কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ৭ দিন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর রবিবার করা হয়েছে। একই সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ৯ দিন পিছিয়ে ২৮ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন পেছানোর পুনর্তফসিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভোটের তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত জানানোর পর কমিশন থেকে পুনর্তফসিলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ স্বাক্ষরিত পুনর্তফসিলের প্রজ্ঞাপনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৮ নবেম্বর বুধবার নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে ২ ডিসেম্বর রবিবার। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর রবিবার। নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর রবিবার। এতে বলা হয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ১৯৭২-এর দফা ১ অনুসারে নির্বাচনের তারিখ পুনর্র্নিধারণ করা হয়েছে। পুনর্তফসিলে প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রচারের সুযোগ পাচ্ছে ২১ দিন।
এর আগে গত ৮ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া টেলিভিশন ভাষণে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। প্রথম তফসিলে তিনি ২৩ ডিসেম্বর রবিবার একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। ওই তফসিলে মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১৯ নভেম্বর, বাছাই ২২ নভেম্বর এবং প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ধরা হয় ২৯ নভেম্বর।
এদিকে কমিশনের ভোটের তারিখ পেছানোর এই সিদ্ধান্তকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইসিকে সমর্থন দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের তারিখ এক সপ্তাহ পেছানোর সিদ্ধান্তকে আওয়ামী লীগ সমর্থন করে। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার শুধু নির্বাচন কমিশনের। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। অপর দিকে নির্বাচনের তারিখ ৭ দিন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করে পুনর্তফসিল দেয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সোমবার এক বিবৃতে বলেন, প্রধান নির্বাচন আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করায় খুহয়ে। এদিকে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বলেছে, ইসির পুনর্তফসিলে কোন সমস্যা দেখছে না তারা।
এদিকে ইসির নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি। তবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কমিশন সরকারী নির্দেশ পালন করছে। অপর দিকে জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব বলেছেন, নির্বাচন ৭ দিন পেছানোর মধ্যে তারা ষড়যন্ত্র দেখছেন। তারা এখনও নির্বাচন একমাস পেছানোর দাবিতে অনড় রয়েছেন।
যদিও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি করে আসছিল। এছাড়া বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকেও তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়ার দাবি করা হয়। তফসিল ঘোষণার আগেই ঐক্যফ্রন্টের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তখন সাংবাদিকদের বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ ইসির নেই। তাই তফসিল পেছানোর সুযোগ নেই ইসির। তবে রাজনেতিক দলগুলো একমত হলেও নির্বাচন দু’একদিন পিছিয়ে দেয়া যেতে পারে। এর আগে তিনি তফসিল ঘোষণায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশে গণতন্ত্রকে সচল রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিবাদ মিটিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।
যদিও প্রথম তফসিল ঘোষণার পর ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। কিন্তু হঠাৎই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে রবিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি সিদ্ধান্তে। তারা ওইদিন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনও একমাস পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানান। ঐক্যফ্রন্টের পাশাপাশি বিকল্পধারার নেতৃত্বোধীন যুক্তফ্রন্টও ইসিকে চিঠি দিয়ে নির্বাচন এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়ার দাবি তোলে। জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে নির্বাচন পেছানোর এই দাবিতে বিরোধিতা করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট এবং এইচএম এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট। দলগুলোর নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবির প্রেক্ষিতে রবিবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন এ বিষয়ে সোমবার ইসির সিদ্ধান্ত জানানো হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি নির্বাচন ৭ দিন পিছিয়ে দেয়ার কমিশনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এর আগে সকালে নির্বাচন কমিশনের এক বৈঠকে পুনর্তফসিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর রবিবার এবং মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ২৮ ডিসেম্বর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা পুনর্তফসিলের নির্বাচন ১ সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তবে তার এই সিদ্ধান্তে এখনও খুশি হতে পারেনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ভোট গ্রহণের তারিখ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট তফসিল এক মাস পেছানোর দাবিতেই অনড় থাকবে। এ বিষয়ে তারা পরবর্তী কর্মসূচী দেবে। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের একদিন পরেই ইংরেজী নববর্ষ। ওই সময় দেশে কোন কূটনীতিক ও বিদেশী পর্যবেক্ষক থাকবেন না। সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্বাচন বানচাল করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম প্রদর্শনী মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা ভোটের তারিখ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আরও বলেন, স্বস্তির বিষয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে কমিশন সোমবার এ বিষয়ে বৈঠকে বসেছিল। সভার সিদ্ধান্ত অনুযয়ী পুনঃতর্ফসিলে ভোট ৩০ ডিসেম্বর করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ২৮ নবেম্বর করা হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশ : এদিকে একাদশ জতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠ পর্যয়ে নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেট নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসি এই নির্দেশনায় প্রতিটি উপজেলায় একজন, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতি তিন থেকে চারটি ওয়ার্ডের জন্য একজন, সিটি কর্পোরেশন ছাড়া জেলা সদরে প্রতি পৌর এলাকায় এক থেকে দুইজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া পাবর্ত্য এলাকায় তিন থেকে চারটি উপজেলার জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। সোমবার ইসির যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় ভোটগ্রহণের পরদিন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রাখার কথাও বলা হয়েছে।
এদিকে অপর এক নির্দেশনায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমতি ছাড়া কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি না করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছে ইসি। শুক্রবার এ চিঠি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পাঠানো হয়। এছাড়া একই দিন স্বাক্ষরিত অপর এক চিঠিতে আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনায় প্রচারসামগ্রী অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। অন্যথায় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে।