কাজিরবাজার ডেস্ক :
আসন্ন ভোটের আগে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের পুন:তফসিল দেয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইছে ১৭, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা শেষ করতে। আর প্রথম শ্রেণিতে লটারি অনুষ্ঠান করতে চাইছে ২০ ডিসেম্বর। এমন প্রস্তাব দিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমতি চেয়ে চিঠি দিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৮ নভেম্বর এই চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ইসি এখন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মহাব্যস্ত। তারা স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এখন মাথা ঘামাবে না। ফলে নির্বাচনের আগে স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এদিকে ১ জানুয়ারি বই উৎসব। সারাদেশে নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেবে সরকার। এর মধ্যে যদি শিক্ষার্থীরা স্কুলে ভর্তি হতে না পারে তাহলে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম পিছিয়ে যেতে পারে। এ কারণে বাড়তি চাপের মুখে পড়তে পারে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের আগেই চাইছি স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা নিতে। যাতে ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা বই উৎসব সুন্দরভাবে উদযাপন করতে পারে। কিন্তু ইসি যেভাবে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা আমাদের প্রস্তাব বিবেচনায় নিতে পারবে কিনা সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আর ৩০ ডিসেম্বরের আগে আমরা ভর্তি পরীক্ষা নিতে গেলে ইসির অনুমতি লাগবে। আর এরপর হলে আর অনুমতি লাগবে না।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানায়, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আগের নির্ধারিত সময়সূচি পরিবর্তন করে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মাউশি। তবে পুনঃতফসিলে ভোট পিছিয়ে গেলে আবার আগের তারিখ ঠিক রেখে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে মাউশি।
গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আগের নির্ধারিত ১৭, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষা এবং ২০ ডিসেম্বর প্রথম শ্রেণির লটারি অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পাঠায় মাউশি। মাউশির এই প্রস্তাবই অনুমোদনের জন্য ইসিতে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, ভোট পিছিয়ে যাওয়ায় আমরা আগের দিন তারিখ ঠিক রেখে প্রস্তাব করেছি মন্ত্রণালয়কে। আগের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, ১৭, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর ভর্তিপরীক্ষা এবং ২০ ডিসেম্বর প্রথম শ্রেণির ভর্তির জন্য লাটারি। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে নির্ধারিত সময়ে ভর্তি পরীক্ষা ও লটারি অনুষ্ঠিত হবে। তবে মন্ত্রণালয়ের পরামর্শেই তারিখ নির্ধারিত হবে।
আগের শিডিউল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর ফল প্রকাশের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। একই দিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। একই দিনে ফল প্রকাশে সমস্যা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর মান্নান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের তারিখ দুই-এক দিন এগিয়ে নিয়ে আসব। ঘরোয়াভাবে ফল প্রকাশ হওয়ায় নির্বাচনী কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না।’
সরকারি এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি বছর রাজধানীতে গড়ে দুই লাখের বেশি শিশু প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। কিন্তু মাত্র ৪০-৪৫ হাজার শিশু পছন্দের স্কুলে ভর্তি হতে পারে। অপরদিকে ঢাকা শহরে প্রায় অর্ধ লাখ কিন্ডারগার্টেন ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে। আছে তিন শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ‘গরিবের স্কুল’ হিসেবে পরিচিত। অভিভাবকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে সরকারি হাইস্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক স্তরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। সে কারণে ৪১টি সরকারি হাইস্কুল এবং অর্ধশতাধিক নামকরা বেসরকারি হাইস্কুলে অভিভাবকরা ভর্তি মৌসুমে এক প্রকার যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ঢাকার বাইরে বড় শহরগুলোতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের কাছে পছন্দের বিচারে শীর্ষে বলে জানা গেছে।
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, এবারও ঢাকা মহানগরীর সরকারি পুরাতন ৩৮টি হাইস্কুলকে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ এই তিন গুচ্ছে ভাগ করা হয়েছে। এর সঙ্গে রাজধানীর নতুন তিনটি হাইস্কুল যুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো- সবুজবাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ‘ক’ গুচ্ছে, শহীদ মনু মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ‘খ’ গুচ্ছে ও কালাচাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয় ‘গ’ গুচ্ছভুক্ত করা হয়েছে। এ স্কুলগুলোতে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।