জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
পৃথক স্থান থেকে জকিগঞ্জের দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যা রাতে বারঠাকুরী ইউনিয়নের বাঘপাড়া এলাকার একটি ধানক্ষেত থেকে একই ইউনিয়নের কাশিরচক গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিন জামুর ছেলে মিজানুর রহমান খোকনের লাশ ও শনিবার জকিগঞ্জের বীরশ্রী ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামের মৃত ছিদ্দেক আহমদের ছেলে মাহমদ আলী (৪৬) এর লাশ বিয়ানীবাজার উপজেলার বৈরাগী বাজার এলাকার কুশিয়ারা নদীতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। দুটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ মর্গে প্রেরণ করেছে।
জকিগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবারে উদ্ধার করা লাশটি মিজানুর রহমান খোকনের বলে সনাক্ত করেছেন তার বড়ভাই বাহার উদ্দিনসহ পরিবারের লোকজন।
খোকনের বড় ভাই বাহার উদ্দিন জানান, ১৫ দিন ধরে মিজানুর রহমান খোকন (১৮) নিখোঁজ ছিলো। সে পেশায় শ্রমিক। শুক্রবার যুবকের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে তারা লাশ দেখে পরিচয় সনাক্ত করেছেন। বারঠাকুরী ইউনিয়নের বাঘপাড়া এলাকার লোকজন জানান, তারা ধানক্ষেতে মাটিচাপা বস্তাবন্দি একটি লাশ দেখতে পেয়ে জকিগঞ্জ থানা পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পুতে রাখা লাশ উদ্ধার করে। খোকনের লাশ যেখানে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে এর পাশে একটি ওড়না ফেলে রাখা ছিলো। এলাকাবাসীর ধারণা অজ্ঞাতরা ওড়না পেঁচিয়ে খোকনকে হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে ধানক্ষেতে পুতে রেখেছে। এ হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করতে এলাকাবাসী পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
শনিবার বিকেলের দিকে বিয়ানীবাজার উপজেলার বৈরাগী বাজার এলাকার কুশিয়ারা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশ উদ্ধার করে। পরে লাশটি জকিগঞ্জের বীরশ্রী ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামের মৃত ছিদ্দেক আহমদের ছেলে মাহমদ আলীর বলে শনাক্ত করেন তার ভাতিজা খালেদ আহমদ।
গত ১২ নভেম্বর রাতে নিখোঁজ হন জকিগঞ্জের বীরশ্রী ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামের মাহমদ আলী (৪৬)। ঘটনার ৪ দিন পর নিখোঁজ মাহমদ আলীর স্ত্রী নেওয়ারুন বিবি জকিগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।
স্থানীয়রা জানান, উজিরপুর এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে কয়েকদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এ দ্বন্দ্বের বলি হয়েছেন মাহমদ আলী। মাহমদ আলীর ভাই সামছ উদ্দিন জানান, মাদক ব্যবসায়ী শুক্কুর আলী ১২ নভেম্বর রাতে মাহমদ আলীকে নৌকা চালানোর জন্য বাড়ী থেকে বের করে নেয়। পরদিন গড়র গ্রামের আব্দুল্লাহ নৌকা ও বৈঠা এনে ফেরত দিলেও মাহমদ আলী কোথায় তা জানায়নি। এরপর মাহমদ আলী নিখোঁজের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে বড়চালিয়া গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী শুক্কুর আলী তৎপর হয়ে উঠে। সে মাহমদ আলীর পরিবারকে টাকা পয়সা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং এ ব্যাপারে কথা না বলতে বাধা নিষেধ করে। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে তার ভাইকে হত্যা করে কুশিয়ারা নদীতে ফেলে দিয়েছে।
জকিগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৯ নভেম্বর মাদক পাচারের অভিযোগে মাদক কারবারী শুক্কুর আলীকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, উদ্ধারকৃত লাশ দুটি মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পৃথক দুটি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।