কাজিরবাজার ডেস্ক :
সততা ও দৃঢ়তার সঙ্গে বিচারক ও আইনজীবীদের সম্মিলিতভাবে হয়রানিমুক্ত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এ প্রসঙ্গে একটি চীনা প্রবাদের কথা স্মরণ করিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আইনের আশ্রয় নেওয়ার অর্থ একটি বিড়ালের জন্য একটি গরু হারানো’- চীনা সেই প্রবাদের মতো যাতে বিচারপ্রার্থীদের অবস্থা না হয়, বিচারক ও আইনজীবীদের সম্মিলিতভাবে তা নিশ্চিত করতে হবে।
রবিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কিশোরগঞ্জের নবনির্মিত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধন এবং কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, আমি আশা করি এর মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী জনগণও আইনজীবীদের কাছ থেকে আরো উন্নত সেবা পাবেন। ‘একজন আইনবিদ প্রতিবেশী হিসেবে ভালো নয়’ ফ্রাংকলিনের এ কথা যেন মিথ্যা প্রমাণিত হয়। বিচারপ্রার্থী মানুষ আপনাদের কাছে আসে তাদের সমস্যার সমাধানে ও ন্যায়বিচার পেতে সহায়তার জন্য। তাই তারা যাতে কোনোভাবে কোনো ধরনের হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার না হন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচারের বাণী যাতে নীরবে-নিভৃতে না কাঁদে’, এ কথার পরিবর্তে ‘বিচারের বাণী বৃথা যাবে না’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে সততা ও দৃঢ়তার সঙ্গে বিচার বিভাগ সংবিধানকে সমুন্নত রাখবে-এটাই সবার প্রত্যাশা। মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুততম সময়ে রায় দেওয়ার উপায়ও বের করতে হবে।
আবদুল হামিদ বলেন, দেশে শুধু আইনের শাসন নয়, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুশাসন প্রতিষ্ঠাও সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুফল বাংলার প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। কোন বিচারপ্রার্থী যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যেমন বিচারকদের তেমনি আইনজীবী ও এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার আন্তরিক জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বিকল্প নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে বর্তমান সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও এজলাস সংকট নিরসনের পাশাপাশি মামলা ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দরিদ্র-অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সরকারিভাবে আইনি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি জেলা সদরে এবং সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গরিব ও অসহায় লোকজন আইনি সহায়তা পাচ্ছে।
বিচারিক কাজে সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতে সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচারিক কাজে সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে আজ কিশোরগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের উদ্বোধন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ৩১টি জেলায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন উদ্ধোধন করা হলো। আমার প্রত্যাশা, এ ভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে বিচারপ্রাপ্তির সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।