সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল শনিবার সিলেট সফরে আসছেন। নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে কেন্দ্র করে সিলেট আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
ওইদিন শেখ হাসিনা সিলেট পৌছে ওলিকূল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.), শাহপরাণ (রহ.) ও গাজী বোরহান উদ্দিনসহ (রহ.) ৩ ওলির মাজার জিয়ারত শেষে দুপুরে নগরীর ঐতিহাসিক আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সিলেট আওয়ামীলীগের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। জনসভার মঞ্চ তৈরীর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভায় আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
এদিকে এই জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার জন্য দফায় দফায় বেঠক হচ্ছে বলে মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারা জানিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন চৌহাট্টা আলিয়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়, জনসভার জন্য মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে মাইক লাগানোর। ময়দানের ক্রটি সাঁরানো হচ্ছে রাস্তার পিচ ঠিক করার গাড়ি দিয়ে।
মাঠের প্যান্ডেলের দায়িত্ব পাওয়া চলন্তিকা ডেকোরেটরের স্বত্ত্বাধিকারী বিভাষ শ্যাম যাদন জানান, মঞ্চ ও মাঠের সাজসজ্জার দায়িত্ব আমার প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। গত সোমবার সকালে নেতারা মাঠে ডেকে নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। মূল মঞ্চ ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের করা হবে। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে কোনো তোরণ নির্মাণ করা হবেনা বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, জিয়ারতের পর পরই নেত্রী জনসভা মঞ্চে একে একে পরিচয় করিয়ে দিবেন সিলেট বিভাগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীদের। সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তোলে ধরে সিলেটবাসীর কাছে আবারো ভোট চাইবেন। দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীও তাকিয়ে আছে দেশের ভিআইপি ও সর্বোচ্চ মর্যাদার সিলেট-১ আসনের দিকে।। কাঁকতালীয়ভাবে স্বাধীনতার পর থেকে এ আসন থেকে বিজয়ীরা সরকার গঠন করে আসছেন। আর ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি ধন্য সে আসনে সব দল হেভিয়েট প্রার্থী দেয়। যে কারণে যতসব জল্পনাকল্পনা সিলেট-১ আসনকে ঘিরে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভায় জনতার ঢল নামার আশঙ্কায় আলিয়া মাঠে জায়গা সংকুলান নিয়ে টেনশনে আছেন আয়োজকরা। তাদের মতে, দলীয় প্রধানের উপস্থিতিতে সিলেট বিভাগে এটা যেহেতু একমাত্র জনসভা, তাই দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বত্রের জনতার ঢল নামবে। জনসভা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করবে আওয়ামী লীগ। এছাড়া জনসভা সফল করতে কয়েক দফায় বৈঠকে হয় সিলেট বিভাগের দায়িত্বশীল নেতাদের মধ্যে। দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষে সিলেট বিভাগীয় আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি সভা করে হাফিজ কমপ্লেক্সে গত রবিবার রাতে। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিনের পরিচালনায় সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সহ-সভাপতি এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, মহানগ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, আওয়ামী লীগ নেতা আশফাক আহমদ, মাসুক উদ্দিন আহমেদ, শাহ ফরিদ, হাজী সিরাজুল ইসলাম, এডভোকেট রাজ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, সিলেট বিভাগে দলীয় প্রধানের নির্বাচনপূর্ব একমাত্র জনসভা এটি। তাই জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে এটা নিশ্চিত। জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন জানান, এবারের জনসভা অতীতের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। নির্বাচনী উৎসবের আমেজে অনুষ্ঠিতব্য জনসভায় পুরো সিলেট বিভাগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, জেলা, উপজেলার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা উপস্থিত হবেন। সিলেটের সর্ববৃহৎ আলিয়া মাঠে স্থান সংকুলান হবে বলে মনে হয় না। বিকল্প হিসেবে এর চেয়ে বড় কোনো মাঠও নেই। তাই টেনশনে আছি।
মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিলেট আগমন উপলক্ষে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সিলেট আলীয়ার মাঠে জনসভার প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। এরই অংশ হিসেবে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ পরিদর্শন করেছেন নেতারা। আমরা মনে করি এই জনসভা সিলেটের অতিতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে নেতাকর্মীসহ সর্বস্থরের জনসাধারণের উপস্তিতে জনসমুদ্রে পরিণত হবে। আমরা দফায় দফায় বৈঠক করে সব প্রস্তুতি নিচ্ছি।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন জানান, সিলেটে নির্বাচনী জনসভা উপলক্ষে দলীয় প্রধানের সফর সামনে রেখে কেন্দ্রের দুটি অগ্রবর্তী টিম সিলেট যাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, আজ শুক্রবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বে আরেকটি টিম সিলেটে যাবেন। এ সফর সম্পূর্ণ দলীয়, খোদ প্রধানমন্ত্রীসহ কেউই সরকারি ব্যয় করবেন না। যাতায়াতসহ সার্বিক ব্যয় দলীয় ও ব্যক্তিগতভাবে বহন করা হবে। কাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি সিলেটে আসবেন এবং প্রোগ্রাম শেষে ওই দিনই আবার ঢাকায় ফিরে যাবেন।
সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে নৌকার পক্ষে যে জনজোয়ার উঠেছে তাতে মনে হচ্ছে জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। জনসভা সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দলীয় দায়িত্বশীলরা বিষয়টি দেখছেন।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মূসা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সিলেট আগমকে কেন্দ্র করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। পোষাক পড়া ও সাদা পোষাকে প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার বিভিন্ন সংস্থার সদস্য নিরাপত্তার দায়ীত্বে নিয়োজিত থাকবেন। নিরাপত্তায় কোনো কমতি থাকবেনা।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি সিলেট সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের ৪ বছর পূর্ণ করে ৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে ওই সমাবেশে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।