ডাঃ হাফেজ মাওলানা মোঃ সাইফুল্লাহমানসুর
অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দা : আল্লাহকে বিশ্বাস করে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই আল্লাহর অনুগ্রহ পাবার আশা করে কিন্তু সবাই কি তার অনুগ্রহ-প্রাপ্ত বান্দা হতে পারে? পারে না। সকল ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত বান্দা হবার অন্যতম শর্তহলো একনিষ্ঠ হৃদয়ে আল্লাহর সমস্ত আদেশ-নিষেধ ও বিধিবিধান মেনে নিতে হবে এবং তা পালন করতে হবে, আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর একত্মবাদ ও রসূল (সা.)- এর রিসালাতের উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করবে, তার প্রতিটি হুকুম-আহকাম মেনে চলবে এবং ইসলামের উপর আমরণ প্রতিষ্ঠিত থাকবে তারাই হবে আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দা।
এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে পৃথিবীতে খেলাফত প্রদান করবেন, যেমন তিনি খেলাফত প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি তাদের দীনকে অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয় ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন; তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না আর এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারাই ফাসিক। আন-নুর, ২৪/৫৫
তাদের গুণাবলী হলো –
১। তাদের ঈমান মজবুত
২। তারা কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন পরিচালনায় শপথ বদ্ধ।
৩। তারা তাকওয়াবান।
৪। তাদের ঈমান শির্ক মুক্ত, ইবাদত বিদায়াত মুক্ত।
৫। তারা আল্লাহর বিধান ও রাসূলের সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনাকে জীবনের উদ্দেশ্য মনে করেন।
যারা আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দা:
১. নবী
২. সিদ্দীকিন
৩. শহীদ
৪. সলেহীন
অনুগ্রহপ্রাপ্ত’দের গুণাবলী:
নবী :
১. যাঁরা আল্লাহর নিকট থেকে ওহী প্রাপ্ত হয়েছেন।
২. আল্লাহর কাছ থেকে সত্যের বিধান লাভ করেছেন এবং তা প্রচার করেছেন।
সিদ্দিকীন :
যাঁরা ইসলাম, কুরআন, হাদীস, ও সত্যকে উদার, উন্মুক্ত, অকুন্ঠচিত্তে গ্রহণ করেছেন এবং আমল করেছেন।
শহীদ :
যাঁরা নিজেদের কথা দিয়ে, কাজ দিয়ে, ধন-সম্পদ দিয়ে, এমনকি নিজের জীবনটা ইসলামের জন্য কুরআনের রাস্তায় বিলিয়ে দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
সলেহীন:
১. যাঁরা জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর হুকুম পালন করেছেন
২. যাঁরা হকের পথে অটল থেকেছেন।
৩. কোনো অবস্থাতেই ইসলামী আদর্শ পরিত্যাগ করে নি।
অভিশপ্ত বান্দা : পক্ষান্তরে আল্লাহর অভিশপ্ত লোকেরা ঈমানের বিপরীত চরিত্র বহন করে। তারা আল্লাহদ্রোহী, নিজের নফস, শয়তান বা অন্য কারো তাবেদারি করে। আল্লাহর ‘লানত’ বা অভিসম্পাতের অর্থ হলো আল্লাহর রহমত ও করুণা থেকে বের হয় ও যার ওপর আল্লাহর লানত পতিত হয় সে কখনো আল্লাহ নৈকট্য লাভ করতে পারে না। বিনিময়ে সে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অপমান-অপদস্থতা অর্জন করে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে অনেক ভালোবেসে তাঁর ইবাদাত করার জন্য তৈরি করেছেন। তিনি চান না যে, তাঁর বান্দা অভিশপ্ত জীবন যাপন করুন। আবার মুসলমান যত বড় পাপীই হোক না কেন, তাকে অভিশাপ দেয়া জায়েজ নেই।
হতে পারে মৃত্যুর পূর্বে সে নিষ্ঠার সঙ্গে তাওবা করে নিয়েছে। আল্লাহ তাআলা তার অন্যান্য নেক আমলের কারণে তার পাপগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন।
যা মানুষের জানা সম্ভব নয়। পক্ষান্তরে যারা অভিশপ্ত তারা আল্লাহদ্রহীতার কাজ করে- তা থেকে তাওবা না করে মৃত্যু বরণ করে তারাই হলো আল্লাহর অভিশপ্ত বান্দা।
কারা অভিশপ্ত বান্দা :
কাফেরগণ
ইয়াহূদীগণ
নাসারাগণ
মুনাফিকগণ
অভিশপ্তদের গুণাবলী:
যারা আল্লাহ তায়ালার আয়াতকে অস্বীকার করেছে।
যারা আল্লাহর নবীদের হত্যা করেছে।
যারা প্রত্যেকটি ব্যাপারে আল্লাহর আইন সীমা লঙ্ঘন করেছে।
যারা ঈমানদারদের কষ্ট দিয়েছে।
যারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য আইন দিয়ে জীবন পরিচালনা করেছে।
আল্লাহপাক আমাদের অভিশপ্তদের দল থেকে দূরে রেখে অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দাদের কাতারে শামিল করুন। আমিন!!