জগন্নাথপুরে মিলারদের কাছ থেকে চাল কেনা নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

17

মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুরে কৃষকদের কাছ থেকে সরকার ধান কেনার কথা থাকলেও এখনো শুরু হয়নি। তবে মিলারদের কাছ থেকে চাল কেনা শুরু করেছে সরকার। এতে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মিলারদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, বিগত বছর হাওর ডুবিতে ফসল হানির ঘটনায় জগন্নাথপুরে কোন ধান পাননি কৃষকরা। এমতাবস্থায় সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করলেও মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করেছে। জগন্নাথপুর উপজেলায় মোট ২২ টি অটোমিল থাকলেও গত বছর মাত্র ৫টি মিল সরকারকে চাল দিয়েছে। বাকিরা লস হওয়ার ভয়ে সরকারকে চাল দেয়নি। এর মধ্যে ফয়জুল্লাহ মিয়া, ছমির উদ্দিন সুমন, রেজাউল করিম রিজু, ওয়াহিদ খান ও নানু মিয়া নামের ৫ জন মিলের মালিক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমদানী করে লস দিয়ে সরকারকে মোট ৯৬০ টন চাল দেন। এ সময় যারা সরকারকে চাল দেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল। অথচ এবার সেই মিলারদের উল্টো পুরস্কৃত করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে যায়, এবার জগন্নাথপুরে বাম্পার বোরো ধান হয়েছে। কৃষকরা উচ্চ মূল্যে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করার জন্য অপেক্ষা করছেন। এখন পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করেনি সরকার। যে কারণে কৃষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তবে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু না হলেও ১০ মে বৃহস্পতিবার থেকে মিলারদের কাছ থেকে চাল কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিগত বছর ফসল হানি হলেও সরকার জগন্নাথপুর থেকে ৯৬০ টন চাল ক্রয় করেছে। অথচ এবার জগন্নাথপুরে বাম্পার ধান হলেও মিলারদের কাছ থেকে মাত্র ৫৪০ টন চাল ক্রয় করছে।
১০ মে বৃহস্পতিবার সরজমিনে জগন্নাথপুর সদর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি নতুন আতপ চাল ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে। অথচ সরকার মিলারদের কাছ থেকে প্রতি কেজি আতপ চাল ৩৭ টাকা দরে ক্রয় করছে। প্রতি কেজিতে সরকার ৫ থেকে ৭ টাকা অতিরিক্ত মূল্যে দিয়ে মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করছে। এবার সরকারের কাছে চাল বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় উপজেলার সকল মিলারগণ চাল বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অথচ গত বছর যেসব মিলারগণ লস দিয়ে সরকারকে চাল দিয়েছিলেন তারা অনেকে এবার বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ফয়জুল্লাহ মিয়া, ছমির উদ্দিন সুমন ও নানু মিয়া সহ ক্ষতিগ্রস্ত মিল মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত বছর জগন্নাথপুরে কোন ধান-চাল ছিল না। এরপরও সরকারকে লস দিয়ে ৯৬০ টন চাল আমরা মাত্র ৫ জন মিলার দিয়েছিলাম। কথা ছিল যারা চাল দেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এবার আমাদেরকে প্রণোদনা দেয়া হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক আবেদন-নিবেদন করেও কোন প্রণোদনা পাইনি। এদিকে-এবার জগন্নাথপুরে বাম্পার ধান হলেও সরকার মাত্র ৫৪০ টন চাল কিনছে। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করে ক্ষতিগস্ত মিল মালিক নানু মিয়া বলেন, গত বছর যারা লস হওয়ার ভয়ে সরকারকে চাল দেয়নি, অথচ এবার তাদেরকেই পুরস্কৃত করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে সরকার ২৯ টন করে চাল কিনছে। আর আমার কাছ থেকে মাত্র ১৮ টন চাল কেনা হচ্ছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মিলারদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ধীরাজ নন্দী চৌধুরী বলেন, এবার গত বছরের তুলনায় মিলারদের কাছ থেকে চাল কম নেয়া হচ্ছে। এটি সরকারি সিদ্ধান্ত। তবে গত বছর সরকারকে যেসব মিলারগণ চাল দিয়েছিলেন, তাদেরকে প্রণোদনা দেয়ার জন্য আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও দেয়া হয়নি। তাই গত বছরের ক্ষতিগ্রস্ত মিলারদের আলাদাভাবে কোন সুবিধা দিতে না পারায় খুবই খারাপ লাগছে। তাদের প্রশ্নবানে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছি।