ভারি বৃষ্টিতে সিলেট ও হবিগঞ্জে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের ১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকার ক্ষতি

14

কাজির বাজার ডেস্ক
চলতি মাসের শুরুতে কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিতে সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলায় রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে ১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এতে ৪ হাজার ৭০৪ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ দুই জেলায় বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ১ হাজার ১৬২ হেক্টর ধানি জমির ক্ষতি হয়েছে।
তবে বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হবিগঞ্জের কৃষকরা। জেলায় ১ হাজার ১৪৩ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় এবার আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৮ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৮৭ হাজার ১৭৩ হেক্টরে। এতে ৩ হাজার ১৬৬ টন ধান উৎপাদন কম হবে। এছাড়া বৃষ্টিতে জেলার ৪ হাজার ৫৭২ জন কৃষকের ১৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এ বিষয়ে সিলেট আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান বলেন, ‘চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে হবিগঞ্জের কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সিলেটেও ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে প্রতিবেদন আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা (সার ও বীজ) দেয়া হয়ে হবে। এখন নতুন করে রোপা আমন চাষাবাদের সময় নেই। সামনে আছে বোরো মৌসুম। এরই মধ্যে বোরো মৌসুমের প্রণোদনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোপা আমনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সামনের বছর খরিপ মৌসুমে প্রণোদনা পাবেন।’
গত বৃহস্পতিবার সিলেট আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পরিবেশিত ক্ষয়ক্ষতির তথ্য থেকে জানা যায়, অক্টোবরের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হবিগঞ্জের কৃষকরা। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে হবিগঞ্জের ৬২ হেক্টর সবজি ক্ষতি হয়েছে। এতে জেলার ৪৩৮ জন সবজিচাষীর ৪ লাখ ৯২ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে সিলেট জেলায়ও কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলায় ১৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১৯৬ জন কৃষকের ৫০ টন ধান উপাদন ব্যাহত হয়ে ১৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বিভাগের অন্য দুই জেলা মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে কিছু জমি পানিতে নিমজ্জিত হলেও ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও রোপা আমন আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
এ মৌসুমে সিলেট অঞ্চলে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত আবাদ হয়েছিল ৪ লাখ ১৯ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে। অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষয়ক্ষতির পর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আবাদের সর্বশেষ অবস্থা ৪ লাখ ১৮ হাজার ১৩ হেক্টর। যা দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে সিলেট জেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১০ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ২৯১ হেক্টরে। মৌলভীবাজার জেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমি। সুনামগঞ্জ জেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৮৩ হাজার ৩৬৯ হাজার। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি হবিগঞ্জে। জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা ইউনিয়ন, বদলপুর ইউনিয়ন, শিবপাশা ইউনিয়ন ও সদর ইউনিয়নের হাওরের অধিকাংশ আমন ধানের জমি তলিয়ে যায়।
এদিকে সিলেট সদর উপজেলার সুরমার তীরবর্তী এলাকাগুলোয় সবজি চাষ হতো। এবার অতিবৃষ্টির কারণে সবজি চারা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ভরা মৌসুমেও সবজি বাজারে তুলতে পারেননি কৃষক।