মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চা বাগান গুলোতে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চার সদস্যের টিম এসে চা বাগানের মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন।
চিকিৎকরা বলছেন, দূষিত পানি ডায়রিয়া বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া গরম, আবার প্রচন্ড বৃষ্টি হওয়ার পর ঠান্ডা আবহাওয়ার বিরাজ করার করছে। এ কারণে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণেও কেউ কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সরকারী হাসপাতালে রোগীর ভিড় বাড়ছে প্রতিদিনই। তাদের তথ্যমতে, গত মাসের ২৬ তারিখ থেকে চলতি মাসের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উপজেলায় রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৩০০ জন। এর মধ্যে পারশ মৃধা (৪০) ও বঙ্কি রিকিয়াসন (৫৫) নামের দুই চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
ডা. মহসীন জানান, মূলত ২৬ আগষ্ট থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। গত বছরের এসময়ের তুলনায় এবার প্রায় ৩০০ রোগী আসছে। গড়ে প্রতিদিন এখন ১০/১২ জন ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগী এখানে ভর্তি হচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ডায়রিয়া মূলত পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা গরমের ডায়রিয়া নয়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফিনলে টি কোম্পানির ভুরভুরিয়া চা বাগান, লাখাইছড়া চা বাগান, ফুলছড়া চা বাগানের নারী ও প্রাপ্তবয়স্ক, শিশুসহ সব বয়সী মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শ্রীমঙ্গল সরকারী হাসপাতাল ও ফিনলে চা বাগানের নিয়ন্ত্রণধীন কালিঘাট চা বাগানের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আবার অনেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ফিনলে টি কোম্পানির ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম শিবলী বলেন, এর আগে তাদের বাগানে এই রোগের প্রকোপ দেখা দেয়নি। এটা পানিবাহিত রোগ। বাগানের এক ঘরের একজনের হলে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগ প্রতিরোধে এরই মধ্যে বাগানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।আমরা তাদেরকে নানা ভাবে সচেতনতার লক্ষ্যে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো বলেন, ‘প্রথম দিকে বেশি আক্রান্তরা হাসপাতালে আসছিল। এখন কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে ১/২বার পাতলা পায়খানা হলেই হাসপাতালে রোগিরা আসছে। তিনি আরও বলেন, আমি অনুরোধ করবো আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার জন্য। কারণ অনুসন্ধানে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চার সদস্যের টিম এসে মাঠে কাজ করছে। তবে এখনও হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সংকট রয়েছে।’
ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আসা ডা. তানভীর বলেন, আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে কিছু স্যাম্পুল কালেকশন করে পরীক্ষার জন্য পাঠয়েছি। কি কারণে এতো ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত সেটার রিপোর্ট এখনও আসেনি। তবে আমাদের গবেষণা কিন্তু এখনও চলমান। আমরা কিছু হট পয়েন্ট আইডেন্টিফাই করেছি যেখান থেকে এর উৎপত্তি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘চা শ্রমিকরা যে আট ঘন্টা বাগানে কাজ করে, তখন তারা বাগানের স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় চা শ্রমিকরা লাইনের মধ্যেই খোলা জাগায় মল-মূত্র ত্যাগ করে। পানির ব্যবস্থা না থাকায় পানির পরিবর্তে তারা বালি ও মাটি ব্যবহার করে ঠিক মতো হাত না ধোঁয়া।
এছাড়া খাবারের বিশুদ্ধ পানি ও জলের মারাত্মক অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাসহ ময়লা যুক্ত কূপের পানি ব্যবহার করা, সর্বোপরি স্বাস্থ্য সচেতন না থাকার কারণে বাগানে কলেরার প্রকোপ দেখা দিয়েছে বলে আমরা মনে করছি।’
ডা. তানভীর আরও বলেন, ‘শুনেছি চা বাগান এলাকায় হাঁড়িয়া নামের একটা মদ আছে, এটা সাধারণত পঁচা ভাতের সাথে একটা মেডিসিন মিশিয়ে তৈরী করে, সেটা যদি আমরা দেখতে পারতাম তাহলে বুঝতাম সেটাতে কি রকম পয়ঁজন আছে। সেটা পান করার কারণেও হতে পারে। চা শ্রমিকরা ছড়ার পানিতে যাওয়া বন্ধ করতে হবে তাহলে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব।’
ডা. তানভীর বলেন,‘বাংলাদেশ থেকে এখনও ডায়রিয়া নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। এটা বিভিন্ন সিজনে হয়, কোথাও সারা বছর ধরে হয়, কোথায় নির্দিষ্ট কিছু সময়ে হয়, এটা থেকে আমরা এখনও বের হতে পারিনি। এর মূল কারণ হচ্ছে এই ধরনের কিছু এলাকায় এখনও স্যানিটেশনের এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা ও ড্রেনেজ সিষ্টেম এর কারণে। এটা চলতেই থাকবে যতদিন পর্যন্ত আমরা এসবের উন্ন্য়ন করতে না পারবো।’