ভোটের ৭ দিন আগে বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ॥ ২৮ ডিসেম্বর সকাল থেকে প্রচার ও সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা- প্রার্থীদের বৈধ অস্ত্র জমা দিতে হবে না- চার থানার ওসিসহ প্রত্যাহার ৬

221

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শেষ মুহূর্তে এসে বৈধ লাইসেন্সধারী ব্যক্তিতের অস্ত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সাত দিন আগে এ লাইসেন্স অস্ত্র জমা দিতে হবে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বৈধ অস্ত্র জমা দিতে হবে না। নির্বাচনী সহিংসতা এড়াতে কমিশন আগের সিদ্ধান্ত বদলে এ আদেশ জারি করতে যাচ্ছে।
একইভাবে সরকারি কর্মকর্তা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা অনুরুপ নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত বৈধ অস্ত্র জমা দেয়ার প্রয়োজন হবে কি হবে না; মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ইসিকে।।
বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। দু’ একদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বা পরিপত্র জারি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এতে ২৪ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনী ও ২০ ডিসেম্বর থেকে বিজিবি মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হবে।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে ফেসবুক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধে দু’টি কমিটি গঠন করেছে ইসি। এছাড়া ভোটগ্রহণের পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হচ্ছে। এছাড়া আগামী ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে সারাদেশে সব ধরনের প্রচার, সভা ও সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পরিপত্র জারি করতে যাচ্ছে কমিশন। এতে ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে মোটরসাইকেল ও ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে সকল প্রকার যানবাহন চলাচলের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। ইসির সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মোখলেসুর রহমান বলেন, প্রার্থী ছাড়া অন্যদের বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার বিষয়ে আমরা একটি চিঠি দেবো। ওই চিঠির আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
জানা গেছে, এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বৈধ অস্ত্র জমা নেবে না। তবে বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ থাকবে। প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বৈধ অস্ত্র রাখার বিষয়টি শিথিল থাকবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া চিঠির ভিত্তিতে দুয়েক দিনের মধ্যে সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব) অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
তবে ইসি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও ক্ষেত্রেবিশেষ সীমিত সময়ের জন্য অস্ত্র থানায় জমা নেয়ার বিষয়ে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনের ১৫দিন আগ থেকে ভোটের দুই দিন পর পর্যন্ত অথবা আলোচনা অনুসারে নির্ধারিত সময়ে বৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাচল করতে পারবে না। তবে অস্ত্র জমা নেয়ার বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো কর্মকর্তা আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারা অস্ত্রধারীর নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। তবে সম্প্রতি কমিশন প্রার্থী ও বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া অন্যদের বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ি, ২১ ডিসেম্বর থেকে পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত ১২দিনের জন্য লাইসেন্সধারীরা অস্ত্রসহ চলাচল করতে পারবেন না। আর নির্বাচনের সাত দিন আগে অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে বৈধ অস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানা বা ট্রেজারিতে জমা দিতে হবে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অস্ত্র জমা দেয়ার প্রয়োজন হবে না। একইভাবে সরকারি কর্মকর্তা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা অনুরুপ নিরাপত্তা কাজে ব্যবহৃত বৈধ অস্ত্র জমা দেয়ার আওতাভুক্ত হবে না।
আরও জানা গেছে, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বৈধ অস্ত্র জমা নেয়নি কমিশন। তবে এর আগের নির্বাচনে বৈধ অস্ত্র জমা নেয়া হয়েছিল।
চার থানার ওসি প্রত্যাহার :
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার ওসি কবির হোসেন, নোয়াখালির সোনাইমুড়ি থানার আবদুল মুজিদ, রমনা থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম ও ঠাকুরগাঁও থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, ফরিদপুরের এডিসি ও গাইবান্ধার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইসি। এসব শূন্য পদে নতুন উপযুক্ত কর্মকর্তাকে পদায়নের জন্য পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার ইসি সচিবালয় থেকে এ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে পুলিশের আইজিপিকে পত্র দেয়া হয়। ইসির সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।