কাজিরবাজার ডেস্ক :
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিককে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনের দেখে নেয়ার হুমকির ঘটনায় তোলপাড় সারাদেশ। একদিকে জামায়াত তোষণ অন্যদিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে সন্ত্রাসীসুলভ আচরণে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ড. কামালকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে সাংবাদিক সমাজ। বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে আজও। হুমকির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কুষ্টিয়ায়। ড. কামালের তৎপরতার প্রতিবাদে সোচ্চার রাজনীতিবিদরাও।
তীব্র সমালোচনার মধ্যেই কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কুষ্টিয়ায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানায় লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন ইবির ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ও দৈনিক বাংলাদেশ সময়’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. মুস্তাফিজুর রহমান (মিঠুন মুস্তাফিজ)।
এ অবস্থায় শনিবার সকালে একটি কৌশলী বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে পার পাওয়ার চেষ্টা করেছেন ড. কামাল। তার স্বাক্ষরযুক্ত ওই বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘১৪ ডিসেম্বর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্মৃতি সৌধের বেদিতে দাঁড়িয়ে আমি বলেছিলাম, আমরা কত মেধাবী সন্তানদের হারিয়ে তবে স্বাধীনতা পেয়েছি। তখন হঠাৎ করে বেদিতেই আমার কাছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলো। আমি তাৎক্ষণিক সবিনয়ে বলি, আজকে এই দিনে, যেখানে আমাদের গভীর অনুভূতির বিষয়, এই বিষয়ে এখানে কোন মন্তব্য করতে চাই না। পুনরায় একই প্রশ্ন তুললে আমি একই মনোভাব ব্যক্ত করি। কিন্তু তৃতীয়বার ভিড়ের মধ্য থেকে কোথাও অনবরত দুই থেকে তিনবার আমি শুধু ‘জামাত জামাত’ শব্দ শুনতে পাই। তখন আমার খুবই খারাপ লেগেছিল। এবং আমি প্রশ্নকর্তাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমার বক্তব্য কোনোভাবে কাউকে আহত বা বিব্রত করে থাকে, তাহলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
তবে কৌশল বয়ান নিয়ে সুবিধা করতে পারেননি ঐক্যফ্রন্ট নেতা। সাংবাদিকদের অবমাননাকর ও হুমকি দেয়ার ঘটনায় ড. কামালকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সচেতন সাংবাদিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ আল্টিমেটাম দেয়া হয়। এছাড়া এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সোমবার প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএফইউজে ও ডিইউজে। আগামীকাল মঙ্গলবার সারাদেশে বিএফইউজের অঙ্গসংগঠনগুলো বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করবে।
বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা কুদ্দুস আফ্রাদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, বিএফইউজে যুগ্ম-মহাসচিব অমিয় ঘটক পুলক প্রমুখ। ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ড. কামাল হোসেন জামায়াতের কাছ থেকে কত টাকা খেয়ে তাদের পক্ষে ওকালতি করছেন? আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ এ বক্তব্যের দাঁত ভাঙা জবাব দেয়ার জন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ভোটারদের আহ্বান জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বিজয়ের মাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। দেশের ক্রান্তিলগ্নে, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রান্তিলগ্নে তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের ক্রান্তিলগ্নে তিনি ঠিকই হাজির হন। কত টাকার বিনিময়ে তিনি স্বাধীনতা বিরোধীদের পক্ষে মাঠে নেমেছেন?
২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিক নেতারা বলেন, তা না হলে সাংবাদিক সমাজও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে ঐক্যফ্রন্টের কোন সংবাদ গণমাধ্যম আর কভারেজ করবে না। ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী ড. কামাল হোসেনের ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশন না করতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।