঞ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসহ বেশ কয়েক জন বিভিন্ন দপ্তরের সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী, উজেলার সকল এমপিওভুক্ত মাদরাসার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণের জন্য কোন চিঠি বা মোবাইল ফোনে ডাকা হয়নি।
জানা যায়, সকল সরকারী দপ্তরের কর্মকর্ত, কর্মচারী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের তালিকা পূর্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার তানিয়া সুলতানার কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় আ’লীগের কয়েক জন প্রভাবশালী নেতা নির্বাচনে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী করা হবেন এর একটি তালিকা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে জমা করেন। তালিকায় কোন কোন সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক বিএনপি ও জামাতের সমর্থক রয়েছেন তাদের তালিকা করে ও সকল এমপিওভুক্ত মাদরাসার শিক্ষক এবং ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নির্বাচনের দায়িত্ব না দেওয়ার জন্য আরো একটি তালিকা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে প্রেরণও করেন তারা। সে আলোকে প্রায় শতাধিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের আরো প্রায় শতাধিক এবং ৩৫/৪০ জন সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী ও সকল এমপিওভুক্ত মাদরাসার শিক্ষক এবং ইসলামী ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা কর্মচারীকে নির্বাচনী দায়িত্বে রাখা হয়নি এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাদ পড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ২০/২৫ বছর ধরে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সকল নির্বাচনে তারা নিরপেক্ষ ভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেলেন কিন্তু এই প্রথম তাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এতে করে তারা সামাজিক ভাবে চরম হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন। এদিকে আ’লীগ নেতৃবৃন্দের নিয়ে প্রিসাইডিং সহ নির্বাচনে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রর দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা, কর্মচারীদের রাজনৈতিক ইতিহাস খোঁজে খোঁজে নিয়োগ এবং বারবার বলার পরও নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিংদের তালিকা হস্তান্তর না করে গোপন রাখার অভিযোগ আনেন সিলেট-৫ আসনের ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী মাওঃ ওবায়দুল্লাহ ফারুকের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী মামুনুর রশীদ মামুন। তিনি গত ২০ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে এসব কথা উল্লেখ করেছেন। ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী মাওঃ ওবায়দুল্লাহ ফারুকের অভিযোগ সরকারী চাকুরীজীবী ও যেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যুগযুগ ধরে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছিলেন আজ তাদের দলীয় পরিচয় খোঁজা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। কানাইঘাটে দলীয় পরিচয়ে মিথ্যা অপবাদে প্রায় ৪শত জনকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে জনরায় আওয়ামীলীগের পক্ষে নয় জেনে সরকারী দলের প্রেক্সিপশন অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার তানিয়া সুলতানা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে ৮০ ভাগ আ’লীগ সমর্থিতদের প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং পোলিং নিয়োগ করে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের পাঁয়তারা করে যাচ্ছেন। তিনি এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও জেলা রিটার্নিং অফিসারের বরাবরে অভিযোগ দিবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী নির্বাচন রিটার্নিং অফিসার তানিয়া সুলতানার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সরকারী চাকুরীজীবী সহ সবাইকে নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। নামের তালিকা বেশি হওয়ায় অনেকে বাদ পড়েছেন। অনেক সরকারী কর্মকর্ত, কর্মচারী ও শিক্ষকরা বাদ পড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকলের নামের তালিকা আমার কাছে রয়েছে, নির্বাচন আগ পর্যন্ত তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া যায় কি না তা বিবেচনা করা হবে। রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা ও ক্ষমতাসীন দলের নামের তালিকা অনুযায়ী নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের তালিকা করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।