কাজিরবাজার ডেস্ক :
এক ছাতার নিচে আসছে বিএনপি-জামায়াত বিরোধী ইসলামী দলগুলো। তাদের উদ্দেশ্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আনা। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ১৫ দল ও সংগঠনের সমন্বয়ে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্স। আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন দলের একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও সংগঠন এই জোটে যোগ দেয়ার আভাস মিলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নতুন এই রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম পৃথকভাবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন এই জোটকে আসন ছাড় দিতে পারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
গত শনিবার ১৫টি সমমনা রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি নিয়ে গঠিত হয়েছে নতুন জোট ‘ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্স (আইডিএ)’। এ জোটের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ও তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি।
নতুন জোটের ১৪টি দল হচ্ছে, মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, নুরুল ইসলাম খানের গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট, এম এ রশিদ প্রধানের বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, হাসরত খান ভাসানীর বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ (ভাসানী গ্রুপ), রুমা আলীর বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, মাওলানা শাহ মোস্তাকিম বিল্লাহ ছিদ্দিকীর বাংলাদেশ জমিয়তে দারুসসুন্নাহ, মাওলানা হারিছুল হকের বাংলাদেশ ইসলামী ডেমোক্রেটিক ফোরাম, হাকিম গোলাম মোস্তফার বাংলাদেশ গণ-কাফেলা, মুফতি ফখরুল ইসলামের বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলন, কাজী মাসুদ আহমদের বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি, রেজাউল করিম চৌধুরীর বাংলাদেশ ইসলামী পেশাজীবী পরিষদ, মুফতি সৈয়দ মাহাদী হাসান বুলবুলের ইসলামী ইউনিয়ন বাংলাদেশ, খাজা মহিবুল্লাহ শান্তিপুরীর বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন ও আব্দুল্লাহ জিয়ার ন্যাশনাল লেবার পার্টি। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে রয়েছেন এম এ আউয়াল এমপি।
আইডিএ মুখপাত্র এম এ আউয়াল বলেন, এই জোট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় গণসমাবেশ করে জোটের কর্মসূচী দেশবাসীকে জানাব। এর আগেই দেশপ্রেমিক দল ও বিখ্যাত আলেম এবং ইসলামী চিন্তাবিদরা এই জোটে যোগদান করবেন। জোটে অন্তর্ভুক্ত অনিবন্ধন দল প্রসঙ্গে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, জোটের অন্তর্ভুক্ত দলগুলো এরই মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। নির্বাচনের আগে আশা করি নিবন্ধন পাব।
নতুন এই রাজনৈতিক জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুন্নিদের ধর্মীয় জোট আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও সহিংসতা, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদের বিপক্ষে। এই জোটের একটি অংশ ইতোমধ্যে এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। অপর একটি অংশের সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে আইডিএ’র সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও এরশাদের সঙ্গে থাকা জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে এরশাদের জোটের একটি অংশ আইডিএ সঙ্গে যোগ দিতে পারে।
জোট শরিক নেতারা বলছেন, জাকের পার্টির তাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা আছে। যদি সরাসরি ১৪ দলীয় জোটে জাকের পার্টি না যায় তবে আইডিএ-তে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইতোমধ্যে জাকের পার্টির একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফর করেছে। জাকের পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে ৪ সেপ্টেম্বর এ বৈঠক হয়েছে।
মুজাদ্দেদীর প্রেস সেক্রেটারি শামীম হায়দার জানান, দিল্লীর সাউথ ব্লকে অনুষ্ঠিত প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার এ বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্সের (আইসিসিআর) বিশেষ আমন্ত্রণে ভারত যান দলটির নেতারা। দেশে ফেরার পর জাকের পার্টি ১৪ দলে যোগ দেবে কিনা এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে আওয়ামী লীগের একটি অংশ চায় ইসলামী দল হিসেবে জাকের পার্টি নতুন রাজনৈতিক জোট আইডিএ-সঙ্গে থাক। ফলে বিকল্প রাজনৈতিক জোটের শক্তি আরও বাড়বে। একই আদর্শে বিশ্বাসী অন্য দলগুলোর নতুন জোটে শরিক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে, তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আওয়াল এমপি জনকণ্ঠকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামী ভাবধারায় বিশ্বাসী বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সমন্বয়ে নতুন এই জোটের যাত্রা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ইসলামী ভাবধারায় বিশ্বাস ও মুক্তিযুদ্ধে চেতনার ঐক্য গড়ে তুলতেই এই জোট গঠনের কথা উল্লেখ করে আওয়াল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে এই জোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। তিনি বলেন, একই মতাদর্শে বিশ্বাসী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আশাকরি আগামী এক মাসের মধ্যে আরও একাধিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি আমাদের জোটের সঙ্গে যুক্ত হবে।
৬ অক্টোবর সমাবেশ : আগামী ৬ অক্টোবর ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৫ দলীয় জোট ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্স (আইডিএ)। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কলাবাগানে জোটের সম্পাদকম-লীর বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সমাবেশের আগে ২৯ সেপ্টেম্বর জোটের শরিক দলগুলোর প্রতিনিধি সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোঃ নাসিম।