মাসুদ আল রাজী শাবি থেকে :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের পর এবার প্রথম ছাত্রী হলে চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার দিবাগত রাতে হলের রান্নাঘরের গ্রিল কেটে কয়েকজন চোর ভেতরে প্রবেশ করে। পরে তারা ছাত্রীদের মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এদিকে ছাত্রী হলের মতো সংরক্ষিত ও ¯পর্শকাতর এলাকায় প্রবেশ করে একের পর এক চুরির ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বৃহ¯পতিবার ভোরে ১৩১ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্রী ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহের ওয়াশরুমে গেলে চোর ওয়াশ রুমের দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে দেয়। পরে ওই ছাত্রীর কক্ষ থেকে মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেয়। একই কক্ষে অপর আবাসিক ছাত্রী ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নীলা দাস ঘুমন্ত অবস্থায় থাকলে মশারির ভেতর হাত ঢুকিয়ে মোবাইল ফোন নিতে গেলে নীলার ঘুম ভাঙ্গে। এ সময় নীলার চিৎকারে চোরেরা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
প্রথম ছাত্রী হলের আবাসিক ছাত্রী লিপি দেব জানান, আনুমানিক রাত ৩টা থেকে চোরেরা হলের ভেতরে প্রবেশ করে। ১৩১ নম্বর কক্ষে চুরির আগে ১২৯ নম্বর কক্ষের জানালা খুলে, ১৩০ নম্বর কক্ষের জানালার গ্রিল কেটেও কিছু নিতে পারেনি। হলের নিচতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত ঘুরাঘুরি করে বেশ সুবিধা করতে পারেনি তারা। লিপি আরও বলেন, কিছুদিন আগে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলে চোর প্রবেশ করে ল্যাপটপসহ বেশ কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এখন প্রথম ছাত্রী হলের ভেতরে চোর প্রবেশ করে চুরি করলো। আমরা আবাসিক ছাত্রীরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। এ ঘটনা অন্য দিকেও মোড় নিতে পারতো।
খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আমেনা পারভীন হলে আসেন। পরে সকাল ১০টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার, প্রক্টর জহির উদ্দিন আহমেদ সহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা হল পরিদর্শন করেন এবং ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় ছাত্রীরা দুইটি টিলায় পুলিশ চেকপোস্ট স্থাপন, সিকিউরিটি অফিসারের পদত্যাগ ও দক্ষ অফিসার নিয়োগ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্যপ্ত নাইট গার্ড নিয়োগ, চোরদের চক্র শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা, কাটাতারের বেড়ার উচ্চতা বৃদ্ধি করা, কার্যকর সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বৃদ্ধি করা, জরুরি কল বা বেল সিস্টেম চালু করার দাবি জানান ছাত্রীরা।
এ ব্যাপারে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আমিনা পারভীন বলেন, খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে আমি হলে আসি। ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহ¯পতিবার থেকে পুলিশ সদস্যরা হল নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া চোরদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলে চুরির ঘটনার পর উভয় হলে অতিরিক্ত ১৫টি অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা, ফ্লাড লাইট, কাটা তারের বেড়া সংযোজন করা হয়। আজ থেকে অতিরিক্ত দু জন সিকিউরিটি গার্ড হলের চতুর্দিকে টহল দিবে, পুলিশের টহল বাড়বে, নতুন কাটা তারের বেড়া স্থাপন করা হবে। অপরাধীদের গ্রেফতার করতে আইনের আওতায় আনতে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন পূর্বে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরি হলে চুরি হওয়ার পর প্রশাসন উপযুক্ত ব্যাবস্থা নেওয়ার পরেও কোনভাবেই কমানো যাচ্ছে না চোরের উপদ্রব।