এহিয়া চৌধুরীকে মানছেন না আ’লীগসহ সাধারণ ভোটাররা

42

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
সিলেট-২ আসনে প্রার্থীদের ঢিলেঢালা প্রচারণায় জমছে না নির্বাচনী আমেজ, নড়ছে না চায়ের কাপও। এই আসনে মহাজাটের প্রার্থীর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। আর ধানের শীষের প্রার্থী নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস পতœী তাহসিনা রুশদীর লুনা। এখানে মহাজোট থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী না থাকায় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা দ্বিধা বিভক্ত রয়েছেন। তাই মহাজোটের প্রার্থী এহিয়া চৌধুরী এখনো আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছেন। এহিয়া চৌধুরীর দায়ের করা অভিযোগে বিএনপির প্রার্থীর প্রার্থীতা স্থগিত হওয়া এবং এহিয়া চৌধুরীর জন্য মহাজোট থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মানোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার কারণে এহিয়া চৌধুরী বিএনপি এবং আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের কাছে ভোটের মাঠে ‘খলনায়ক’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। সিলেট-২ আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন- জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টি থেকে বর্তমান সাংসদ ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। অবশেষে জোটগত কারণে জাতীয় পার্টির চাপাচাপিতে এই আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী। এতে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা চরম ক্ষুব্ধ হয়ে মহাজোট প্রার্থী এহিয়া চৌধুরীর ওপর অভিমান করে তারা প্রচারবিমুখ রয়েছেন। এ পর্যন্ত লাঙ্গল প্রতীকের প্রচারণায় আওয়ামীলীগের কোনো নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তাই চরম বিপাকে রয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী এহিয়া। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে-আওয়ামীলীগের কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী মাঠে ভিন্নপথ অবলম্বন করছেন। অভিমানী কর্মী-সমর্থকরা বিকল্প প্রার্থী নিয়ে ভাবছেন। ইতিমধ্যে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এহিয়া চৌধুরীকে নানা কটুক্তি ও বিকল্প প্রার্থীদের প্রতি সমর্থনের কথা জানান দিচ্ছেন। তাই মহাজোট প্রার্থীর বাইরেও অন্যান্য প্রার্থীকে নিয়ে এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। এছাড়া সাধারণ ভোটাররাও মহাজোটের প্রার্থী এহিয়া চৌধুরীকে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। এর কারণ হিসেবে অনেকেই অভিযোগের সুরে বলছেন- এহিয়া চৌধুরী এমপি হয়ে তাঁর অনুসারীদের নিয়ে উন্নয়নের নামে লুটপাটে মেতেছিলেন। এলাকায় উন্নয়নের প্রতিশ্র“তি দিয়ে তারা মানুষের কাছ থেকে বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এর বিপরীতে কাঙ্কিত উন্নয়নতো দূরের কথা বরং প্রদানকৃত অর্থ এখনো ফেরৎ দেয়া হয়নি বলে অনেকেই প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলেছেন। তৃণমূল আওয়ামীলীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, এহিয়া চৌধুরী বিগত দিনে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় ২ হাজার ভোট পাওয়ায় মনোনয়ন বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের আর্শিবাদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সুবাদে তিনি তাঁর নামের সাথে এমপি পদ যুক্ত করেছিলেন। তিনি এমপি হওয়ার পর জামায়াত-বিএনপির সাথে গোপন আতাত করে তাদের শেল্টারদাতা হয়ে লুটপাটের রাজনীতির কায়েম করে আওয়ামীলীগ তথা জননেত্রী শেখ হাসিনার নামে দর্নাম কুড়িয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে এমন হয়েছে যে- এহিয়া চৌধুরী তথা লাঙ্গল প্রতিকের নাম শুনলেই ভোটাররা খারাপ মন্তব্য করছেন, এমনকি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার মাইকের আওয়াজও সাধারণ ভোটারদের কাছেও বিরুপ লাগছে।
এদিকে ইলিয়াস পতœী তাহসিনা রুশদীর লুনা নির্বাচন করার লক্ষ্যে চলতি বছরের পহেলা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদ থেকেও পদত্যাগ করেন লুনা। তবে লুনার প্রার্থিতা নিয়ে আগে থেকে আশঙ্কায় ছিল বিএনপি তথা ইলিয়াস পরিবার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে বিএনপি- ঐক্যফ্রন্ট থেকে এই আসনে প্রার্থী হন তিনি। এরই মধ্যে এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এহিয়া চৌধুরীর দায়ের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ ডিসেম্বর ইলিয়াসপতœীর প্রার্থিতা স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। এতে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তারপরও ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থনে সর্বত্র চলছে মাইকিং আর উঠান বৈঠক। তাই তারা নির্বাচনী প্রচারণা থেকে পিছু হটেননি। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধারণা, আইনি লড়াইয়ে লুনা প্রার্থিতা ফিরে পাবেন। উচ্চ আদালতে লুনার প্রার্থীতা স্থগিতের পর নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর বৈধ্যতা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন ওঠেছে। প্রার্থীতা স্থগিতাদেশ প্রত্যহারের পূর্বে এভাবে নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়টি অতিরঞ্জিত আচরণ এবং আদালত অবমাননার শামিল বলে সচেতন মহল মনে করছেন। ওসমানীনগরে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ ও বিভেদ থাকায় এখানকার বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে লুনার প্রতি সমর্থন জানালেও ভিতরে-ভিতরে অন্যান্য প্রার্থীদের প্রতি তাদের গোপন সমর্থন ব্যক্ত রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা যাচ্ছে। আর এই বিরোধের কারণে ইলিয়াস নিখোঁজের আবেগকে কাজে লাগিয়ে বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেয়ার বিষয়টি ভেস্তে যেতে পারে বলে খোদ বিএনপির তৃণমূলে এমন গুঞ্জন রয়েছে।
এছাড়া সিলেট-২ আসনে জোট-মহাজাটের প্রার্থীর সাথে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামীলীগ ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান (ডাব), এনামুল হক সরদার (সিংহ), গণফোরামের মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য), খেলাফত মজলিসের মুনতাসির আলী (দেয়াল ঘড়ি), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মুশাহিদ খান (টেলিভিশন), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মনোয়ার হোসেন (আম), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আমির উদ্দিন (হাতপাখা)। তবে জোট-মহাজোটের প্রার্থী ব্যতিত অন্যান্য প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে টানতে হিমসিম খাচ্ছেন। কারণ ভোটাররা এসব প্রার্থীদের বসন্তের কোকিল হিসেবে-ই আখ্যায়িত করছেন। ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদাল মিয়া বলেন, মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে আওয়ামীলীগসহ সাধারণ ভোটারদের মধ্যে চরম অসন্তোষ রয়েছে। আমরা এই অসন্তোষকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু বলেন, মহাজোটের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পালনে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু বিগত ৫ বছরে এহিয়া চৌধুরীর নানামুখী বিতর্কিত কর্মকান্ডে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটাররা তাঁর প্রতি অনিহা দেখিয়ে আসছেন। এ লক্ষেণ্য রবিবার আমরা এহিয়া চৌধুরীর সমর্থনে সভা আহবান করেছিলাম। এতে এহিয়া চৌধুরীকে ভোট দেয়ার কথা বলায় তৃণমূল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন। এতে আমরাও বিব্রতরোধ করছি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়ার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে গতকাল বিকেলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে এহিয়া চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি আওয়ামীলীগ নেতাদের মান ভাঙাতে পারেননি। তিনি তাদের অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করছেন। ইলিয়াসপতœী তাহসিনা রুশদীর লুনার মুঠোফোনেও গতকাল বিকালে কল দেয়া হয়, তিনি কল রিসিভ করেননি। বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে মনোনয়নের বৈধ্যতা ফিরে পেতে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন মনোনয়ন ফিরে পেলে এই আসনে ধানের শীষের গণজোয়ার সৃষ্টি হবে।