কাজিরবাজার ডেস্ক :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীদের জমা দেয়া মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার তিন আসনেই মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপি, জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট, রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত-সমালোচিত প্রায় দেড় ডজন নেতাও বাছাইয়ে অযোগ্য বিবেচিত হয়েছেন। নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় বাছাইয়ে খালেদা জিয়ার সব মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আগামী নির্বাচনে তার অংশ নেয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে গেছে। বাছাই মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় তিন শ’ আসনের মধ্যে তিনটি আসনে বিএনপির প্রার্থী শূন্য হয়ে গেছে।
এর মধ্যে বগুড়া-৭ এবং মানিকগঞ্জে-২ আসনে ও ঢাকা-১ আসনে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। সারাদেশে ৩ হাজার ৬৫ প্রার্থীর মধ্যে বাছাইয়ের ৭৮৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বৈধ হয়েছে ২ হাজার ২৮৯ জন।
এছাড়াও মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বিএনপি, জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থীসহ রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেক আলোচিত প্রার্থীর মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়েছে। আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায়, ঋণখেলাপী এবং যথাযথভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল না করায় এসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। তবে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হযেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একেএম মমিনুল হক সাইদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকবর খান পাঠান (চিত্র নায়ক ফারুকের) মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার আলোচিত এসব প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগাদানকারী গোলাম মওলা রনি, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, হঠাৎ রাজনীতিতে যোগ দেয়া সাবেক অর্থমন্ত্রীর ছেলে রেজা কিবরিয়া, সাবেক বিএনপি নেতা ও মন্ত্রী নাজমুল হুদা, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস দুলু, বিএনপির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্দেশ খান, মীর নাছির, সাকা পরিবারের সবাই, ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলাম, নাদিম মোস্তফা, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, মেজর অব. আখতারুজ্জামান, সাবেক মন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ব্যারিস্টার ইশরাক হোসেনসহ বিএনপির সাবেক অনেক এমপি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
তবে রিটার্নিং অফিসার বাছাইয়ে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছেন, সেইসব সংক্ষুব্ধ প্রার্থী ইচ্ছে করলে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবেন। এজন্য আগামী বুধবারের মধ্যে কমিশন বরাবর আপীল দাখিল করতে পারবেন। তবে কমিশনের কাছে আপীলে প্রার্থিতা ফিরে না পেলে সর্বশেষ আশ্রয় হিসেবে আদালতে আপীল করতে পারবেন। আদালত অনুমতি দিলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আদালত তাদের আপীল খারিজ করে দিলে নির্বাচনে তারা অংশ নিতে পারবেন না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে তিন শ’ আসনের আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ৩ হাজার ৬৫ জন তাদের মনোনয়ন জমা দেন। আদালতে সাজা ঋণ খেলাপীর কারণে অনেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়া হয়েছে বাছাইয়ে।
জীবনের প্রথম অযোগ্য ঘোষিত খালেদা জিয়া : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবারের নির্বাচনে লড়তে বগুড়া-৬ ও ৭ এবং ফেনী-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু বাছাইকালে তার তিনটি মনোনয়নপত্রই বাতিল করে দেয়া হয়েছে। দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তার এই মনোনয়নপত্র অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে নাজিমুদ্দিন রোডে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। জীবনে প্রথম কোন নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে এবার বেগম জিয়া অযোগ্য ঘোষিত হলেন। ’৯১ সাল থেকে বেগম জিয়া প্রায় সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে কেবল ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। এর আগে ’৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে প্রত্যেকবার তিনি ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। এর মধ্যে ’৯১ ও ২০০১ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হলেও খালেদা জিয়া তিনটি আসনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেছিলেন। জীবনে এই প্রথম কোন নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে অযোগ্য ঘোষিত হলেন তিনি।
অযোগ্য হেভিওয়েট প্রার্থী যারা : রবিবার বাছাইয়ের বিএনপি জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট নেতাদেরও মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। খেলাপী ঋণ ও মামলায় সাজার কারণে বাতিল হয়েছে এম মোর্শেদ খান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে এম মোর্শেদ খান, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, তার পুত্র মীর মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু-) আসনে আসলাম চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দেন। বাছাই তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
একাদশ নির্বাচনে রাজশাহীর ৬ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত তিন হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়নও বাতিল হয়েছে। দাখিলকৃত কাগজপত্রে অসঙ্গতি, ভুল তথ্য ও ঋণখেলাপীর কারণে তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। রবিবার রাজশাহী জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তবে বাতিলের বিরুদ্ধে আপীলের সুযোগ রয়েছে। রাজশাহীতে বাতিলকৃতদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্যরা হলেন রাজশাহী-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা রয়েছেন। সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার বিরুদ্ধে ঋণখেলাপী ও তার বিরুদ্ধে ১০ মামলার তথ্য গোপন করায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
নাটোরে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুরও মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কনফারেন্স রুমে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শাহরিয়াজ তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। ২০০৭ সালে জঙ্গীবাদ ও নাশকতার পৃথক দুটি মামলায় সাজা হওয়ার কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। এছাড়া জামালপুর-১ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি রশিদুজ্জামান মিল্লাত, কিশোরগঞ্জের সাবেক বিএনপির দলীয় এমপি মেজর অব. আখতারুজ্জামানসহ বহু বিএনপি নেতার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। যারা আগে একাধিকার এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
টেলিফোন বিল বকেয়া ও ঋণখেলাপী হওয়ায় ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। রবিবার রিটার্নিং অফিসার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কেএম আলী আজম প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইয়ের সময় বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আফরোজা আব্বাসকে ঋণখেলাপী হিসেবে অবহিত করা হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকে তিনি ঋণখেলাপী। এছাড়া ঢাকা টেলিফোনেও তিনি দায়বদ্ধ। ডাচ-বাংলা ব্যাংকেও গ্যারান্টার হিসেবে তিনি ঋণখেলাপী।
জাতীয় পার্টির মহাসচিবের মনোনয়নপত্র বাতিল : এদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। রবিবার বাছাইয়ে ঋণখেলাপীর অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়া হয়। পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকী) আসনে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ঢাকার সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে লিখিতভাবে জানিয়েছে, তাদের গুলশান শাখা থেকে ঋণ নিয়ে হাওলাদার খেলাপী হয়েছেন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী শহিদুল আলম তালুকদারের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
অযোগ্য আলোচিত সমালোচিত যারা : এদিকে রাজনীতিতে অনেক আলোচিত-সমালোচিত পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়া হয়েছে। তিনি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি। সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা সম্প্রতি ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেন। তিনি এবার টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়া হয়েছে। রাজনীতিতে তিনি আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তি। ঋণখেলাপীর অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে অপর আলোচিত ব্যক্তি নাজমুল হুদার এবার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তিনি এবার ঢাকা-১৭ থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু বাছাইয়ে তিনি রাজনৈতিক দলে না স্বতন্ত্র তা স্পষ্ট করেননি। ফলে বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নেতা থাকাকালে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন। সম্প্রতি তিনি আলাদা দল ও জোট গঠন করেন। তিনি ১৪ দলীয় জোটে যোগ দিয়ে নির্বাচনের ইচ্ছাও প্রকাশ করেন।
এদিকে হঠাৎ করেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত গোলাম মওলা রনিরও মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। যোগ দিয়ে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর না থাকার কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তা।
রাজনৈতিক অঙ্গন ও নির্বাচনী ময়দানে ঝড় তোলা হবিগঞ্জ-১ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়ার মনোনয়ন বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ। সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড ডিভিশন ও ঢাকা ব্যাংক থেকে পরিপ্রেরিত ঋণখেলাপীর অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার সকাল ১১টায় ড. রেজার মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এছাড়া হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকায় একই আসনের আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নবঞ্চিত বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়ারও মনোনয়ন বাতিল করেছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাবেক অর্থমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া সম্প্রতি জাতীয় এক্যফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত গণফোরামে যোগদান করেন এবং হবিগঞ্জের ওই আসনে প্রার্থী হলে ভোটের মাঠে তাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় ওঠে।
প্রার্থীশূন্য বিএনপির তিনটি আসন : এদিকে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় তিনটি আসনে বিএনপি কোন প্রার্থী নেই। এর মধ্যে ঢাকা-১ আসনে ধানের শীষে কোন প্রার্থীই আর টিকে নেই। এখানে বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন প্রার্থীর মনোনয়নই গ্রহণ করা হয়নি। এই আসনে বিএনপির পক্ষে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ফাহিমা হোসাইন জুবলী ও নাজমুল হুদার সাবেক প্রেস সেক্রেটারি তারেক হোসেন। এদের কারও মনোনয়নই টেকেনি।
বগুড়া-৭ আসনে বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলের পাশাপাশি এ আসনে বিএনপির ফারুক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় প্রার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে। বগুড়ার গাবতলী-শাজাহানপুর আসনে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি তার বিকল্প প্রার্থী গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোর্শেদ মিল্টনের মনোনয়নপত্রও বাতিল করে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়েজ আহম্মদ বলেছেন, মিল্টন উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তা গৃহীত না হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। খালেদা ও মিল্টনের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় বগুড়া-৭ আসনে ধানের শীষের কোন প্রার্থী থাকল না। মানিকগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী মঈনুল ইসলাম খানের মনোনয়নে বিএনপির মহাসচিবের স্বাক্ষরে মিল না থাকা এবং একই আসনে বিএনপির আরেক প্রার্থী সিঙ্গাইর উপজেলা চেয়ারম্যান আবিদুর রহমান রোমান চেয়ারম্যান পদ থেকে তার পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। বিএনপির দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় দলের পক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অবশিষ্ট কোন প্রার্থী নেই এ আসনে।
মনোনয়নশূন্য সাকা পরিবার : নির্বাচন থেকে ছিটকে গেল চট্টগ্রামের আলোচিত সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পরিবার। জেলার তিনটি আসনে ছিল পরিবারটির প্রভাব। কিন্তু রবিবার বাতিল হয়ে যায় সাকা পরিবারের দুই সদস্যের তিনটি মনোনয়নপত্র। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিবারটির আর কেউ রইল না। সাকা চৌধুরীর ছোট ভাই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) ও চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনীয়া) আসনে। গিকা চৌধুরীর পুত্র সামির কাদের চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দেন চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে। এর মধ্যে গিকা চৌধুরী দলের মনোনয়ন ফরম ছাড়াই দুটি আসনে এবং পুত্র সামির কাদের বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। নির্বাচন কমিশনে দেয়া মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দলের মনোনয়ন কপি এবং একইসঙ্গে খেলাপীঋণের কারণে পিতা-পুত্রের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়।
ইসিতে বিএনপির প্রার্থীদের অভিযোগ : এদিকে মানিকগঞ্জে তিনটি আসনে বিএনপির সাতজনের মনোনয়ন বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার রবিবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে (ইসিতে) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চিঠিটি পৌঁছে দেন।
চিঠিতে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আমি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক কর্তৃক দলীয় মনোনয়নপত্রে আমার প্রদত্ত স্বাক্ষর গ্রহণ করছে না। যা অনাকাক্সিক্ষত। দৃঢ়তার সঙ্গে জানাচ্ছি যে, মানিকগঞ্জ জেলার প্রতিটি আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা আমার সুপরিচিত এবং আমি নিজে তাদের মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করেছি, এ বিষয়ে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। মির্জা ফখরুল তার স্বাক্ষরিত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে ইসিকে অনুরোধ করেছেন। এর আগে মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে বিএনপির সাতজন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা প্রশাসক।
সারাদেশে বাতিল ৭৮৬ জন : এদিকে একাদশ জাতীয় সংবাদ নির্বাচনে সারাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মোট ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এই খবর জানা গেছে। সূত্র জানায়, সারাদেশে মোট তিন হাজার ৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে দুই হাজার ২৭৯ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপীল করতে পারবেন। আপীলের ওপর শুনানি হবে ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর। কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশন যদি আপীল বাতিল করে, তবে সেই প্রার্থী আদালতেও যেতে পারবেন।