স্পোর্টস ডেস্ক :
মাশরাফি বিন মর্তুজার দিকেই আজ সবার দৃষ্টি থাকবে। খেলা হবে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুপুর ১২টায় শুরু হবে ম্যাচটি। যে দল জিতবে, ওয়ানডে সিরিজ তাদেরই হয়ে যাবে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাশরাফিতেই সবার চোখ থাকবে। দেশের মাটিতে যে এই ম্যাচটিই মাশরাফির শেষ ম্যাচ হয়ে যেতে পারে। এমন দিনে ম্যাচে জিতে সুখস্মৃতি না হেরে দুঃখস্মৃতি মিলবে?
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেটে হারানোর পর মনে হয়েছিল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিতেই সিরিজ জয় করবে বাংলাদেশ। তাতে তৃতীয় ওয়ানডেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার ম্যাচ হবে। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এতটাই ভাল ক্রিকেট খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, চিত্র পাল্টে গেছে। হোয়াইটওয়াশ দূরে থাক, এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজে হারানোর মিশনেই নামতে হচ্ছে। ১-১ সমতা নিয়ে আজ দুই দল খেলতে নামবে। কোনভাবে ম্যাচটিতে হেরে গেলেই আবার বিপদ। জয় মিললে সুখস্মৃতি মিলবে। সিরিজ জেতার সঙ্গে দেশের মাটিতে মাশরাফির শেষ ওয়ানডেতে জেতা হবে। আর হারলে সিরিজ হারের দুঃখ মেলার সঙ্গে মাশরাফির শেষ ম্যাচের স্মৃতি ধূসর হয়ে যাবে।
সতের বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন মাশরাফি। ২০০১ সালের নবেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে শুরু তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। একই বছর একই মাসে একই দলের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকও হয় মাশরাফির। ২০০৬ সালে হয় টি২০ অভিষেক। তখন থেকেই টি২০ খেলে বাংলাদেশ। সতের বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টেই যে ইনজুরিতে পড়েন, আর টেস্ট খেলা হয়নি। ৩৬ টেস্টই (৭৮ উইকেট) তার শেষ টেস্ট খেলা। গত বছর টি২০ (৪২ উইকেট) থেকেও অবসর নিয়েছেন ৫৪ টি২০ ম্যাচ খেলা মাশরাফি। তবে চালিয়ে যাচ্ছেন ওয়ানডে খেলা। তা দাপটের সঙ্গেই খেলছেন। ২৫৬ উইকেট নিয়ে ফেলেছেন। দেশের হয়ে ২০০ ওয়ানডেও খেলা হয়ে গেছে। আজ যখন ম্যাচ খেলতে নামবেন তখন দেশের জার্সিতেও দুই শ’ ওয়ানডে খেলার রেকর্ড গড়বেন মাশরাফি। দুটি ম্যাচ এশিয়া একাদশের হয়ে খেলেছেন তিনি। নেতৃত্বও দাপটের সঙ্গেই দিচ্ছেন মাশরাফি। আজ যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টস করতে নামবেন, তখন ওয়ানডে নেতৃত্বে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার রেকর্ড গড়বেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। ইনজুরি বারবার তার খেলায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা না হলে আরও অনেক ওয়ানডে খেলা হয়ে যেত। কিন্তু ইনজুরি তা হতে দেয়নি। তবে যেটুকু সুযোগ পেয়েছেন তার সবটুকুই কাজে লাগিয়েছেন।
মাশরাফি ২০১৪ সালের শেষ মুহূর্তে যখন ওয়ানডের দায়িত্ব নেন তখন থেকেই দলের সাফল্যের গ্রাফ উর্ধমুখী হতে থাকে। শুরুতেই জিম্বাবুইয়েকে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করে দল। এরপর ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। একই বছর পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার সঙ্গে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারায়। সরাসরি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিশ্চিত করে। র্যাঙ্কিংয়ে উচ্চতায় যায় দল। দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজে হারায়। এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলে। সর্বশেষ জিম্বাবুইয়েকে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে। সাফল্যে মুড়ানো থাকে বাংলাদেশের বর্তমান সময়টি। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও সিরিজে জেতার সুযোগ আছে। আজ জিতলেই হলো। দেশের মাটিতে মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচ হয়ে যেতে পারে আজ। আর এমন ম্যাচে দর্শক, ক্রিকেটারদের মধ্যেও আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে। সেই আবেগ মাশরাফিকে ছোঁয়া দিতে পারে। আর তাই আজ মাশরাফির দিকেই মাশরাফির ফিল্ডিং দেয়া, ব্যাটিং করা, বোলিং করাতেই সবার নজর থাকবে। এমনদিনে ম্যাচটি জিতলে সুখস্মৃতি মিলবে। মাশরাফিকে সুখস্মৃতি দেয়া যাবে। কিন্তু হারলেই মিলবে দুঃখস্মৃতি। শেষ পর্যন্ত কোনটি মিলবে, সুখস্মৃতি না দুঃখস্মৃতি?
জয় দিয়ে এ বছরটি শুরু হয়েছিল। জয় দিয়েই বছর শেষ করতে চান ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি। তিনি বলেছেন, ‘জয় দিয়ে শেষ করতে পারলে বেশ ভাল হবে। প্রথম ম্যাচের পর বলেছিলাম বছরের জয়ের যে হার তাতে জিততে পারলে খুব ভাল হবে। আর কালকেরটা (শুক্রবার) অবশ্যই উইনিং সাইডে করতে পারলে ভাল হবে।’